চাই

সত্যব্রত বড়ুয়া | শুক্রবার , ২৯ জানুয়ারি, ২০২১ at ৭:১২ পূর্বাহ্ণ

একটি আপ্ত বাক্য রয়েছে, লেখাপড়া করে যে গাড়ি ঘোড়া চড়ে সে। ছেলেবেলা হতেই এ কথাটায় আমার বিশ্বাস ছিলোনা, কারণ অনেক লেখা পড়া জানা পন্ডিত ব্যক্তিকে আমি হাঁটতে দেখতাম। গাড়ি কিনবার মতো টাকা তাদের ছিলোনা। যারা গাড়ি হাঁকাতেন তাদের মধ্যে বেশির ভাগই পন্ডিত ব্যক্তি ছিলেন না। আমি লেখা পড়া করতাম বাবার ভয়ে। আমার আশৈশব শখ ছিলো গাড়ি চড়বার। একবার স্কুলের বাংলা পরীক্ষায় ‘তোমার জীবনের লক্ষ্য’ রচনায় আমি লিখেছিলাম, আমার জীবনের লক্ষ্য একজন ড্রাইভার হওয়া। ড্রাইভার হতে চাইতাম গাড়িতে চড়বার জন্যে। বাবাকে একদিন আমি সাহস করে একথাটা বললাম। বাবা কিছুক্ষণ চুপ থেকে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, পাগলামি না করে পড়তে যাও। পড়ায় আমার মন বসেনা। রাতে প্রায়ই স্বপ্নে দেখতাম একটা দামী গাড়িতে চড়ে আমি চট্টগ্রাম থেকে কঙবাজার ভ্রমণে যাচ্ছি। গাড়ি আমার সত্যিই চাই। ছেলেবেলা থেকে এ পর্যন্ত শুধু চেয়ে আসছি। শুধু চাই আর চাই। তরুণ বয়সে একটি আমার বয়সী মেয়েকে দেখে মনে হলো এ ধরনের একটি মেয়ে আমার চাই। মনে মনে তাকে আমি ভালোবাসলাম। আমার ভালোবাসার কথা তাকে আমি কোনো দিন বলতে পারিনি। একবার শুধু একটা ছোট্ট চিঠিতে মেয়েটিকে লিখেছিলাম, আমি তোমাকে চাই। মেয়েটি সে চিঠির উত্তরে লিখলো, আমি তোমাকে চাইনা। প্রত্যাখ্যাত হলেও সে চিঠিটা এখনো আমি সযত্নে রেখে দিয়েছি। কেন রাখলাম তা জানিনা। অনেক কিছু না বুঝেই আমি চাই। তবু চাইতে আমাকে হবেই। ছেলেবেলায় আমি আমার মা’র কাছে সিনেমা দেখবার জন্যে টাকা চাইতাম। মা’র কাছে টাকা না থাকলে সে টাকা মা আমাকে বাবার শার্টের পকেট থেকে চুপিসারে নিয়ে আমাকে দিতেন। মাকে আমি বলতাম, তুমি তো আমাকে বাবার পকেট মেরে টাকা দিলে। মা হেসে বলতেন, ছেলের জন্যে আমি সব কিছু করতে পারি। আমি পারিনা। শুধু চাইতে পারি। পদ্মা সেতু তৈরী হয়ে গেলে আমি সবার আগে সে সেতু হেঁটে পার হতে চাই। পত্রিকায় আমার ছবি উঠবে। অনেক চাওয়াই আমার পূরণ হয়েছে। এর পরেও মনে হয় কিছুইতো আমি চাইতে পারলাম না। আমার একটা বিরাট লাইব্রেরি চাই। লাইব্রেরিটা হবে ‘বাতিঘর’ হতে পাঁচগুণ বড়। সেখানে থাকবে লাখ লাখ বই। আমি চাঁদে এক খন্ড জমি কিনতে চাই। সেখানে আমি গোলাপ ফুলের বাগান করবো। আমার বাঘের পিঠে উঠবার শখ বহু দিনের। সুন্দরবনে গিয়ে আমি ‘রয়েল বেঙ্গল টাইগারের’ পিঠে উঠতে চাই। বাঘ ভয় পেয়ে আমাকে নিয়ে ছুটতে ছুটতে একেবারে ‘বে অব বেঙ্গলে’ এসে ঝাঁপ দেবে। বাংলাদেশে ‘করোনা’র ভ্যাকসিন আসলে সবার আগে আমি টিকা দিতে চাই। সেদিন দুপুরে বিশ্রাম নিতে যাচ্ছি, সে সময় কলিং বেলের আওয়াজ হলো। দরজা খুলে আমি দেখলাম এক ঝাঁক তরুণের সাথে একজন মধ্যবয়সী ভদ্রলোক হাসি মুখে দাঁড়িয়ে আছেন। আমি বললাম, মনে করেছিলাম ভিখেরি ভিক্ষে করতে এসেছে। তিনি বললেন, আমিও ভিক্ষে করতে এসেছি। আমি ভোটের ভিখেরি। আমি আপনার ভোট চাই।

পূর্ববর্তী নিবন্ধআন্‌জুমানে রজভীয়া নূরীয়ার প্রস্তুতি সভা
পরবর্তী নিবন্ধকাজী আবদুল ওদুদ : মুসলিম রেনেসাঁর অগ্রপথিক