হৃদপিণ্ড প্রতিস্থাপনের অস্ত্রোপচারে এবার যোগ হল নতুন মাত্রা। মাত্র ছয় মাস বয়সি একটি শিশুর শরীরে অভিনব পদ্ধতিতে সফলভাবে হৃদপিণ্ড ও থাইমাস কলা প্রতিস্থাপন সম্ভব হয়েছে। ফলে শরীরে নিজের হৃদপিণ্ডের মতোই তা কাজ করছে। আমেরিকার নর্থ ক্যারোলাইনার ইস্টন সিনামোন নামের শিশুটি তার প্রথম জন্মদিনও কাটাতে পেরেছে আনন্দেই। এই হৃদপিণ্ড প্রতিস্থাপনের নেতৃত্ব দিয়েছেন ডিউক বিশ্ববিদ্যালয়ের পিডিয়াট্রিক কার্ডিয়াক সার্জারি বিভাগের প্রধান জোসেফ টুরেক। জন্মের পর থেকেই শিশুটির হৃদপিণ্ডে নানা ধরনের জটিলতা দেখা যায়। মাত্র পাঁচ দিন বয়সে প্রথম তার ওপেন হার্ট সার্জারি করা হয়। তারপরও অবস্থা স্বাভাবিক না হলে প্রতিস্থাপনের কথা ভাবা হয়। হৃদপিণ্ড প্রতিস্থাপনের সঙ্গে দাতার শরীরের থাইমাস কলাও শিশুটির শরীরে প্রতিস্থাপন করা হয়। যাতে শিশুর দেহ দাতার হৃদপিণ্ডকে অনুপ্রবেশকারী ভেবে বর্জন না করে। সাধারণত প্রতিস্থাপিত হৃদপিণ্ড গ্রহীতার শরীরে ১০ থেকে ১৫ বছর কাজ করে। প্রতিস্থাপনের পরও গ্রহীতা যতদিন বাঁচেন তাঁকে নিয়মিত ওষুধ খেয়ে যেতে হয়। এতে কিডনি দুর্বলতা সহ অন্যান্য জটিল রোগে আক্রান্ত হতে হয়। টুরেক জানিয়েছেন, এই পদ্ধতিতে সাফল্য আগামী দিনে অন্য যে কোনও অঙ্গ প্রতিস্থাপনে নতুন দিশা দেখাতে পারে। এর ফলে, গ্রহীতার শরীরের স্বাভাবিক প্রতিরোধ ব্যবস্থা অন্য শরীর থেকে নেয়া কোনো অঙ্গকে বর্জন করবে না। প্রতিস্থাপিত হৃদপিণ্ড অল্প সময়ের মধ্যেই অচল হয়ে গিয়ে গ্রহীতার অকাল মৃত্যু ডেকে আনবে না।
হৃদপিণ্ডের সঙ্গে দাতার থাইমাস কলাও প্রতিস্থাপন করা হলে গ্রহীতার শরীর তাকে মেনে নেয় কি না, তা নিয়ে গবেষণা চলছে ডিউক বিশ্ববিদ্যালয়ে। থাইমাস কলার অভাব রয়েছে এমন কারও হৃদপিণ্ড প্রতিস্থাপনের রোগী এর আগে পাননি গবেষকরা। তাই ডিউক বিশ্ববিদ্যালয়ের হাসপাতালেই পরীক্ষাটি করার জন্য আমেরিকার ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফডিএ)-এর জরুরি অনুমোদন চাওয়া হয়। সেই অনুমোদন মেলার পরেই গত বছরের আগস্টে শিশুটির দেহে হৃদপিণ্ড প্রতিস্থাপন করা হয়। দুই সপ্তাহ পর তার দেহে প্রতিস্থাপন করা হয় দাতার শরীর থেকে নেওয়া থাইমাস কলা। গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক চিকিৎসাবিজ্ঞান গবেষণা পত্রিকা ‘ক্লিনিক্যাল মেডিসিন অ্যান্ড রিসার্চ’ এ।