মামলা দায়ের থেকে শুরু করে রায় ঘোষণাসহ পারিবারিক বিরোধের প্রতিটি ধাপই পরিচালিত হবে অনলাইনে। আদালতে না গিয়ে ঘরে বসেই মিলবে সবরকম সেবা। রাজধানী ঢাকার পর গতকাল চট্টগ্রামেও অত্যাধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর ই–পারিবারিক আদালতের উদ্বোধন হয়ে গেছে। তবে আপাতত নগরীর সদরঘাট, কোতোয়ালী, চকবাজার ও কর্ণফুলী থানা এলাকার বাসিন্দারা এর আওতায় থাকছেন। পরবর্তীতে অন্যান্য এলাকার বাসিন্দারাও এ কার্যক্রমে যুক্ত হতে পারবেন। গতকাল কোর্টহিলের জেলা আইনজীবী সমিতির অডিটরিয়ামে ই–পারিবারিক আদালতের কার্যক্রমের উদ্বোধন হয়।
পারিবারিক বিরোধ দ্রুত, স্বচ্ছ ও কম ঝামেলায় নিষ্পত্তির লক্ষ্যে চালু করা এই ডিজিটাল কোর্টকে দেশের বিচার ব্যবস্থার আধুনিকায়নে এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ হিসেবে অভিহিত করছেন সংশ্লিষ্টরা। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ছিলেন আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগের সচিব লিয়াকত আলী মোল্লা। তিনি বলেন, বর্তমান সরকার বিচার বিভাগকে ডিজিটালাইজেশনের মাধ্যমে জনগণের দোরগোড়ায় সহজ ও সময়োপযোগী সেবা পৌঁছে দিতে বদ্ধপরিকর। ই–ফ্যামিলি কোর্ট তারই বাস্তব রূপ। তিনি আরও জানান, প্রযুক্তিনির্ভর বিচার ব্যবস্থার মাধ্যমে মামলার নিষ্পত্তি দ্রুত হবে এবং বিচারপ্রার্থীদের অযথা ভোগান্তি কমবে। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে চট্টগ্রাম রেঞ্জ ডিআইজি আহসান হাবীব পলাশ বিচার বিভাগে বরাদ্দ বৃদ্ধি এবং অবকাঠামোগত উন্নয়নের বিষয়টি বিশেষভাবে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, বিচার বিভাগের যথাযথ অগ্রগতি নিশ্চিত করতে বাজেট বরাদ্দ বৃদ্ধি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তথ্যপ্রযুক্তি সুবিধা এবং মানবসম্পদ উন্নয়নে বরাদ্দ বাড়ালে বিচার সেবার মান আরও উন্নত হবে। ই–ফ্যামিলি কোর্টের মতো উদ্যোগ তার সঠিক উদাহরণ। তিনি আরও যোগ করেন, জনগণের ন্যায়বিচার প্রাপ্তি সহজ করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সব সংস্থার সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রামের সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ হেমায়েত উদ্দিন। তিনি বলেন, ই–ফ্যামিলি কোর্ট পারিবারিক মামলার ঝামেলা অনেকাংশে কমিয়ে আনবে। ভিডিও কনফারেন্স ও অনলাইন ডকুমেন্ট সাবমিশনের মাধ্যমে বিচার প্রক্রিয়া হবে সহজ, স্বচ্ছ ও সময়োপযোগী।
অনুষ্ঠানে চট্টগ্রাম আইনজীবী সমিতির সভাপতি আবদুস সাত্তারও বক্তব্য রাখেন। তিনি বলেন, প্রযুক্তির সাথে তাল মিলিয়ে বিচার ব্যবস্থাকে এগিয়ে নিতে আইনজীবী সমাজ সর্বাত্মক সহযোগিতা করে যাবে। ই–ফ্যামিলি কোর্টে আইনজীবীদের কাজ আরও গতিশীল হবে এবং বিচারপ্রার্থীরা এর প্রত্যক্ষ সুফল পাবেন।
অনুষ্ঠানে চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক হাসান আলী চৌধুরীসহ উপস্থিত ছিলেন সমিতির কার্যনির্বাহী পরিষদের সিনিয়র সহসভাপতি কাজী মোহাম্মদ সিরাজ, সহসভাপতি আলমগীর মোহাম্মদ ইউনুছ, সহ–সাধারণ সম্পাদক মো. ফজলুল বারী, অর্থ সমপাদক মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন, পাঠাগার সমপাদক তৌহিদুল ইসলাম, সাংস্কৃতিক সম্পাদক আশরাফি বিনতে মোতলেব, তথ্য ও প্রযুক্তি সম্পাদক আবদুল জব্বার, ক্রীড়া সম্পাদক মো. মনজুর হোসেন এবং সমিতির কার্যনির্বাহী কমিটির অন্যান্যরাও। বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তা, আইনজীবী ও প্রশাসনের বিভিন্ন কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টরাও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। ই–ফ্যামিলি কোর্ট উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে চট্টগ্রামের বিচার ব্যবস্থায় একটি নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হয়েছে উল্লেখ করে বক্তারা আশা প্রকাশ করেছেন যে, ভবিষ্যতে দেশের অন্যান্য জেলায়ও এ কার্যক্রম বিস্তৃত হবে। প্রসঙ্গত, পারিবারিক বিরোধ সংক্রান্ত বিরোধ সহজে ও ভোগান্তিহীন নিষ্পত্তির লক্ষ্যে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয় ‘ই–পারিবারিক কোর্ট’ প্রকল্প গ্রহণ করে। এরই ধারাবাহিকতায় গত ২৪ নভেম্বর ঢাকায় এ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন আইন উপদেষ্টা।









