চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নবজাতক ওয়ার্ডে শিশু রোগীর মৃত্যুর ঘটনায় অবহেলার অভিযোগ করেছেন শিশুর বাবা। চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত সোমবার রাত ১১টার দিকে ওই শিশুর মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় হাসপাতাল পরিচালক বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন শিশুর বাবা এমরান হোসেন। অভিযোগের প্রেক্ষিতে ঘটনা খতিয়ে দেখতে হাসপাতালের পক্ষ থেকে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। নবজাতক বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. শাহীনের নেতৃত্বে তিন সদস্যের কমিটি গঠনের তথ্য নিশ্চিত করেছেন বিভাগের প্রধান ডা. জগদীশ চন্দ্র দাশ। কমিটিকে তিন দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
শিশুর পরিবার ও নবজাতক ওয়ার্ড সূত্রে জানা যায়– ২০ দিন আগে মা ও শিশু হাসপাতালে জমজ শিশুর জন্ম দেন এমরান হোসেনের স্ত্রী। কিন্তু কম ওজনসহ আরো কিছু জটিলতা ছিল দুই শিশুর। পরবর্তীতে শিশু দুটিকে চমেক হাসপাতালের নবজাতক ওয়ার্ডে নিয়ে আসা হয়। সেখানে চিকিৎসায় কিছুটা উন্নতি হলে দুই শিশুকে বাসায় নিয়ে যান এমরান। তবে ২দিন পর ফের অসুস্থ হয়ে পড়লে ২৬ সেপ্টেম্বর পুনরায় শিশু দুটিকে চমেক হাসপাতালের নবজাতক ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। পরদিন দুই শিশুর একজন মারা যায়। অপর শিশুটিরও রক্তশূন্যতায় অবস্থা খারাপ জানিয়ে রক্ত যোগাড়ের পরামর্শ দেন চিকিৎসক। এমরান হোসেনের অভিযোগ– বিকেল ৩টার দিকে রক্ত যোগাড় করে আনলেও শিশুর শরীরে রক্ত দিতে দেরি করা হয়। তাছাড়া রাত ৯টার দিকে শিশুটি মারা গেলেও তাদের জানানো হয় রাত ১১টার দিকে। এর বাইরে ওয়ার্ডের গার্ড (দারোয়ান) ও অন্যান্য স্টাফের বিরুদ্ধে ওয়ার্ডে প্রবেশ ও বের হতে প্রতিবারই টাকা আদায়ের অভিযোগ করেছেন এমরান।
ওয়ার্ডের চিকিৎসকরা বলছেন– কোন শিশু মারা যাক, তা কোন চিকিৎসকই চান না। ওয়ার্ডের চিকিৎসক–নার্সসহ সংশ্লিষ্ট সকলে আন্তরিক ভাবেই রোগীর সেবা দিতে আপ্রাণ চেষ্টা করেন। এরপরও অনেক সময় অনেক শিশুকে বাঁচানো সম্ভবপর হয়ে উঠেনা। আর মারা গেলেই চিকিৎসক–নার্সসহ ওয়ার্ডের অন্যান্য স্টাফের উপর মারমুখি আচরণ করেন রোগীর আত্মীয়–স্বজন। এ রোগীর ক্ষেত্রেও তাই ঘটেছে। শিশুটি মারা যাওয়ার পর শিশুর পরিবারের সদস্যরা ওয়ার্ডে ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি করেন। সিকিউরিটি ও অন্যান্য স্টাফের সাথে মারমুখি আচরণ করেন। ওয়ার্ডের গেটও ভাঙচুরের চেষ্টাও চালান। যা কাম্য নয় জানিয়ে ওয়ার্ডের একাধিক চিকিৎসক আজাদীকে বলেন, অভিযোগ থাকলে হাসপাতাল প্রশাসনকে জানানোর সুযোগ আছে। অভিযোগ করারও সুযোগ আছে। কিন্তু চিকিৎসক–নার্স বা অন্যান্য স্টাফের উপর মারমুখি আচরণ কাম্য নয়। চিকিৎসা দিতে গিয়ে এরকম পরিস্থিতির শিকার হলে চিকিৎসক–নার্সরা কিভাবে নির্বিঘ্নে চিকিৎসা দেবেন, সে প্রশ্নও করেন চিকিৎসকরা।