জাতীয় পার্টি ভাঙার পরিস্থিতি দেখছেন না জিএম কাদের

| রবিবার , ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ at ৭:২৮ পূর্বাহ্ণ

দলের প্রতিষ্ঠাতা হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের নাম দিয়ে ও তার আদর্শ ধারণ করে আরও ১০টি দল কেউ করতে পারে তবে জাতীয় পার্টিকে ভেঙে আরেকটি দল করার মতো পরিস্থিতি দেখছেন না জিএম কাদের। গতকাল শনিবার দুপুরে বনানীতে দলের কার্যালয়ে এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও বিরোধী দলীয় নেতা এমন মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, তবে একটা জিনিস আমি বলতে চাই, আমাদের দলের ব্যাপারে মানুষের উপলব্ধি ভালো না। দলের চেয়ারম্যান জিএম কাদের সংসদে বিরোধী দলীয় নেতা ও কোচেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ উপনেতা এবং মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বিরোধী দলীয় প্রধান হুইপ নির্বাচিত হওয়ায় ঢাকা মহানগর জাতীয় পার্টি এ সংবর্ধনার আয়োজন করে। খবর বিডিনিউজের।

চেয়ারম্যান জিএম কাদের ও মহাসচিব চন্নুকে অব্যাহতি দিয়ে দলের প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদ নিজেই দলের হাল ধরার ঘোষণা দেন গত ২৮ জানুয়ারি। এর পাঁচ দিনের মধ্যে ৩ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর বিজয়নগরে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয় ঘণ্টা দেড়েকের জন্য দখলে নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন রওশন এরশাদের অনুসারী নেতারা। নির্বাচনের পর রওশনের অনুসারীদের তৎপর হওয়া এবং জিএম কাদের ও চুন্নুর ওপর ক্ষুব্ধ আরেকটি অংশের পদত্যাগের মধ্যে জাতীয় পার্টির বিভক্তি আবার সামনে এসেছে। এমন প্রেক্ষাপটে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে দলের চেয়ারম্যান জিএম কাদের এ বিষয়ে কথা বলেন।

তিনি বলেন, অনেকে যেমন বলছেন, আমাদের দল ভাগ হয়ে যাবে। দল ভাগ হওয়ার সম্ভাবনা এই মুহূর্তে আমি দেখি না। আরও একটা দল গঠন করতে পারেন, এরশাদ সাহেবের নাম দিয়ে, তার আদর্শ নিয়ে আরও ১০টা দল গঠন করতে পারেন। নতুনভাবে দল গঠন করার প্রক্রিয়া আছে। এরপর সেই দলটি নিবন্ধন করার প্রক্রিয়া আছে। সেটা করে যে কোনো লোক করতে পারেন। আমরা যে কাঠামোতে এগিয়ে যাচ্ছি, সেখান থেকে ভেঙে নিয়ে নতুন করে দল গঠন করার এখনও সেই পরিবেশ বা পরিস্থিতি, সম্ভাবনা আমার চোখে পড়ছে না বা আমি দেখছি না।

জিএম কাদের বলেন, আমাদের গবেষক ও সাহিত্যিক মহিউদ্দিন আহমেদ। তার একটা সাক্ষাৎকারে আমাদের সম্পর্কে বলতে গিয়ে বলেছেন, আমরা পরের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। এর ফলে এ রকম দল থাকার কী দরকার! আরেক দল যদি তাকে নিয়ন্ত্রণই করে, তাহলে সে দলের অর্থ কী এটা আংশিক সঠিক। আমরা নিয়ন্ত্রিত হয়েছি, এটা পারশিয়ালি কারেক্ট; আমরা চেষ্টা করছি বেরিয়ে আসার জন্য।

জাতীয় পার্টির প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমি বলছি না যে, দল ভাঙবে কিন্তু দলের মধ্যে সংশোধন হওয়া দরকার আছে। কঠোর সংশোধন যদি আমরা করতে না পারি, সামনের দিকে দল ভাঙবে না, দল টিকবে না। দলের অস্তিত্বের মূল্য জনগণের কাছে থাকবে না। দলকে মানুষ ভালোবাসবে না, দলের প্রতি মানুষের আস্থা থাকবে না, মানুষ মনে করবে না দল তাদের স্বার্থে পরিচালিত হচ্ছে। হয়তো মনে করবে কিছু নেতানেত্রীদের ব্যক্তিগত স্বার্থে দলটি ব্যবহৃত হচ্ছে। তাহলে জনগণের দল হবে না, জনগণের দল ছাড়া দল টিকবে না।

নির্বাচনে ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে সমঝোতার প্রসঙ্গে জিএম কাদের বলেন, এটা নিয়ে আওয়ামী লীগ বিভ্রান্তিকর একটি স্টেটমেন্ট দিয়েছে। তারা বলেছে, আওয়ামী লীগ ২৬টি আসন ছেড়ে দিয়েছে জাতীয় পার্টির ফেভারে। কিন্তু তারা একটা সিটও জাতীয় পার্টির ফেভারে ছাড়ে নাই। সব জায়গায় তাদের লোক দিয়ে রেখেছে, ফাইট করেছে এবং আমাদের লোক অনেক জায়গায় সেখানে যেকোনোভাবেই হোক পরাজিত করা হয়েছে বা করেছে। এতে আমাদের প্রার্থীরা বিভ্রান্ত হয়েছে।

নাম উল্লেখ না করে রওশন এরশাদের নেতৃত্বে একটি অংশের তৎপরতার প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, সংসদে সংখ্যা কোনো ব্যাপার না। ছয়জন লোক সংসদ কাঁপিয়ে দিয়েছিল গত সংসদে। দুইতিনজন লোক থাকলেই কাঁপিয়ে দেওয়া যায়। যদি সত্যি কথা বলা যায় এবং বলার সুযোগ পাওয়া যায়। দেশের বর্তমান পরিস্থিতি তুলে ধরে সংসদে বিরোধী দলীয় নেতা বলেন, জনগণ সত্যিকার অর্থে বিকল্প খুঁজছে। আওয়ামী লীগবিএনপির বাইরে একটা শক্তিকে গ্রহণ করার জন্য জনগণ বসে আছে।

সংবধর্না অনুষ্ঠানে দলের মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানে পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য শেরীফা কাদের, ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক তৈয়বুর রহমান, সদস্য সচিব সুলতান আহমেদ সেলিমসহ কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধএই গল্প ক্যান্সারজয়ী আজাদের
পরবর্তী নিবন্ধ