প্রস্তাবনার দীর্ঘ প্রায় ১০ মাস পর নগরের বর্জ্য ব্যবস্থপনায় প্রকল্প গ্রহণে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনকে (চসিক) সম্মতি দিয়েছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। এর মধ্য দিয়ে জাপান সরকারের পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে দেশটির একটি প্রতিষ্ঠানের প্রস্তাবিত চট্টগ্রাম শহরে সমন্বিত আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলার পথ সুগম হল।
জানা গেছে, ‘জেএফই ইঞ্জিনিয়ারিং কর্পোরেশন’ নামের প্রতিষ্ঠানটি নগরে ২০২২ সালে বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় ‘ইন্টিগ্রেটেড ওয়েস্ট ট্রিটমেন্ট’ (কম্পোস্ট প্লা্যান্ট, ল্যান্ড ফিল সাই) প্রকল্পের আগ্রহ দেখায়। এর পূর্ণাঙ্গ ফিজিবিলি স্টাডি (সম্ভাব্যতা যাচাই) করার জন্য একই বছরের মার্চ মাসে চসিককে প্রস্তাব দেয় জেএফই ইঞ্জিনিয়ারিং কর্পোরেশন। এক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে চসিকের এলওআই বা লেটার অব ইন্টেন্ট’ অনুমোদন ও স্বাক্ষরের প্রয়োজন হয়। এ বিষয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন চেয়ে গত বছরের ৪ এপ্রিল সিনিয়র সচিব বরাবর চিঠি দেয় চসিক। এতে সাড়া না পাওয়ায় স্থানীয় সরকার মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলামকে এ বছরের ১ সেপ্টেম্বর আরেকটি চিঠি দেন মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী। এর প্রেক্ষিতে গত ২৬ জানুয়ারি স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে চিঠি দিয়ে চসিককে এলওআই অনুমোদন ও জেএফই’র সঙ্গে স্বাক্ষরের অনুমতি দেয়। চিঠিটি চসিক পেয়েছে গতকাল বুধবার। বিষয়টি নিশ্চিত করে চসিকের প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা মুহাম্মদ আবুল হাশেম আজাদীকে বলেন, মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পাওয়ায় ফিজিবিলিট স্টাডির বিষয়ে পরবর্তী কার্যক্রম শুরু করতে যাচ্ছি।
জানা গেছে, জেএফই ইঞ্জিনিয়ারিং কর্পোরেশনের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের প্রস্তাবনায় পূর্ণাঙ্গ ফিজিবিলিটি স্টাডিটি ২০২২–২০২৩ অর্থ বছরে সম্পাদনের প্রস্তাব ছিল। পুরো ফিজিবিলিটি স্টাডির যাবতীয় ব্যয় বহন করবে প্রতিষ্ঠানটি।
জেএফই ইঞ্জিনিয়ারিং কর্পোরেশনের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের মাধ্যমে নগরে বর্জ্য উৎপাদনের পরিমাণ, এর ফিজিক্যাল ও কেমিক্যাল গঠন, বর্জ্যে ক্যালোরিফিকের পরিমাণ (দহন মাত্রা), সংগ্রহ ও অপসারণের পরিমাণ এবং সর্বোপরি বর্জ্য ট্রিটমেন্টের যথাযথ টেকনোলজি নির্ধারণ করা সম্ভব হবে। তাছাড়া চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন এলাকায় ক্রমশ বর্জ্যের পরিমাণ বৃদ্ধি ও ল্যান্ডফিল এর স্থান স্বল্পতা প্রভৃতি সমস্যা সমাধানে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়নে এই ফিজিবিলিটি স্টাডি সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।
উল্লেখ্য, ২০১৯–২০২০ অর্থ বছরে জাইকার একটি প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, নগরের ৪১ ওয়ার্ডে দৈনিক ৩ হাজার টন বর্জ্য উৎপাদিত হয়। এর মধ্যে ১ হাজার ৮৩০ টন গৃহস্থালি, ৫১০ টন সড়ক ও অবকাঠামোগত এবং ৬৬০ টন মেডিকেল বর্জ্য। উৎপাদিত বর্জ্যের মধ্যে কর্পোরেশন সংগ্রহ করে দুই হাজার টন। বাকি বর্জ্য নালা–নর্দমা, খাল–বিল, নদী ও উন্মুক্ত স্থানে পড়ে থাকে।
এদিকে মন্ত্রণালয়ে দেয়া চসিকের চিঠিতে বলা হয়, বাংলাদেশের জাতীয় অর্থনীতির প্রাণকেন্দ্র, বাণিজ্যিক রাজধানী ও দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম নগরী চট্টগ্রামে বর্তমানে প্রায় ৭০ লাখ লোকের বসবাস। চট্টগ্রাম মহানগরীর জনসংখ্যা বৃদ্ধিসহ অর্থনৈতিক উন্নয়নের ফলে নগরে বর্জ্যের পরিমাণও বৃদ্ধি পাচ্ছে দিন দিন। বিশাল জনসংখ্যার এই মহানগরীর পরিবেশকে পরিচ্ছন্ন ও সুন্দর রাখতে আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কোনো বিকল্প নেই।
বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত চসিকের আরেকটি চিঠিতে বলা হয়, কর্পোরেশনের বিশাল কর্মযজ্ঞের মধ্যে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কাজ। চট্টগ্রাম মহানগরীর জনসংখ্যা বৃদ্ধিসহ অর্থনৈতিক উন্নয়নের ফলে পারিবারিক, শিল্প, বাণিজ্যিক ও স্ট্রিট বর্জ্য উৎপাদনের পরিমাণ দিন দিন ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে মোট বর্জ্যের পরিমাণ প্রতিবছর বেড়েই চলছে। বর্জ্য উৎপাদন যে হারে বাড়ছে সে হারে বর্জ্যের সুষ্ঠু বিন্যাস তথা ব্যবস্থাপনা সম্ভব হচ্ছে না।