চিংড়িঘের তৈরি করতে কাটা হলো প্যারাবনের ৫ হাজার চারাগাছ

চকরিয়ার বদরখালীতে প্যারাবনে পানিপ্রবাহ বন্ধে বাঁধ অভিযানে পালিয়ে গেল শ্রমিকেরা, বাঁধ অপসারণের নির্দেশ

ছোটন কান্তি নাথ, চকরিয়া | রবিবার , ১৪ জানুয়ারি, ২০২৪ at ৯:১৭ পূর্বাহ্ণ

কক্সবাজারের চকরিয়ার সমুদ্র উপকূলের রক্ষাকবচ প্যারাবন উজাড় করে চিংড়িঘের তৈরির জন্য কর্মকাণ্ড শুরু করেছে প্রভাবশালী একটি চক্র। এরই অংশ হিসেবে চকরিয়ামহেশখালী সড়কের বদরখালীতে মাতামুহুরী নদীর মোহনায় সৃজিত প্রায় ৫ হাজার চারা গাছ কেটে সাবাড় করা হয়েছে। এমনকি পূর্বাংশে প্যারাবনে যাতে পানির প্রবাহ বন্ধ হয়ে যায় সেজন্য মাটি দিয়ে নদীর তীরে বাঁধ নির্মাণ করা হয়।

গতকাল শনিবার ভোর থেকে প্রায় দুই শতাধিক শ্রমিক দিয়ে শুরু হয় পরিবেশ বিধ্বংসী এই অপতৎপরতা। খবর পেয়ে ছুটে যান চকরিয়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. রাহাত উজ জামান। পুলিশসহ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের উপস্থিতির খবরে কাজে নিয়োজিত শ্রমিকরা পালিয়ে হয়ে যায়।

অভিযোগ উঠেছে, বদরখালী সমবায় কৃষি ও উপনিবেশ সমিতির সদস্য ছনুয়া পাড়ার জাফর উল্লাহ ও বদরখালী ইউনিয়নের সাবেক সদস্য আহমদ উল্লাহ চিংড়িঘের তৈরির জন্য প্যারাবন উজাড় ও নদীতীরে বাঁধ দেওয়ার কাজ করছেন। এজন এক জনপ্রতিনিধিকে টাকাও দেওয়া হয়েছে।

তবে অভিযুক্ত দুজন দাবি করেছেন, তারা বদরখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নূরে হোছাইন আরিফ এবং বদরখালী সমবায় কৃষি ও উপনিবেশ সমিতির নেতৃবৃন্দের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে নদীতীরে বাঁধ দেওয়ার কাজ শুরু করেছিলেন। কোনো গাছ কাটেননি।

১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিল রাতে প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় আঘাত হেনেছিল কক্সবাজার উপকূলে। তখন চকরিয়ার উপকূলীয় বদরখালী রাতের মধ্যে লণ্ডভণ্ড হয়ে যায়। সেই রাতে চকরিয়া ও পেকুয়ায় প্রাণ হারায় প্রায় ৩০ হাজার মানুষ এবং লাখ লাখ গবাদী পশু। পরে চকরিয়া উপকূলের সবুজ বেষ্টনী তৈরিতে কাজ করে জাপানভিত্তিক পরিবেশবাদী এনজিও সংস্থা ওআইএসসিএ (ওয়াইস্কা ইন্টারন্যাশনাল)। এই সংস্থার পক্ষ থেকে ঘূর্ণিঝড়পরবর্তী প্রতি বছর জাপানের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী এসে চকরিয়া সুন্দরবনের জেগে ওঠা চরে প্যারাবন সৃজন করেন। একইভাবে উপকূলের জানমাল রক্ষায় বেসরকারি এনজিও সংস্থা উন্নয়ন বিকল্পের নীতি নির্ধারণী গবেষণা (উবিনীগ) উদ্যোগ নেয় সমুদ্র উপকূলের বদরখালী ইউনিয়নকে রক্ষায় প্যারাবন সৃজনের।

উবিনীগ কক্সবাজারের আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক খাঁন জয়নাল আবেদীন আজাদীকে জানান, ১৯৯৬ সাল থেকে পর্যায়ক্রমে বদরখালীর সমুদ্র উপকূলের ছনুয়া পাড়া থেকে লম্বাখালী পর্যন্ত প্রায় ৩০০ একর জায়গা তথা তিন কিলোমিটারজুড়ে কেওড়া ও বাইন প্রজাতির কয়েক লক্ষ চারা রোপণ করা হয়। বর্তমানে এসব প্যারাবনের সিংহভাগ উজাড় করে চিংড়িঘের তৈরি করা হয়েছে। অবশিষ্ট প্যারাবন ধ্বংস করে চিংড়িঘের তৈরির জন্য প্রভাবশালীদের কুদৃষ্টি পড়েছে।

প্যারাবন উজাড়ের বিষয়ে আইনগত কোনো ব্যবস্থা নেবেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, অবশ্যই আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। যারা জড়িত রয়েছে তাদের নামে মামলার আবেদন করা হবে থানায়।

এদিকে অনুমতি প্রদান প্রসঙ্গে বদরখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি নূরে হোছাইন আরিফ আজাদীকে বলেন, যারা পরিবেশ বিধ্বংসী কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত তাদের সাথে ব্যক্তিগতভাবে আমার কোনো সখ্য নেই। তাছাড়া আমি কাউকে এমন কাজ করতে অনুমতি প্রদান করিনি। এজন্য দখলবাজদের কাছ থেকে কোনো টাকাও নিইনি। ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে আমাকে জড়িয়ে অপপ্রচার শুরু করেছে একটি মহল। তিনি দাবি করেন, নদীতীরে মাটির বাঁধ দেওয়ার কাজ শুরু করলেও সেখানে গাছ কাটা হয়নি।

বদরখালী সমবায় কৃষি ও উপনিবেশ সমিতির সভাপতি মো. দেলোয়ার হোছাইন আজাদীকে বলেন, সমিতির যেসব সদস্য পরিবেশ বিধ্বংসী এই কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ত রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে সমিতির বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এজন্য একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে।

এ ব্যাপারে চকরিয়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. রাহাত উজ জামান আজাদীকে বলেন, খবর পাওয়া মাত্র সেখানে ছুটে যাই। তবে এর আগেই অকুস্থল থেকে লোকজন লাপাত্তা হয়ে যায়। তিনি বলেন, প্যারাবনবেষ্টিত এলাকায় চিংড়িঘের তৈরির জন্য মাতামুহুরী নদীতীরে দেওয়া মাটির বাঁধ অপসারণ করে নিতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এরপরও যদি সেখানে পরিবেশবিধ্বংসী অপতৎপরতা চালানো হয় তাহলে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবিএনপি তাকিয়ে, কম্বোডিয়ার মতো নিষেধাজ্ঞা কবে আসবে : কাদের
পরবর্তী নিবন্ধঅ্যাপোলো ইমপেরিয়াল হাসপাতালে ৩৩ সফল বাইপাস সার্জারি