বহুল প্রতীক্ষিত চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ নির্বাচন আজ। সকাল ৯টা থেকে বিকাল ২টা পর্যন্ত ইভিএমে ভোটগ্রহণ চলবে ১৫ উপজেলায় ১৫ কেন্দ্রে। চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের এটিএম পেয়ারুল ইসলামের একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে আছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী নারায়ন রক্ষিত। আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী এ টি এম পেয়ারুল ইসলাম আজাদীকে বলেন, আমি আওয়ামী লীগের প্রার্থী। গত ১৪ বছরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চট্টগ্রামে যেভাবে উন্নয়ন করেছেন তাতে আমার বিশ্বাস ভোটাররা প্রধানমন্ত্রীকে নিরাশ করবেন না। দলের প্রার্থী হিসেবে আমাকে শতভাগ ভোট দিবেন। নির্বাচনে কাস্টিং ভোটের ৯৯ ভাগ ভোট পাবো বলে আশা করছি। জয়ের ব্যাপারে আমি শতভাগ আশাবাদী।
১৫ উপজেলায় ১৫টি সাধারণ সদস্য পদে ৪৬ জন ও সংরক্ষিত ওয়ার্ডের ৫ পদে ২২ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। মোট ২৭৩০ জন ভোটার ১৫ উপজেলায় তাদের ভোটাধিকারের মাধ্যমে নির্বাচিত করবেন জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও ১৫ জন সাধারণ এবং ৫ জন সংরক্ষিত ওয়ার্ডের সদস্য। চট্টগ্রাম আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ও জেলা পরিষদ নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মুহাম্মদ হাসানুজ্জামান জানান, সুষ্ঠুভাবে ভোটগ্রহণের জন্য সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। প্রতিটি কেন্দ্রে একাধিক ইভিএম প্রস্তুত রাখা হয়েছে। কেন্দ্রে কেন্দ্রে পর্যাপ্ত আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দায়িত্ব পালন করেছেন।
ম্যাজিস্ট্রেট ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী : চট্টগ্রামে আজকের জেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রতি ভোটকেন্দ্রে ৭ জন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দায়িত্ব পালন করেছেন। আছেন র্যাবের স্ট্রাইকিং ফোর্স। এছাড়া ৪ জন বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট ও ১ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্বে আছেন। উপজেলা সদরে অবস্থানে থাকবেন বিজিবি। উপকূলীয় এলাকা সন্দ্বীপে আছেন কোস্ট গার্ড। নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তায় পুলিশের অস্ত্রসহ মোট তিনজন, আনসারের অস্ত্রসহ দুজন ও অঙ্গীভূত আনসারের দুজন; মোট সাতজন দায়িত্ব পালন করছেন। নির্বাচন কমিশনের (ইসি) নির্বাচন ব্যবস্থাপনা শাখার আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মোতায়েনের পরিকল্পনা থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
জেলা পরিষদ নির্বাচনে মোট ভোটার সংখ্যা ২৭৩০ জন। এর মধ্যে প্রার্থীদের জয়ের ক্ষেত্রে মূল ফ্যাক্টর হয়ে উঠেছেন চট্টগ্রামের ১৯১ ইউনিয়ন পরিষদের ২৪৮৩ জন চেয়ারম্যান-মেম্বার। এর মধ্যে ১৯১ জন ইউপি চেয়ারম্যান ও ২২৯২ জন ইউপি সাধারণ ও সংরক্ষিত ওয়ার্ডের মেম্বার রয়েছেন।
চট্টগ্রামের ১৫ উপজেলায় সুষ্ঠুভাবে ভোটগ্রহণের জন্য সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম জেলার সিনিয়র নির্বাচন কর্মকর্তা মোহা. জাহাঙ্গীর হোসেন। তিনি জানান, ভোট কেন্দ্রের গোপনীয়তা রক্ষায় প্রতি কেন্দ্রে তিনটি করে সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানো হয়েছে।
১৫ উপজেলায় মোট ১১০ জন ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা দায়িত্ব পালন করেছেন। ভোটগ্রহণের জন্য প্রতিটি উপজেলায় ১ জন প্রিসাইডিং কর্মকর্তা, ২ জন সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা ও ৪ জন পোলিং কর্মকর্তা দায়িত্বে রয়েছেন।
জেলা পরিষদ আইন অনুযায়ী, জেলা পরিষদ নির্বাচনে শুধুমাত্র ভোট দিতে পারবেন চট্টগ্রাম সিটি মেয়র, সাধারণ ওয়ার্ড ও সংরক্ষিত ওয়ার্ডের কাউন্সিলর, ১৫ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান-ভাইস চেয়ারম্যান, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান, ১৫ উপজেলার সকল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, সাধারণ ওয়ার্ডের মেম্বার, সংরক্ষিত ওয়ার্ডের মহিলা মেম্বার ও সকল পৌরসভার মেয়র, সাধারণ কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত ওয়ার্ডের মহিলা কাউন্সিলরগণ। ২৭৩০ জন ভোটারের মধ্যে পুরুষ ভোটার ২০৯৩ ও মহিলা ভোটার সংখ্যা ৬৩৭ জন।
ওয়ার্ড সংখ্যা এবং উপজেলা পর্যায়ে ভোটার সংখ্যা : ১ নং ওয়ার্ড : মীরসরাই উপজেলায় মোট ভোটার সংখ্যা ২৩৭ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১৮২ ও মহিলা ভোটার ৫৫ জন। ২ নং ওয়ার্ড : সীতাকুণ্ড উপজেলায় মোট ভোটার সংখ্যা ১৪৪। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১১১ ও মহিলা ভোটার ৩৩ জন। ৩ নং ওয়ার্ড : সন্দ্বীপ উপজেলায় মোট ভোটার সংখ্যা ২০৭ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১৫৯ ও মহিলা ভোটার ৪৮ জন। ৪ নং ওয়ার্ড : ফটিকছড়ি উপজেলায় মোট ভোটার সংখ্যা ২৬৩। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ২০২ ও মহিলা ভোটার ৬১ জন। ৫ নং ওয়ার্ড : হাটহাজারী উপজেলায় মোট ভোটার সংখ্যা ১৯২। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১৪৭ ও মহিলা ভোটার ৪৫ জন। ৬ নং ওয়ার্ড : রাউজান উপজেলায় মোট ভোটার সংখ্যা ১৯৭। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১৫১ ও মহিলা ভোটার ৪৬ জন। ৭ নং ওয়ার্ড : রাঙ্গুনিয়া উপজেলায় মোট ভোটার সংখ্যা ২১০। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১৬১ ও মহিলা ভোটার ৪৯ জন। ৮ নং ওয়ার্ড : বোয়ালখালী উপজেলায় মোট ভোটার সংখ্যা ১২৭। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৯৭ ও মহিলা ভোটার ৩০ জন। ৯ নং ওয়ার্ড : কর্ণফুলী উপজেলায় মোট ভোটার সংখ্যা ৯২। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৭০ ও মহিলা ভোটার ২২ জন। ১০ নং ওয়ার্ড : পটিয়া উপজেলায় মোট ভোটার সংখ্যা ২৩৬। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১৮১ ও মহিলা ভোটার ৫৫ জন। ১১ নং ওয়ার্ড : চন্দনাইশ উপজেলায় মোট ভোটার সংখ্যা ১১৮। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৯০ ও মহিলা ভোটার ২৮ জন। ১২ নং ওয়ার্ড : আনোয়ারা উপজেলায় মোট ভোটার সংখ্যা ১৫৪। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১১৮ ও মহিলা ভোটার ৩৬ জন। ১৩ নং ওয়ার্ড : বাঁশখালী উপজেলায় মোট ভোটার সংখ্যা ১৯৭। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১৫১ ও মহিলা ভোটার ৪৬ জন। ১৪ নং ওয়ার্ড : সাতকানিয়া উপজেলায় মোট ভোটার সংখ্যা ২৩৬। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১৮১ ও মহিলা ভোটার ৫৫ জন। ১৫ নং ওয়ার্ড : লোহাগাড়া উপজেলায় মোট ভোটার সংখ্যা ১২০। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৯২ ও মহিলা ভোটার ২৮ জন।
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের কোনো ওয়ার্ডের কাউন্সিলর কোনো উপজেলায় ভোট দেবেন : চট্টগ্রাম সিটি মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরী ভোট দেবেন বোয়ালখালী উপজেলায়। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ২৩ থেকে ২৬ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলররা সীতাকুণ্ড উপজেলার ভোট কেন্দ্রে ভোট প্রদান করবেন। ১, ২, ৩, ৭ ও ৮ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলররা ভোট প্রদান করবেন হাটহাজারী উপজেলার ভোট কেন্দ্রে। ৪ থেকে ৬ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলররা বোয়ালখালী উপজেলার শহর অংশের ভোট কেন্দ্রে ভোট প্রদান করবেন। ১৪ থেকে ২২ নং ওয়ার্ড ও ২৮ থেকে ৩৬ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলররা ভোট প্রদান করবেন কর্ণফুলী উপজেলার শহর অংশের ভোট কেন্দ্রে। এছাড়া ২৭ নং ওয়ার্ড ও ৩৭ থেকে ৪১ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলররা আনোয়ারা উপজেলার ভোট কেন্দ্রে ভোট প্রদান করবেন।
বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত সাধারণ ওয়ার্ডের ৩ সদস্য : চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ নির্বাচনে ৩ উপজেলা থেকে সাধারণ ওয়ার্ডের ৩ জন সদস্য বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। নির্বাচিতরা হলেন চট্টগ্রাম-১ (মীরসরাই) ওয়ার্ডে প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তী, চট্টগ্রাম-৬ (রাউজান) ওয়ার্ডে কাজী আবদুল ওহার, চট্টগ্রাম-৭ (রাঙ্গুনিয়া) ওয়ার্ডে আবুল কাশেম চিশতী। এই তিন ওয়ার্ডে সাধারণ সদস্য পদে ভোট হবে না। চেয়ারম্যান এবং সংরক্ষিত ওয়ার্ডে ভোট হবে।