চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সড়ক ও অবকাঠামোগত উন্নয়নে গৃহীত একটি প্রকল্পের পরিচালক (পিডি) হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি), আগারগাঁও ঢাকা এর একজন নির্বাহী প্রকৌশলীকে। এর আগে চসিকের ইতিহাসে এ ধরনের ঘটনা ঘটেনি। অর্থাৎ চসিকের গৃহীত প্রকল্পগুলোতে কেবল সংস্থাটিতে কর্মরতরাই প্রকল্প পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
চসিক সূত্রে জানা যায়, ম্যাচিং ফান্ডের শর্ত ছাড়াই চসিকের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় এ প্রকল্পটি গত ৪ জানুয়ারি অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। ‘চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের আওতায় এয়ারপোর্ট রোডসহ বিভিন্ন সড়ক উন্নয়ন ও গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোগত উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছে দুই হাজার ৪৯০ কোটি ৯৬ লাখ ৬৯ হাজার টাকা। প্রকল্পটিতে সম্পূর্ণ অর্থায়ন করবে সরকার। জিও অনুযায়ী প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয় ২০২২ সালের ১ মার্চ থেকে ২০২৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত।
চসিকের প্রধান প্রকৌশলী মো. রফিকুল ইসলামকে প্রথমে প্রকল্পটি পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। তার স্বাক্ষরে গত ১২ মে দরপত্রও আহ্বান করা হয়। পরবর্তীতে গত ১৪ জুলাই চসিকের নির্বাহী প্রকৌশলী (পুর) আবু সাদাত মোহাম্মদ তৈয়্যবকে প্রকল্প পরিচালক করা হয়। তিনিও গত ৭ আগস্ট দরপত্র আহ্বান করেন। তবে গত ১১ আগস্ট স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করে তাকে প্রকল্প পরিচালক থেকে অব্যহতি দেয়া হয়। সর্বশেষ ১৪ আগস্ট স্থানীয় সরকার বিভাগের জারিকৃত আরেকটি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. গোলাম ইয়াজদানীকে প্রকল্প পরিচালক নিয়োগ দেয়া হয়। ওই প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, প্রকল্প বাস্তবায়নের সুবিধার্থে প্রকল্প পরিচালকের পরিবহন সেবা, লজিস্টিকসহ অন্যান্য সুবিধাদি প্রদানের বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে।
চসিকের একাধিক প্রকৌশলী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিষয়টি তাদের জন্য অপমানজনক বলে মন্তব্য করেছেন। তারা বলছেন, প্রকল্পটির প্রধান কাজ হচ্ছে সড়ক উন্নয়ন। এছাড়া ব্রিজ-কালর্ভাট ও ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ অর্ন্তভুক্ত। এ ধরনের কাজ করার অভিজ্ঞতা সিটি কর্পোরেশনে কর্মরত প্রকৌশলীদের রয়েছে। নিয়োগকৃত ঠিকাদার কাজ করে। সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলী তা তদারকি করেন। সড়ক, ব্রিজ, কালভার্ট নির্মাণে এ ধরনের তদারকি নিয়মিতই হচ্ছে। তাছাড়া প্রকল্পের অন্যতম কাজ হচ্ছে ডিপিপি তৈরি করা। সেটা কর্পোরেশনের প্রকৌশলীরা ভালোভাবেই সম্পন্ন করেছেন বলেই প্রকল্পটি অনুমোদিত হয়েছে। এখন বাস্তবায়নের সময়ে চসিকের প্রকৌশলীদের সরিয়ে দেয়া আমাদের জন্য বিব্রবতকর। মানুষের কাছে আমরা অযোগ্য বলে ভুল বার্তা যেতে পারে।
এ বিষয়ে সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী দৈনিক আজাদীকে বলেন, বিশেষজ্ঞ প্রকল্প পরিচালক পেলে প্রকল্পের কাজ নির্ধারিত সময়ে শেষ হবে। ভালো প্রকল্প পরিচালক না হলে কাজ দ্রুত শেষ হয় না। তাই ভালো প্রকল্প পরিচালক আমারও ডিমান্ড ছিল। অতীতে র্পোট কানেকটিং রোড ও এঙেস রোড নিয়ে অনেক সময়ক্ষেপণ হয়েছে। তাই আমার চাওয়া কাজ যেন দ্রুত শেষ হয়। মেয়র বলেন, প্রকল্প পরিচালক হওয়ার জন্য কমপক্ষে তিন বছর চাকরির বয়স থাকতে হবে। চসিকে এখন যারা সিনিয়র আছেন তারা তার আগেই অবসরে যাবেন।
চসিকের প্রকৌশল বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, প্রকল্পটির আওতায় বিমানবন্দর সড়ককে চার লেনে উন্নীত করার পাশাপাশি ৬০০ মিটার ওভারপাস নির্মাণ করা হবে। ওভারপাস নির্মাণে ব্যয় ধরা হয় ৮৪ কোটি টাকা। এছাড়া দুই হাজার ১০৪ কোটি ৩৯ লাখ টাকায় নগরের ৭৬৯ কিলোমিটার রাস্তার উন্নয়ন, ৫৬ কোটি টাকায় ২২৪ মিটার করে ১৪টি ব্রিজ, ৫৮ কোটি টাকায় ১৫২০ মিটার করে ৩৮টি ফুট ওভারব্রিজ, ১৪ কোটি টাকায় ৮৭ মিটার করে ২২টি কালভার্ট নির্মাণ, ১২ কোটি টাকায় ১০টি গোল চত্বরের উন্নয়ন করা হবে। প্রকল্পের আওতায় ২৯ কোটি ৮০ লাখ টাকায় ১৫টি নির্মাণ যন্ত্রপাতিও ক্রয় করা হবে।