আজ কয়েকদিন যাবত অতি কাছের মানুষগুলোর যেন মৃত্যুর মিছিল শুরু হয়ে গেছে। একটার পর একটা মৃত্যু সংবাদ। গত বৎসর এই দিনের কথাটাই যেন বার বার মনে করিয়ে দিচ্ছে। আমরা হয়তো মনে করেছিলাম ৭১ এর পরাজিত পাক হানাদার বাহিনীর মত করোনা আত্মসমর্পণ করেছে। ফিরতি টিকিট কাটার সময় হয়েছে। বাস্তবতা তার উল্টো। করোনা আবারও ব্রিটিশ বেনিয়াদের মত তার জমিদারী শাসন শুরু করেছে। জীবনযাত্রায় সতর্কতার পরিবর্তে অতি শিথিলতায় মনে হয় আমরা করোনাকে সে সুযোগ করে দিলাম। বৃটিশরা এদেশের মানুষকে চোখ রাঙ্গিয়ে দুইশত বৎসর গোলামীর জিঞ্জির পরিয়ে রেখেছিল। করোনার রাজত্ব কতকাল তা হয়তো আমরা কেউ জানিনা! সারাবিশ্ব কবে আবার তার স্বাভাবিক জীবন ফিরে পাবে তা অনেকটা অনিশ্চিত। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, আমরা সবসময় স্বাভাবিক জীবনের প্রত্যাশা করি, কিন্তু নিজ জীবনে শুদ্ধতা কিংবা পরিবর্তন আনায়নে বিন্দুমাত্র চিন্তা করি না। নিজে সংশোধন হওয়ার চেষ্টা করি না। চোখের সামনে পাশের মানুষটা আজ সকালে চলে গেল। অথচ তার সাথে পাঁচদিন আগেও একসাথে বিয়ে বাড়ীতে বসে গভীর রাত অবধি সময় কাটিয়েছিলাম। হয়তো ভাবি আমার বোধহয় এখনও অনেক সময় আছে। সে আক্রান্ত হয়েছে বলে আমি আক্রান্ত হবো এমনতো কোন কথা নেই। আমিতো সবসময় সতর্ক আছি। তার হয়তো হার্টের সমস্যা ছিল, উচ্চমাত্রার ডায়াবেটিস প্রেসার ছিল, আমারতো তা নেই। আমি মনে হয় আরো অনেকদিন বাঁচবো। তাইতো মানুষের আজও আচার আচরণে কোন পরিবর্তন হয় না।
কাউকে ছোট করে কথা বলা, অবহেলা, অবজ্ঞা, অপমান করার প্রবৃত্তি আজও সমানতালে বহাল আছে। আরেকজনের সম্পত্তি দখল, কেড়ে নেওয়ার মনোবৃত্তি, আরেকজনকে ঠকানোর প্রবৃত্তির কোন কমতি নেই। আবার কারো কারো স্বপ্ন দশ লাখ এককোটি দশকোটিতে সীমাবদ্ধ থাকে। তবে টাকার পেছনে নিরন্তর ছুটে চলার প্রতিযোগিতা যেন মানুষের থেমে নেই। যে যত টাকার মালিকই হোক না কেন, যার যত প্রভাব প্রতিপত্তি থাকুক না কেন এই কঠিন সত্যকে উপেক্ষা করার ক্ষমতা কারো নেই। তাকে এ জগৎ ত্যাগ করতে হবে। কাকে কখন যেতে হবে আমরা তা কেউ জানিনা! তবে সময় যে ঘনিয়ে আসছে এটাই সত্য। এই মাটির ঘর আমাদের জন্য অপেক্ষমান। চলুন আজ থেকে সকল বৈরিতা ত্যাগ করি। মানুষের মনে কষ্ট দেওয়া থেকে বিরত থাকি। সমস্ত হিংসা বিদ্বেষ ঈর্ষাকে ছাইচাপা দিই। মানুষ হয়ে মানুষকে ভালবাসার বন্ধনে আবদ্ধ করি।