সাধারণত শুক্রবার জমজমাট থাকে কোরবানির পশুর হাট। অন্তত বিগত বছরগুলোর পরিসংখ্যান তাই বলে। তবে এবার সে ধারাবাহিকতা রক্ষা হয়নি। সবকিছু ওলট-পালট করে দিয়েছে বৃষ্টি। বৃষ্টির জন্য গতকাল বাজারে ক্রেতার উপস্থিতি ছিল কম। ফলে হয়নি কাঙ্ক্ষিত বেচাকেনা। এতে হতাশ বেপারি ও ইজারাদাররা। এমনটাই দাবি তাদের।
তবে হাল ছাড়েননি তারা। কারণ, আজ শনিবারসহ আরো পাঁচদিন বসবে হাট। এসময়ে পথে থাকা শতাধিক পশুবাহী ট্রাক এসে পৌঁছুবে। আবার বাজারের দিনক্ষণ ফুরিয়ে যাওয়ায় বেপারিরাও কম লাভে পশু বিক্রি করবেন এসময়ে। এতে ক্রেতা ও বিক্রেতার চাহিদার সমন্বয় ঘটবে। ফলে বেচা-বিক্রিতে আরো জমজমাট হয়ে উঠবে নগরের পশুর হাটগুলো।
নগরে এবার সিটি কর্পোরেশনের ব্যবস্থাপনায় অনুমোদিত পশুর হাট বসেছে ছয়টি। হাটগুলো হচ্ছে- সাগরিকা পশুর বাজার, বিবিরহাট গরুর হাট, কর্ণফুলী গরু বাজার (নুর নগর হাউজিং এস্টেট), সল্টগোলা রেলক্রসিং সংলগ্ন বাজার এবং ৪১নং ওয়ার্ডস্থ বাটারফ্লাই পার্কের দক্ষিণে টি কে গ্রুপের খালি মাঠ ও পোস্তারপাড় ছাগলের বাজার। গত ১২ জুলাই থেকে হাটগুলোতে বিক্রি শুরু হয়েছে। চলবে ২১ জুলাই পর্যন্ত।
গতকাল শুক্রবার ছিল কোরবানি পশুর হাটের পঞ্চম দিন। এদিন বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গছে, কুষ্টিয়া, গোপালগঞ্জ, ফরিদপুর, রাজশাহী, চাপাইনবাবগঞ্জ, কুমিল্লাহ, নাটোরসহ অন্যান্য এলাকা থেকে প্রচুর গরু এসেছে বাজারে। গতকালও প্রতিটি বাজারে ট্রাক থেকে গরু-ছাগল নামাতে দেখা গেছে। বাজারগুলোতে বাঁশখালী ও আনোয়ারাসহ বিভিন্ন উপজেলা ও চট্টগ্রামের বিভিন্ন খামারের হৃষ্টপুষ্ট প্রচুর গরু দেখা গেছে।
বিকেলে বিবিরহাট বাজারে দেখা গেছে, আগের দিনের চেয়েও ভিড় কম। কথা হয় পাবনা থেকে গরু নিয়ে আসা বেপারি মানিকের সাথে। তিনি একটা গরুর দাম হাঁিকয়েছেন সাত লাখ টাকা। কয়েকজন ক্রেতা সর্বোচ্চ সাড়ে চার লাখ টাকায় গরুটি কিনতে আগ্রহ দেখান। মানিক বলেন, ক্রেতারা যে দাম বলছেন তাতে বিক্রি করলে পুষাবে না।
বাজারটিতে বড় সাইজের দামি গরু যেমন ছিল মাঝারি সাইজেরও প্রচুর গরু ছিল। বেশিরভাগ ক্রেতার আগ্রহ মাঝারি সাইজের গরুর প্রতি। এ ধরনের গরুগুলোর দাম ৮০ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকার মধ্যে।
বিবিরহাট বাজারের ইজারাদার মো. আরিফুল ইসলাম আজাদীকে বলেন, বৃষ্টি তো সব শেষ করে দিল। বিকেলে কোরাবানিদাতারা যখন বাজারমুখি হবেন তখনি বৃষ্টি শুরু হলো। এতে বেচাবিক্রিও হয়নি। সাধারণত শুক্রবারে বিক্রি একটু বেশি হতো অতীতে। এবার তা শেষ করে দিল বৃষ্টি। বাজারে প্রচুর গরু আছে। কাল (আজ) আরো আসবে। বেপারিরাও অল্প লাভে দাম ছেড়ে দিচ্ছেন।
আজ শনিবার বেচাবিক্রি বাড়বে আশাবাদ ব্যক্ত করে এ ইজারাদার বলেন, শনি ও মঙ্গলবার বিবিরহাটে সাপ্তাহিক বাজার বসে। যদিও কোরবান উপলক্ষে প্রতিদিন বসছে। তারপরও শনি ও মঙ্গলবারকে ঘিরে আলাদা আমেজ কাজ করে। সে হিসেবে আশা করছি, কাল (আজ) বাজার জমবে।
এদিকে অন্য বাজারগুলোর তুলনায় বাটারফ্লাই পার্কের দক্ষিণে টি কে গ্রুপের খালি মাঠে বসা পশুর হাট মোটামুটি জমজমাট ছিল গতকাল। বাজারটিতে বাঁশখালী ও আনোয়ারা থেকে নিয়ে আসা প্রচুর দেখা গেছে। আছে উত্তরবঙ্গসহ অন্যান্য জেলা থেকে বেপারিদের নিয়ে আসা গরুও। এ বাজারে গতকাল সর্বোচ্চ পাঁচ লাখ টাকা দামের একটা গরু বিক্রি হয়েছে।
বাজারটির ইজারাদার ওয়াহিদ চৌধুরী আজাদীকে বলেন, আজ (গতকাল) বাজারে বেচাবিক্রি মোটামুটি ভালো হয়েছে। বৃষ্টি না হলে আরো জমজমাট হতো। তবে বৃষ্টির মধ্যেও মাঠের অবস্থা যেন ভালো থাকে তার জন্য আমাদের ভলেন্টিায়ররা কাজ করেছে। চারপাশে ড্রেন করে দিয়েছি। তাই তেমন সমস্যা হয়নি। তবু বৃষ্টি না হলে ক্রেতারা বাজারমুখি আরো বেশি আগ্রহী হতেন। এবার গরুর দাম কেমন জানতে চাইলে বলেন, আমাদের বাজারে দাম অনেক সহনীয়। লোকজন যেভাবে দাম বেশি বলছেন সেরকম না। তিনি বলেন, ফরিদপুর, কুষ্টিয়া, চাপাইনবাবগঞ্জ, বাঁশখালী, আনোয়ারা থেকে প্রচুর গরু এসেছে।