জাপানের কয়েকশ কোটি ডলারের বিনিয়োগের হাতছানি

মীরসরাই ইকোনমিক জোনে হচ্ছে টেক্সটাইল পল্লী

আজাদী প্রতিবেদন | বুধবার , ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ at ৬:১৪ পূর্বাহ্ণ

দেশের বৃহত্তম অর্থনৈতিক অঞ্চল মীরসরাই ইকোনমিক জোনে টেক্সটাইল পল্লী গড়ে তোলা হচ্ছে। গার্মেন্টস খাতের প্রয়োজন মেটাতে ক্রমবিকাশমান টেক্সটাইল খাতকে পৃষ্ঠপোষকতা দেয়ার লক্ষ্যে বিশেষ এই পল্লী।
এদিকে বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরে নানা খাতে জাপানের কয়েকশ কোটি ডলারের বিনিয়োগ আসার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। চীন ও ভিয়েতনামের পরিবর্তে জাপানি বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশের দিকে ঝুঁকছে। জাপান সরকারও তাদের ব্যবসায়ীদের চীন-ভিয়েতনাম থেকে বের হয়ে বাংলাদেশের দিকে ঝোঁকার ব্যাপারে উৎসাহ দিচ্ছে। বিশেষ করে শ্রমিকের চড়া মূল্যের পাশাপাশি করোনা মহামারীতে চীনে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির পর বাংলাদেশের দিকে বিনিয়োগকারীদের নজর পড়েছে। এক্ষেত্রে পছন্দের তালিকায় উপরের দিকে রয়েছে মীরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চল। সবকিছু ঠিক থাকলে অচিরেই জাপানের কয়েকশ কোটি ডলারের বিনিয়োগ বাংলাদেশে আসবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) শীর্ষ একজন কর্মকর্তা জানান, দেশের সর্ববৃহৎ অর্থনৈতিক অঞ্চল হিসেবে মীরসরাই, সীতাকুণ্ড ও ফেনীর উপকূলীয় এলাকার প্রায় ৩০ হাজার একর ভূমিতে বহুমুখী কার্যক্রম চলছে। বঙ্গবন্ধু শিল্পনগর নামের এই ইকোনমিক জোন উন্নয়নে কাজ করছে বেজা। বেজার কাছ থেকে বিভিন্ন শিল্প গ্রুপ শত শত একর ভূমি বরাদ্দ নিয়েছে। দেশি-বিদেশি শীর্ষস্থানীয় বহু প্রতিষ্ঠান এখানে জায়গা নিয়ে শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার কার্যক্রম শুরু করেছে। এরই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি বিকেএমইএ এই জোনে আলাদা একটি টেক্সটাইল পল্লী করার উদ্যোগ নিয়েছে। বিকেএমইএর একটি প্রতিনিধিদল বেজার চেয়ারম্যান পবন চৌধুরীর সাথে সাক্ষাৎ করে তাদের আগ্রহের কথা জানিয়েছে। বিকেএমইএ অন্তত ৫শ একর ভূমিতে পল্লী গড়তে চায়। ইতোমধ্যে বিজিএমইএ পাঁচশ একর জমি বরাদ্দ নিয়েছে। যেখানে গার্মেন্টস কারখানা গড়ে উঠবে। গার্মেন্টস সেক্টরের পাশাপাশি টেক্সটাইল খাতেও যদি বিনিয়োগ হয় তাহলে উভয় খাতই উপকৃত হবে। বিশেষ করে কাঁচামাল পরিবহনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, জাপানের বেশ কয়েকটি কোম্পানি ইতোমধ্যে মীরসরাই ইকোনমিক জোনে জমি বরাদ্দ নিয়েছে। তারা কয়েকশ কোটি ডলার বিনিয়োগ করতে আগ্রহী। জাপানের বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের জন্য ওই দেশের সরকার উৎসাহী করছে উল্লেখ করে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, করোনাকালে বড় ক্ষয়ক্ষতি না হওয়া বাংলাদেশের জন্য আশীর্বাদ হিসেবে বিবেচিত হতে শুরু করেছে। জাপানও একই দৃষ্টিতে দেখছে বাংলাদেশকে।
জাপানের শত শত বিনিয়োগকারী রয়েছেন চীন ও ভিয়েতনামে। চীন ও ভিয়েতনামে শুধু করোনা নয়, শ্রমিকের বেতন-ভাতাও বেশি। চড়া দামের শ্রম কিনতে গিয়ে উৎপাদন খরচ বেড়ে যায়। এতে তাদের মুনাফা কমার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতায় টিকতেও কষ্ট হচ্ছে। অথচ বাংলাদেশে এখনো সস্তায় শ্রম পাওয়া যায়। বিষয়গুলো বিবেচনা করে চীন ও ভিয়েতনামে বিনিয়োগ করা জাপানি ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশের দিকে চলে আসার জন্য উৎসাহ দেয়া হচ্ছে। জাপানের বিনিয়োগকারীদের জন্য নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলায় অন্তত এক হাজার একর জায়গায় একটি বিশেষ শিল্পনগর গড়ার প্রক্রিয়া চলছে; যাতে জাপানের দুই হাজার কোটি ডলারের বিনিয়োগ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
বেজার শীর্ষ একজন কর্মকর্তা জানান, জাপানের হাজার হাজার কোটি ডলারের বিনিয়োগ রয়েছে চীন, ভিয়েতনাম, তাইওয়ানসহ বিভিন্ন দেশে। এসব বিনিয়োগের একটি অংশ যদি বাংলাদেশে আনা যায় তাহলে অর্থনীতিতে গতি বাড়বে। জাপানের টেক্সটাইল শিল্প সমৃদ্ধ মন্তব্য করে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ খাতেও জাপানের বিনিয়োগের সম্ভাবনা রয়েছে।
বেজা চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী বলেন, মীরসরাই ইকোনমিক জোনকে সমৃদ্ধ করতে যা যা করা প্রয়োজন তার সবই সরকারের পক্ষ থেকে করা হচ্ছে। মীরসরাই ইকোনমিক জোনে প্রায় প্রতিদিনই বিনিয়োগ প্রস্তাব আসছে বলে জানান তিনি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ১৪৪ ধারা ভাঙার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়
পরবর্তী নিবন্ধসাতকানিয়ায় আবাদি জমি থেকে মাটি কেটে ইট ভাটায় বিক্রি