এগারো বছর আগে ঢাকার মতিঝিলে হেফাজতের সমাবেশে ‘গণহত্যার’ অভিযোগে তখনকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৩৪ জনের বিরুদ্ধে মামলার আবেদন তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে আদালত। ঢাকার মহানগর হাকিম জাকী–আল ফারাবী গতকাল রোববার আবেদনকারীর জবানবন্দি শুনে মতিঝিল থানার ওসিকে ওই অভিযোগ তদন্তের নির্দেশ দেন। খবর বিডিনিউজের।
বাংলাদেশ পিপলস পার্টির (বিপিপি) চেয়ারম্যান বাবুল সরদার চাখারী এদিন মামলার ওই আবেদন করেন। সম্প্রতি ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পাশাপাশি আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা ও নিরাপত্তা বাহিনীর কর্মকর্তাদের আসামি করার আর্জি জানানো হয়েছে তার আবেদনে।
সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, সাবেক মন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ, তৎকালীন আইজিপি হাসান মাহাবুব খন্দকার, তৎকালীন র্যাবের প্রধান এ কে এম শহিদুল হক, তৎকালীন ডিসি মোহাম্মদ বিপ্লব কুমার সরকার, মতিঝিল থানার তৎকালীন ওসি ওমর ফারুক, সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর মনসুর আহমেদ, মতিঝিল থানা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মাহবুবুল হক হিরণের নাম রয়েছে ওই তালিকায়।
পাশাপাশি আওয়ামী লীগের বর্তমান প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর ইমরান, মোহাম্মদ সাঈদ, সদ্য সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম, সাবেক সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদ, আকরাম হোসেন, সাবেক কাউন্সিলর ফারজানা আক্তার ডলি, আওয়ামী লীগ নেত্রী মমতাজ পারভীন, ওয়ার্ড কাউন্সিলর আনিসুর রহমান সরকার, আওয়ামী লীগের আলমগীর হোসেন, মতিঝিল থানার ওসি রমান আলী বিশ্বাস, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান শেখ সালাউদ্দিন সালু, তৎকালীন সামরিক উপদেষ্টা তারেক সিদ্দিকী, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, মতিঝিল বিভাগের ডিসি মোহাম্মদ নাজমুল আলম, মেজর ইকবাল, মতিঝিল বিভাগের ডিসি মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান, এনএসআইয়ের সাবেক প্রধান জিয়াউল আহসান, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ফজলে নূর তাপস, মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেন, সাবেক তথ্যমন্ত্রীর এপিএস মোহাম্মদ এমদাদুল হক ও শেখ শাহে আলম তালুকদারকে আসামি করার কথা বলা হয়েছে আর্জিতে।
নারী উন্নয়ন নীতি ও শিক্ষা নীতির বিরোধিতা করে ২০১০ সালে গড়ে উঠেছিল কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম। তবে যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে গণজাগরণ আন্দোলনের পাল্টায় রাজপথে নেমে সংগঠনটি বেশি পরিচিতি পায়। শাহবাগের আন্দোলনের বিপরীতে ব্লগারদের শাস্তির দাবিতে ২০১৩ সালের ৫ মে মতিঝিলে সমাবেশ ডাকে সংগঠনটি। সেই সমাবেশ ঘিরে পুরো মতিঝিল এলাকায় ব্যাপক সহিংসতা আর তাণ্ডব চলে। পরে সেই রাতে যৌথ অভিযান চালিয়ে তাদের মতিঝিল থেকে সরানো হয়।
মামলার আবেদনে বলা হয়, ওই রাতে শেখ হাসিনার মদদে অন্য আসামিরা রাস্তা ও বিদ্যুৎ লাইন বন্ধ করে দিয়ে নিরীহ মাদ্রাসা ছাত্র ও পথচারীদের ওপর গণহত্যা চালায়। তারা সিটি করপোরেশনের গাড়ি এনে লাশগুলো অজ্ঞাত স্থানে গুম করে ফেলে। বাদী বলেছেন, আওয়ামী লীগ সরকার দীর্ঘদিন বিনা ভোটে ক্ষমতায় থাকার কারণে এবং আসামিরা সরকারি ও দলীয় লোকজন হওয়ায় মামলা করতে এত দেরি হয়েছে।
শাপলা চত্বরের অভিযানে ৬১ জন নিহত হন বলে সে সময় এক প্রতিবেদনে দাবি করে মানবাধিকার সংগঠন ‘অধিকার’। যদিও পুলিশের দাবি, রাতের অভিযানে কেউ মারা যাননি, আর দিনভর সংঘাতে নিহতের সংখ্যাটি ১১।
অধিকারের প্রতিবেদনে প্রকাশিত সংখ্যাটি নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি হলে ওই বছরের ১০ আগস্ট গুলশান থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করে গোয়েন্দা পুলিশ। পরে জিডিটি মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করা হয়। ওই মামলায় বিএনপি–জামায়াত জোট সরকার আমলে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেলের দায়িত্বে থাকা অধিকার সম্পাদক আদিলুর রহমান খান ও পরিচালক এ এস এম নাসির উদ্দিন এলানের দুই বছরের কারাদণ্ড হয় গত বছরের ১৪ সেপ্টেম্বর। এক মাস জেলে ধাকার পর তারা জামিনে মুক্তি পান। আদিলুর রহমান খান বর্তমানে অন্তর্বর্তী সরকারের শিল্প মন্ত্রণালয় এবং গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার দায়িত্বে আছেন।