নগরের আগ্রাবাদে বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউট (বিএসটিআই) এর চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়ের নবনির্মিত ভবনে গড়ে তোলা পূর্ণাঙ্গ পরীক্ষাগারটি ভোক্তার অধিকার রক্ষার পাশাপাশি চট্টগ্রামের শিল্প ও বাণিজ্যকে বিশ্বব্যাপী প্রতিযোগিতায় এগিয়ে নিয়ে যাবে বলে মন্তব্য করেছেন শিল্প মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান। তিনি বলেন, এখানে মডার্ন টেকনোলজির ব্যবহার করা হবে, যাতে চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীদের আর ঢাকার দিকে তাকিয়ে থাকতে না হয়। তারা যেন এখান থেকে তাদের সেবা পান। এটা শুধু একটি অফিস ভবনই হবে না, এটা চট্টগ্রামসহ দেশের দক্ষিণ–পূর্বাঞ্চলের শিল্প ও বাণিজ্যকে বিশ্বমানের করে গড়ে তুলতে সাহায্য করবে। আমদানি রপ্তানির ক্ষেত্রে গতিশীলতা বৃদ্ধি পাবে। তিনি গতকাল শনিবার সকালে পণ্যের মাননিয়ন্ত্রণ এবং আমদানি ও রফতানি বাণিজ্য সহজীকরণ ও দ্রুততার সাথে সেবা প্রদানের লক্ষ্যে অত্যাধুনিক ল্যাবরেটরিসহ নবনির্মিত বিএসটিআই চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়ের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তার বক্তব্যে এসব কথা বলেন। কার্যালয়টি উদ্বোধন করেন ২০২৪ এর ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানে শহীদ ফয়সাল আহমেদ শান্তর মা মোছা. কহিনুর আক্তার। অনুষ্ঠানে বিশেষ বক্তা ছিলেন ছিলেন সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. ওবায়দুর রহমান–এর সভাপতিত্বে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিএসটিআই এর মহাপরিচালক এস এম ফেরদৌস আলম। বিশেষ বক্তা ছিলেন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম এবং গণপূর্ত অধিদপ্তরের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. শাহজালাল চৌধুরী।
আদিলুর রহমান খান বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর বাংলাদেশের লাইফলাইন। দেশের মোট বাণিজ্যের সিংহভাগ এ বন্দরের মাধ্যমে সংঘটিত হয়। এখানকার শিল্পাঞ্চল, রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা এবং বেসরকারি বিনিয়োগের অপার সম্ভাবনা এই অঞ্চলকে বাংলাদেশের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তিতে পরিণত করেছে। এসময় তিনি বলেন, একটি বন্দর নগর হিসেবে চট্টগ্রামের সম্ভাবনা পুরো কাজে লাগাতে হলে প্রয়োজন আন্তর্জাতিক মানের অবকাঠামো ও সেবা। এই প্রেক্ষাপটে চট্টগ্রামে বিএসটিআইয়ের ১০ তলা বিশিষ্ট আধুনিক ল্যাবরেটরি সমৃদ্ধ ভবন স্থাপন হচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। আদিলুর রহমান খান বলেন, বিএসটিআই দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন, শিল্প–বাণিজ্যের গতিশীলতা এবং ভোক্তা অধিকার সুরক্ষায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে। আজকে এ অত্যাধুনিক ল্যাবরেটরিসহ ১০ তলাবিশিষ্ট ভবন উদ্বোধনের মাধ্যমে বন্দরনগরী চট্টগ্রামে আমদানি রপ্তানির ক্ষেত্রে গতিশীলতা বৃদ্ধি পাবে। পর্যায়ক্রমে চট্টগ্রামে বিএসটিআই’র ল্যাবরেটরিকে স্বয়ংসম্পূর্ণ ল্যাবরেটরি হিসেবে গড়ে তোলা হবে। এর ফলে বিএসটিআই’র সেবার জন্য চট্টগ্রামের মানুষকে ঢাকায় যাওয়ার প্রয়োজন হবে না।
তিনি বলেন, তরুণ প্রজন্মের সততা, ন্যায় বিচার এবং মেধাভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার যে আকাঙ্খা তা আমাদের সবার জন্য এক বিশাল শক্তি ও অনুপ্রেরণার উৎস। তাদের সেই আদর্শকে বাস্তব রূপ দিতে হলে আমাদের প্রত্যেককে নিজ নিজ অবস্থান থেকে সর্বোচ্চ স্বচ্ছতা, সততা এবং জবাবদিহিতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে হবে। বিএসটিআই–এর মতো প্রতিষ্ঠানকে আরো শক্তিশালী ও আধুনিক করার উদ্যোগ সেই প্রত্যয়েরই অংশ।
মোছা. কহিনুর আক্তার বলেন, শান্ত একটি সুন্দর, শোষণমুক্ত ও ন্যায়ভিত্তিক বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখতো। সে চেয়েছিল এই দেশের প্রতিটি নাগরিকের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত হোক, প্রতিটি যুবকের মেধা ও শ্রমের সঠিক মূল্যায়ন হোক। আমার সন্তান যে লক্ষ্য পূরণে শহীদ হয়েছে, সেই লক্ষ্য যেন পূর্ণ হয়। তিনি বলেন, আমি একজন মা, একজন শহীদ জননী। আমার সন্তান আমাকে ছেড়ে চলে গেছে, কিন্তু তার আদর্শ, তার সংগ্রামী চেতনা, আমার হৃদয়ে চিরজাগরুক হয়ে থাকবে।
বিএসটিআই এর মহাপরিচালক এস এম ফেরদৌস আলম বলেন, চট্টগ্রামে অত্যাধুনিক ল্যাবরেটরিসহ ১০ তলা বিশিষ্ট ভবন উদ্বোধন একটি মাইলফলক। আমরা সকল পণ্যের পরীক্ষা এবং সনদ প্রদান এখান থেকে করতে চাই। এর ফলে এ অঞ্চলের ব্যবসায়ী ও সাধারণ ক্রেতারাও উপকৃত হবেন।
শিল্প সচিব মো. ওবায়দুর রহমান বলেন, দেশের ভেতরে মানসম্পন্ন পণ্য উৎপাদন এবং মান সম্পন্ন পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে বিএসটিআই কাজ করে যাচ্ছে। বিভিন্ন দেশের সাথে পণ্যের মান বিষয়ক চুক্তি এবং ল্যাবরেটরিসমূহের এ্যাক্রেডিটেশন অর্জন বিএসটিআইকে আরো শক্তিশালী করেছে। এর ফলে বিদেশে বাংলাদেশি পণ্যের গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
উল্লেখ্য, আগ্রাবাদ জাম্বুরি মাঠের পাশে বিএসটিআই এর নতুন ভবনটি নির্মাণে খরচ হয়েছে প্রায় ৮ কোটি টাকা। এখানে স্থাপিত পরীক্ষাগারটি থেকে চট্টগ্রামে শিল্পপণ্য, বৈদ্যুতিক, খাদ্য ও কৃষিজাত পণ্য, প্রকৌশলসহ মোট ৩১৫টি পণ্যের মান পরীক্ষা করা যাবে। আগে ৯২টি পণ্য পরীক্ষা করা যেত, বাকি পরীক্ষার জন্য ছুটতে হত ঢাকায়। এতে ব্যবসায়ীদের সময় ও অর্থ বেশি খরচ হত।