বাংলাদেশের উপকূল থেকে ৬০০ কিলোমিটার দূরে বঙ্গোপসাগরে পাক খেতে থাকা ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’ ঘণ্টায় চার কিলোমিটার গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে উত্তর উত্তর-পশ্চিমে, ভারতের ওড়িশা আর পশ্চিমবঙ্গ উপকূলের দিকে।
এদিকে টানা কয়েক দিনের তাপপ্রবাহের মধ্যে ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে বাতাসে আর্দ্রতা বেড়ে যাওয়ায় অসহনীয় গরম অনুভূত হচ্ছে সারা দেশে। বিডিনিউজ
আবহাওয়া অফিস বলছে, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে বৃষ্টি শুরু হলে আগামীকাল মঙ্গলবার (২৫ মে) থেকে গরমের তীব্রতা ধীরে ধীরে কমে আসতে পারে।
পূর্ব মধ্য বঙ্গোপসাগরের বর্তমান অবস্থান থেকে উত্তর উত্তর-পশ্চিম দিকে এগিয়ে বুধবার প্রথম প্রহরে ওড়িশার উত্তর উপকূল এবং পশ্চিমবঙ্গ উপকূলের কাছাকাছি পৌঁছাতে পারে ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’
আগামী বুধবারই (২৬ মে) ঘূর্ণিঝড়টি ওড়িশ-পশ্চিমবঙ্গ-খুলনা এলাকা দিয়ে উপকূল অতিক্রম করতে পারে বলে মনে করছেন বাংলাদেশের আবহাওয়াবিদরা।
ভারতীয় আবহাওয়া অফিস বলছে, অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড়ের আকারে ইয়াস বুধবার দুপুর নাগাদ পশ্চিমবঙ্গের পারাদ্বীপ ও সাগরদ্বীপের মাঝামাঝি এলাকা দিয়ে উপকূল অতিক্রম করতে পারে। সে সময় বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ হতে পারে ঘণ্টায় ১২৫ কিলোমিটার।
ঘূর্ণিঝড়ের কারণে সাগর বিক্ষুব্ধ থাকায় চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ২ নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সংকেত দেখিয়ে যেতে বলেছে বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদপ্তর।
উত্তর বঙ্গোসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।
আবহাওয়াবিদ খন্দকার হাফিজুর রহমান জানান, আজ সোমবার (২৪ মে) বেলা ১২টায় ঘূর্ণিঝড়ের অবস্থান ছিল চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর থেকে ৬৭৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ পশ্চিমে; কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৬০৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ পশ্চিমে; মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৬৫০ কিলোমিটার দক্ষিণে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৬০৫ কিলোমিটার দক্ষিণে।
ওই সময় ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৫৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৬২ কিলোমিটার যা দমকা বা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ৮৮ কিলোকিমটার পযন্ত বাড়ছিল।
“অনুকূল পরিস্থিতির কারণে ঘূর্ণিঝড়টি আরও ঘনীভূত হয়ে উত্তর-উত্তর পশ্চিমে অগ্রসর হতে পারে। ২৬ মে বুধবার ভোর নাগাদ উত্তর উড়িষ্যা-পশ্চিমবঙ্গ-খুলনা উপকূলের কাছ দিয়ে উত্তর পশ্চিম বঙ্গোপসাগর এলাকায় পৌঁছাতে পারে,” বলেন হাফিজুর রহমান।”
গরম কমার অপেক্ষা
জ্যৈষ্ঠের প্রথম সপ্তাহে টানা কয়েকদিন ধরে মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে দেশের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে। এরই মধ্যে সাগরে লঘুচাপ সৃষ্টির পর গরমের তীব্রতা বেড়েছে শনিবার থেকে।
শনিবারই আন্দামান সাগরে একটি লঘুচাপের সৃষ্ট হয়, যা ক্রমান্বয়ে শক্তি সঞ্চয় করে সুস্পষ্ট লঘুচাপ, নিম্নচাপ ও গভীর নিম্নচাপের ধাপ পেরিয়ে সোমবার ভোরে ঘূর্ণিঝড়ের রূপ পায়।
গত এক দিনে দেশের কোথাও কোথাও সামান্য বৃষ্টি হয়েছে। আবার অধিকাংশ জায়গায় মেঘলা আবহাওয়ায় ভ্যাপসা গরম অনুভূত হচ্ছে।
আবহাওয়াবিদ আবদুল হামিদ জানান, সোমবার রংপুর, রাজশাহী, খুলনা, ময়মনসিংহ, ঢাকা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে।
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে দেশের সর্বোচ্চ ৩৮.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রয়েছে ৩৭.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সকালে বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৭৬%, তাতেই গরমের অনুভূতি আরও বেড়েছে।
থার্মোমিটারের পারদ চড়তে চড়তে যদি ৩৬ থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে ওঠে, আবহাওয়াবিদরা তাকে মৃদু তাপপ্রবাহ বলেন। উষ্ণতা বেড়ে ৩৮ থেকে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে তাকে বলা হয় মাঝারি তাপপ্রবাহ। আর তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি ছাড়িয়ে গেলে তাকে তীব্র তাপপ্রবাহ ধরা হয়।
আবহাওয়াবিদ হামিদ বলেন, “এমনিতেই দেশে তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে, তার ওপর সাগরে একটা সিস্টেম চলমান রয়েছে; ফলে বাতাসে আর্দ্রতা বেশি। সে কারণে গরমের অনুভূতি বেশি হচ্ছে। আজও এমন ভ্যাপসা গরম অব্যাহত থাকবে। তবে মঙ্গলবার থেকে কয়েকদিন তাপমাত্রা কমতে থাকবে। এ সময় বৃষ্টি ও বজ্রবৃষ্টির পরিমাণও বাড়বে।”
পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে- ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং রংপুর, রাজশাহী ও ময়মনসিংহ বিভাগের দুয়েক জায়গায় অস্থায়ী দমকাসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারি বর্ষণ হতে পারে।
গত ২৪ ঘণ্টায় কক্সবাজারে সর্বোচ্চ ২৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এছাড়া গোপালগঞ্জ, কুতুবদিয়া, খুলনা, সাতক্ষীরা, খেপুপাড়াসহ কয়েকটি জায়গায় হালকা বৃষ্টি হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় ইয়াস উপকূলের দিকে এগিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে সরকারের তরফ থেকেও দুর্যোগকালীন প্রস্তুতি এগিয়ে নেওয়া হচ্ছে। তবে ঝড়ের এখনকার গতিপথ ঠিক থাকলে বাংলাদেশের ক্ষতির ঝুঁকি কম হবে বলে আশা করছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান।
আজ সোমবার সচিবালয়ে ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি বিষয়ে একটি সভা হয়। আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক সামছুদ্দিন আহমেদও তাতে অংশ নেন।
সভা শেষে প্রতিমন্ত্রী বলেন, “এটি এখনও অতটা শক্তিশালী হতে পারেনি।.. উত্তর-পশ্চিম অংশে সরাসরি ওড়িশার দিকে এর গতিপথ। যদি এই গতিপথ একই রকম থাকে তবে বাংলাদেশে উপকূলে ক্ষতির কোনো প্রভাব হবে না বলে আমরা আশা করছি।”
ঝড়ের গতিবিধির ওপর নজর রাখা হচ্ছে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, “যদি কোনো কারণে এটা দিক পরিবর্তন করে উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম দিকে আসে, তবে আমরা যেন মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে আসতে পারি, আশ্রয়কেন্দ্রগুলো প্রস্তুত করা হয়েছে।”