চার কিমিতে ২০ গরুর খামার, বর্জ্যে দূষণ

কর্ণফুলী উপজেলার চর ফরিদ খাল

মো. মহিউদ্দিন, কর্ণফুলী | বুধবার , ১৮ জুন, ২০২৫ at ৬:০৮ পূর্বাহ্ণ

একটা সময় এখানে চলত বড় বড় সাম্পান। পাল তোলা সওদাগরী নৌকা। বিভিন্ন এলাকার মানুষ প্রয়োজনে পানিও নিয়ে যেতেন এ খাল থেকে। তবে এখন তা শুধুই স্মৃতি। খামারি আর অবৈধ দখলদারের কবলে বিষাক্ত খালে পরিণত হয়েছে কর্ণফুলী উপজেলার চর ফরিদ খাল।’ স্থানীয় ভুক্তভোগীরা বললেন এসব কথা।

উপজেলার শিকলবাহা মাজার গেট এলাকা থেকে শুরু হয়ে আলী হোসেন মার্কেট পর্যন্ত চর ফরিদ খালের প্রায় ৪ কিলোমিটার এলাকায় খালের দুই পাশে গড়ে উঠেছে ২০টি গরুর খামার। এসব খামারের কয়েক হাজার গরুর গোবর ও মূত্রের বর্জ্য সরাসরি ফেলা হয় খালে। এতে খালটি এখন গোবরের ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। খালে ফেলা বর্জ্যের দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ এলাকাবাসী। তারা স্বাস্থ্যঝুঁকিতেও পড়েছেন।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার শিকলবাহা মাজার গেট এলাকা থেকে শুরু হয়ে আলী হোসেন মার্কেট পর্যন্ত প্রায় ৪ কিলোমিটার এলাকায় খালের দুই পাশে গড়ে ওঠা গরুর খামারের বর্জ্য সরাসরি ফেলছেন খামারিরা। গোবর আর মূত্রের কারণে দূষিত হয়ে গেছে খাল। অধিকাংশ ডেইরি ফার্মের গোবর ও মূত্র মিশ্রিত দূষিত পানি পাইপ ও ড্রেনের মাধ্যমে সরাসরি খালে ফেলা হয়, যা পরিবেশ সংরক্ষণ আইনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ। স্থানীয়রা বলছেন, এ খালের দুই পাশে প্রায় ২৫০টি গরুর খামার আছে।

স্থানীয় বাসিন্দা আবুল কাশেম বলেন, চর ফরিদ খালটি শিকলবাহা খালের শাখা খাল। ৯০ দশকের দিকে নৌপথে আনানেওয়া করা হতো পণ্য। কিন্তু ভূমিদস্যু ও প্রভাবশালীদের দখলদূষণে এখন সংকটাপন্ন উপজেলার খালগুলো। সবচেয়ে খারাপ অবস্থা এই খালের।

আব্বাস আলী নামে এক বৃদ্ধ বলেন, ছোটকালে আমরা এই খাল থেকে মাছ ধরেছি, গোসলসহ ব্যবহারের জন্য ঘরে পানিও নিয়ে গেছি। কিন্তু গত এক যুগ ধরে ভয়াবহ দূষণের কারণে খালটি এখন গোবরের খালে পরিণত হয়েছে।

দূষণের বিষয়ে কথা বলতে চাইলে কোনো খামারি কথা বলতে রাজি হননি।

প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের তথ্য মতে, কর্ণফুলী উপজেলায় ১২শ খামার রয়েছে। এসব খামারের বড় একটা অংশ কর্ণফুলী নদীর সাথে সংযুক্ত খালের পাড় কিংবা আশপাশে গড়ে উঠেছে। কর্ণফুলীর খামারগুলোতে ২৫ হাজার গরু রয়েছে। দৈনিক তিন হাজার টন গোবর এবং দুই লাখ লিটার গোমূত্রের বর্জ্যের তথ্য দিয়েছেন তারা।

স্থানীয় কৃষকদের অভিযোগ, খামারিদের পশুর বর্জ্যে দূষিত ও ভরাট হয়ে গেছে চর ফরিদ খালটি। কৃষকরা আগে তাদের চাষাবাদে খালের পানি ব্যবহার করতেন। এখন সেটি সম্ভব হয় না। এতে চরলক্ষ্যা ও শিকলবাহা ইউনিয়নের কৃষকদের বৃষ্টির পানির ওপর নির্ভর করে চাষাবাদ করতে হয়।

দুই বছর আগে চট্টগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের একটি প্রকল্পে ২ কোটি ৪ লাখ ১৫ হাজার টাকা বরাদ্দে চর ফরিদ খাল পুনঃখনন করে মেসার্স গরীবে নেওয়াজ এন্টারপ্রাইজ নামক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। অপরিকল্পিত খননে কোটি টাকা জলে ফেলা হয়েছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। কোটি টাকা খরচ করে খননেও রক্ষা হয়নি খালটি। সে সময়ে খালের প্রায় ৯ কিলোমিটার খনন কাজ নিয়েও অনিয়মের অভিযোগও তুলেছিলেন স্থানীয়রা।

পানি উন্নয়ন বোর্ড নির্বাহী প্রকৌশলী শওকত ইবনে শাহিদ বলেন, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীনে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) খাল পুনঃখননের ডেলটা প্ল্যানের আওতায় খালটি পুনর্জীবিত ও ফসলি জমির চাষাবাদে কৃষকদের উপকারের উদ্দেশে খনন করা হয়েছিল। কিন্তু এরই মধ্যে খালটি পূর্বের অবস্থায় রূপ নিয়েছে। খালটি রক্ষায় পরিবেশ অধিদপ্তর ও স্থানীয় প্রশাসনকে এগিয়ে আসা প্রয়োজন।

কর্ণফুলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাসুমা জান্নাত বলেন, খালটি রক্ষায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের সাবেক সচিব কারাগারে
পরবর্তী নিবন্ধএস আলমের আরও ২০০ একর জমি জব্দের আদেশ