পতেঙ্গা কন্টেনার টার্মিনালের (পিসিটি) জন্য সোজা করা বিমানবন্দর সড়ক ও ফ্লাইওভার শীঘ্রই চালু করা হবে। এটি চালু হলে পিসিটির জেটিসহ অবকাঠামোগত নির্মাণে গতি আসবে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আগামী জুনের মধ্যে আংশিকভাবে হলেও পিসিটি চালু করার চেষ্টা চলছে। এছাড়া রুবী সিমেন্টের পাশে গড়ে তোলা ১৬ একর আয়তনের কন্টেনার ইয়ার্ডটিকে পিসিটির জন্য ডেটিকেটেড করা হচ্ছে। নির্মাণ করা হচ্ছে রেললাইন।
চট্টগ্রাম বন্দরের শীর্ষ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের বিপুল চাহিদার প্রেক্ষিতে চট্টগ্রাম বন্দরের বাড়তি কন্টেনারের চাপ সামাল দিতে পতেঙ্গা কন্টেনার টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। পতেঙ্গায় বিমানবাহিনীর জহুরুল হক ঘাঁটির পাশ থেকে বোট ক্লাবের সন্নিকট পর্যন্ত রাস্তার বাঁকে অনুৎপাদনশীল খাতে পড়ে থাকা বিপুল পরিমাণ ভূমিতে টার্মিনালটি নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। রাস্তাটি সোজা করে বন্দর কর্তৃপক্ষ নদীর পাড়ে ৩২ একর জমি পায়।
বন্দর কর্তৃপক্ষের মালিকানাধীন ভূমিতে সরকারি-বেসরকারি কয়েকটি অফিস ছিল। সেগুলো সরিয়ে রাস্তাটি সোজা করে ৩২ একর ভূমিতে কন্টেনার টার্মিনাল গড়ে তোলার সুযোগ তৈরি হয়। ১৮৬৮ কোটি টাকা ব্যয়ে নিজস্ব অর্থায়নে বন্দর কর্তৃপক্ষ প্রকল্পটির কার্যক্রম শুরু করে। পতেঙ্গা কন্টেনার টার্মিনালে ৬শ মিটার লম্বা জেটি নির্মাণ করা হচ্ছে। এতে একই সাথে তিনটি কন্টেনারবাহী জাহাজ বার্থিং করা সম্ভব হবে। পাশাপাশি তেল খালাসের জন্য ২২০ মিটার লম্বা একটি ডলফিন জেটিও থাকবে। ৩২ একর জমিতে তৈরি হচ্ছে ১ লাখ ১২ হাজার বর্গমিটার আরসিসি পেভমেন্টের অভ্যন্তরীণ ইয়ার্ড ও রাস্তা। একই সাথে ২ হাজার ১২৮ বর্গমিটারের কন্টেনার ফ্রেইট স্টেশন শেড, প্রায় বিশ ফুট উচ্চতার ১৭৫০ মিটার কাস্টমস বন্ডেড এরিয়া, ৫৫৮০ বর্গমিটারের বন্দর কর্তৃপক্ষের অফিস, ১২০০ বর্গমিটারের যান্ত্রিক ও মেরামত কারখানা, ২৫০০ মিটার রেলওয়ে ট্রেক নির্মাণ, ৪২০ মিটার ফ্লাইওভার নির্মাণ, ৪ লেন বিশিষ্ট শূন্য দশমিক ৭৫ কিলোমিটার এবং ৬ লেন বিশিষ্ট ১ কিলোমিটার রাস্তা নির্মাণ করা হচ্ছে। এছাড়া বন্দরের সিকিউরিটি পোস্ট, গেস্টহাউস, ফুয়েল স্টেশন এবং লেবার শেডও নির্মাণ করা হবে।
গতকাল সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, দ্রুত গতিতে জেটির নির্মাণ কাজ চলছে। নদীর উপর জেটির বেইজ তৈরি হয়ে গেছে। এখন উপরের অংশের কার্যক্রম পরিচালিত হবে। প্রায় আধা কিলোমিটার ফ্লাইওভার এবং দেড় কিলোমিটার রাস্তার কাজও দ্রুত চলছে। চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। আগামী ১০ দিনের মধ্যে চার এবং ছয় লেনের রাস্তা ও ফ্লাইওভার চালু করা হবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। বিমানবাহিনীর জহুরুল হক ঘাঁটি থেকে বোট ক্লাব পর্যন্ত নবনির্মিত রাস্তা এবং ফ্লাইওভার দিয়ে গাড়ি চলাচল শুরু হলে ৩২ একর জায়গার পুরোটায় কোনো বাধা থাকবে না। বর্তমানে এই অংশের উপর দিয়ে বিমানবন্দর সড়কের গাড়ি চলাচল করছে। শুধু বিমানবন্দরগামী প্রাইভেট গাড়ি নয়, কন্টেনার ডিপোর অনেক প্রাইমমুভারও চলাচল করে। গাড়ি চলাচল পিসিটির ইয়ার্ড নির্মাণ কার্যক্রমে সংকট তৈরি করছে। গাড়ি চলাচল বন্ধ হয়ে গেলে পুরোদমে ইয়ার্ড নির্মাণসহ বিভিন্ন অবকাঠামো গড়ে তোলার কার্যক্রম শুরু হবে বলে প্রকল্প পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার মিজানুর রহমান সরকার আজাদীকে জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, শুরু থেকে বেশ কিছু সমস্যা মোকাবেলা করতে হয়েছে। জায়গাটির উপর পুরনো কিছু স্থাপনা ছিল। এসব সরাতে সময় দিতে হয়েছে। পরবর্তীতে কাজ শুরু হলেও করোনা মহামারিতে কিছু করার ছিল না। এখানে প্রকৌশলীসহ চীনের অনেক লোক শুরু থেকে কর্মরত ছিলেন। এদের অনেকেই দেশে গিয়ে আটকা পড়েন। এতেও কাজের ব্যাঘাত হয়। ফলে নির্ধারিত সময়ে কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব হয়নি। ইতোমধ্যে প্রকল্পের মেয়াদ এক বছর বাড়ানো হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, আমরা দ্রুত কাজ করছি। আগামী দিন দশেকের মধ্যে নতুন রাস্তা এবং ফ্লাইওভার চালু করে দেব। এতে করে বিমানবন্দরগামী সব গাড়ি নতুন রাস্তায় চলে যাবে। প্রকল্প এলাকায় অন্যান্য কার্যক্রম শুরু করব। আগামী মাস কয়েকের মধ্যে প্রকল্পটির একটি অংশ দৃশ্যমান হবে। ২০২১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় আছে। তবে আগামী জুনে আংশিকভাবে হলেও পিসিটি চালু করার লক্ষ্য নিয়ে আমরা কাজ করছি।
ইঞ্জিনিয়ার মিজানুর রহমান সরকার বলেন, রুবী সিমেন্টের পাশে বন্দর কর্তৃপক্ষের ১৬ একর জায়গায় নির্মিত একটি কন্টেনার ইয়ার্ড রয়েছে। পিসিটি এবং ওই ইয়ার্ডের মধ্যে রেললাইন স্থাপনের কাজ চলছে। ওই ইয়ার্ডটিকে পিসিটির জন্য ডেডিকেটেড করা হচ্ছে। এতে করে ৩২ একর ভূমিতে গড়ে তোলা পিসিটির আক্ষরিক সুবিধা ৪৮ একরে উন্নীত হবে।