চিত

সত্যব্রত বড়ুয়া | শুক্রবার , ২০ নভেম্বর, ২০২০ at ১১:২৭ পূর্বাহ্ণ

সকাল বেলা ঘুম হতে উঠে যখন মেঝেতে পা রাখছি তখন দেখলাম একটা তেলাপোকা চিত হয়ে পা ছোড়াছুড়ি করছে। উপর হওয়ার সাধ্য তার নেই। আমি তেলাপোকাটিকে লক্ষ্য করে ফুটবলে ‘কিক’ করবার মতো একটা কিক মারলাম। উপর হয়ে গেলো তেলাপোকাটি। চিত হয়ে থাকলে তাকে মরতে হতোই। আমার কিকে একটা প্রাণী বেঁচে গেলো। কিন্তু এ পর্যন্ত আমি অনেক চিত হয়ে থাকা তেলাপোকাই পায়ের তলায় পিষে মেরেছি। শেয়াল নাকি সুযোগ পেলে কচ্ছপ মেরে খায়। কচ্ছপ মারার কৌশল সে জানে। শেয়াল জানে কচ্ছপকে চিত করে দিলে সে আর উপর হতে পারে না। পা দিয়ে শেয়াল কচ্ছপকে চিত করে দেয়। চিত হয়ে থাকা কচ্ছপ তখন অসহায় হয়ে পড়ে। শেয়াল মনের আনন্দে কচ্ছপটিকে কামড়ে কামড়ে খায়। আমরা ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর চিত হয়ে থাকি। উপর হতে পারিনা। অনেক দিন পরে হামাগুড়ি দিতে পারি। এর আগে চিত হয়ে কেবল হাত পা ছোড়াছুড়ি করি। ‘বলি খেলা’য় এক বলি আরেক বলিকে আপ্রাণ চেষ্টা করে চিত করে দিতে। চিত হওয়ার মানেই হলো পরাজিত হওয়া। নির্বাচনে ট্রাম্পকে চিত করে দিলেন জো বাইডেন। ট্রাম্প আসলে ‘চিত পটাং’ই হলেন। পরীক্ষায় ছাত্ররা ফেল মারে। এটাও এক ধরনের চিত হওয়া। আমার মনে হয় আমাদের ভাষায় এখন চিত হয়ে যাওয়া কথাটি ব্যবহার করা প্রয়োজন। এতে নতুনত্বের স্বাদ পাওয়া যাবে। আমরা ইচ্ছে করলেই ক্রিকেট খেলায় বলতে পারি বাংলাদেশের কাছে ভারত বিশ রানে চিত হয়েছে। (ভারতের জায়গায় বাংলাদেশও হতে পারে।)
আমি এমন অনেক মানুষ দেখেছি যারা স্বচ্ছন্দে চিত হয়ে ঘুমান। এদের নাকি চিত হয়ে শুলে সুনিদ্রা হয়। আমি খুব চেষ্টা করেছি চিত হয়ে ঘুমাতে। আমার সুনিদ্রার জায়গায় হয়েছে কুনিদ্রা। অনেকে আবার চিত হয়ে নাক ডেকে ঘুমান। চিত হয়ে শুয়ে থাকা কোনো মহিলা যদি নাক ডাকেন তখন নিজেরই আমার লজ্জা লাগে। অনেক চিত হয়ে ঘুমানো স্বামী স্ত্রী আছেন যারা দু’জনেই নাক ডাকেন। দেখে মনে হয় তারা পরম সুখে ঘুমাচ্ছেন। এক সময় আমার সাথে এক মাড়োয়ারি ব্যবসায়ীর পরিচয় ঘটেছিলো। শীতকালে তাকে আমি চিত হয়ে ‘রৌদ্রস্নান’ করতে দেখতাম। এই মাড়োয়ারির ছিলো এক বিশাল ভুড়ি। এই ভুড়িতে তার এক কর্মচারী সরষের তেল মাখতো। এখন ভুড়ি ছাড়াও তেল মারা যায়। চিত হওয়ার প্রয়োজন নেই। সুযোগ পেলেই একে অপরকে আমরা তেল মারি। আমরা জানি বানর যা দেখে তাই করে। কিন্তু কখনো সে চিত হয়ে শুয়ে থাকা মানুষকে দেখে চিত হয়না। কুকুর মারামারি প্রবণ প্রাণী। কামড়া কামড়ি করবেই।
মারামারি করবার সময় কোনো কুকুর কখনো চিত হতে চায়না। জলের কুমীরকে মাঝে মাঝে ডাঙ্গায় উঠে চিত হয়ে রোদ পোহাতে দেখা যায়। এ সময় তার চোখ হতে জল পড়ে। এটাকে ‘কুম্ভীরাশ্রু’ বলে। কুমীর কখনো কান্না করে না। এটা তার অন্য প্রাণী মারার ফন্দি। আমাদের চোখ হতেও মাঝে মাঝে ‘কুম্ভীরাশ্রু’ ঝড়ে। মানুষ যখন মরে তখন চিত হয়ে থাকে। এটা হেরে যাওয়া নয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপ্রতিবছর চার লাখ রোগীকে সেবা দিচ্ছে চট্টগ্রাম চক্ষু হাসপাতাল
পরবর্তী নিবন্ধকোনো কিছু আশা করি না