মাসুদ কয়েকদিন ধরে তার বাবাকে বলছে একটা স্মার্টফোন কিনে দিতে। কিন্তু তার বাবা বলেছেন,এত ছোট বয়সে স্মার্টফোন ব্যবহার করা যাবেনা। তোমার ভবিষ্যৎ খারাপ হবে। মাসুদ তা বোঝেনা। সে ভাবে, কেন; তার বন্ধু জারিফ,ফারাদ,আহনাফ এবং আরও অনেকের কাছে নিজের ল্যাপটপ, ট্যাব,স্মার্টফোন আছে। তারা কত গেমস খেলে সেখানে। তাই বলে তাদের ভবিষ্যৎ খারাপ হয়েছে? আর ক্লাস নাইনে পড়ে কেউ ছোট হয়?
বাবা বললেন,নিজের জীবনের রঙ খুঁজতে শেখো।
বাবা চিত্রশিল্পী,তাই এমন মোটা মোটা কথা বলেন। মাসুদ জীবনের রঙ মানে কী বোঝেনা। সে কিছু টাকা জমিয়েছিল। এখন ভাবছে, সেই টাকাগুলো আর ঈদের সালামি দিয়ে নিজেই একটা স্মার্টফোন কিনে ফেলবে।
একদিন সে স্কুলে যাবার সময় রাস্তার পাশের বস্তিতে দেখতে পেল,একটা ছোট মেয়ে ছেঁড়া জামা পরে কাঁদছে। আর বলছে,”লাল জামা ন দিলে ভাত ন খাইয়ুম।“
পাশে একটা মহিলা দাঁড়িয়ে আছে। সম্ভবত মেয়েটার মা। সে বলছে,”চুপ কর। পেটে ভাত জোটে না,মাইয়া কয় লাল জামা কিনি দিতে। শখ দেখো মাইয়ার। ভাত খাইতে আয়।“
শুনে মাসুদের মনটা খারাপ হয়ে গেল। ক্লাসে তার মন বসল না। কিছুক্ষণ পরপর মেয়েটার কথা মনে পড়তে লাগলো। সে বাসায় ফিরে তার মাকে বলল,”মা, আজকে স্কুলে যাবার সময় রাস্তার পাশের বস্তিতে একটা মেয়েকে লাল জামার জন্য কাঁদতে দেখেছি। তাদের টাকা নেই বলে তার মা তাকে লাল জামা কিনে দিতে পারেনা। লাল জামার কথা বললে মেয়েটাকে বকাঝকা করে। আমি আমার জমানো টাকা দিয়ে মেয়েটাকে একটা লাল জামা কিনে দেই?”
মা বললেন,”আমার ছেলেটা বড় হয়ে গেছে। আচ্ছা ঠিক আছে,কিনে দিস।“
মাসুদ খুশি হয়ে মাকে জড়িয়ে ধরল। রাতে সে কাপড় কিনে আনল। পরদিন মাসুদ স্কুলে যাবার সময় মেয়েটাকে কাপড়ের প্যাকেটটা দিল। মেয়েটা ভয়ে ভয়ে প্যাকেটটা নিয়েছিলো। মাসুদ হাঁটতে হাঁটতে ভাবতে লাগল,মেয়েটা প্যাকেটটা খুলে কতই না খুশি হবে। একটা স্মার্টফোন না কিনে একটা গরিব মেয়েকে খুশি করল,তা–ই বা কম কী?
সে যেন তার জীবনের রঙ খুঁজে পেয়েছে।









