খুন হয়েছেন সাগর-রুনি, হত্যায় অংশ নেন ২ জন

টাস্কফোর্সের প্রতিবেদন

| রবিবার , ৪ মে, ২০২৫ at ৬:২১ পূর্বাহ্ণ

বহুল আলোচিত সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি আত্মহত্যা করেননি, তারা খুন হয়েছেন। তাদের হত্যাকাণ্ডে অংশ নেয় দুই জন। তবে ডিএনএ অস্পষ্টতার কারণে এ দুজন হত্যাকারী কারা তা সনাক্ত করা যাচ্ছে না। সমপ্রতি হাইকোর্টে অগ্রগতি প্রতিবেদন জমা দিয়েছে আলোচিত এ মামলাটির তদন্তে গঠিত টাস্কফোর্স। এটি এও বলেছে, তদন্তের জন্য আরও সময় লাগবে। খবর বাংলানিউজের।

প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, টাস্কফোর্স তাদের তদন্তে সাগররুনির দাম্পত্য কলহ, চুরি বা পেশাগত কারণে খুনের তথ্য পায়নি। ভিসেরা রিপোর্টেও চেতনানাশক বা বিষজাতীয় কিছু পাওয়া যায়নি। রান্না ঘরে থাকা ছুরি ও বটি দিয়ে হত্যা করা হয় তাদের। ক্ষত নিয়েও অনেকক্ষণ জীবিত ছিলেন তারা। আগে থেকে বাসায় কেউ ছিল না, আর জোর করেও কেউ প্রবেশ করেনি।

প্রসঙ্গত, ২০২৪ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর হাইকোর্ট স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে র‌্যাবের কাছ থেকে সাগররুনি হত্যার তদন্তের দায়িত্ব সরিয়ে বিভিন্ন আইন প্রয়োগকারী সংস্থার অভিজ্ঞ কর্মীদের সমন্বয়ে গঠিত একটি নতুন টাস্কফোর্সের কাছে হস্তান্তরের নির্দেশ দেন। র‌্যাব ২০১২ সালে মামলাটির দায়িত্ব নেওয়ার পর বছরের পর বছর ধরে তদন্তে অগ্রগতি না হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট থেকে এমন নির্দেশ দেয়া হয়। এর পর নবগঠিত টাস্কফোর্সকে চলতি বছরের ৩১ মার্চের মধ্যে তদন্ত সম্পন্ন করে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দিলেও এখনো তদন্ত শেষ করতে পারেনি তারা। এখন পর্যন্ত নতুন করে ৭ সাংবাদিকসহ ১২ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে টাস্কফোর্স।

তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাত ৩টা থেকে ৫টার মধ্যে খুন হন সাগররুনি। ডিএনএ পরীক্ষার রিপোর্ট পর্যালোচনা করে বোঝা যায়, প্রথমে সাগর ও পরে ছুরিকাঘাত করা হয় রুনিকে। হত্যার আগে সন্তান মেঘকে নিয়ে একই খাটে শুয়ে ছিলেন তারা।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, হত্যায় সাগর বাধা দিতে পারেনএমন ধারণায় তার হাতপা বাঁধা হয়। রুনি নারী হিসেবে দুর্বল চিন্তা করে তার হাতপা বাঁধার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়নি। ‘ব্লাড প্যাটার্ন’ পর্যবেক্ষণ করে ধারণা করা হয়, আগে মারা গেছেন রুনি। আর বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ করে সমীকরণ মিলিয়ে টাস্কফোর্স বলছে, সাগরের মৃত্যু হয়েছে পরে।

ঘটনাস্থলে চারজনের ডিএনএ পাওয়া যায়। এর মধ্যে তিনজন পুরুষ ও একজন নারী। যাদের মধ্যে দুজন সাগররুনি, তবে অন্য দুজনের ডিএনএ কোনোভাবেই সনাক্ত করতে পারেনি টাস্কফোর্স। তাই হত্যার মোটিভ ও খুনে কারা জড়িত সে বিষয়টিও এখন পর্যন্ত সুনির্দিষ্ট করা যায়নি। এ কারণে তদন্তে আরও সময় চেয়েছে টাস্কেফোর্স।

টাস্কফোর্সের রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, সেদিন (হত্যার রাতের পরদিন সকাল) গোয়েন্দা কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে পৌঁছান সকাল সাড়ে ১০টা থেকে ১১টার মধ্যে। এর আগে গণমাধ্যমকর্মী ও স্থানীয়দের পায়ের ছাপে ধ্বংস হয়ে যায় অনেক আলামত। তবে রান্না ঘরের বারান্দার সাড়ে ১৪ ইঞ্চি ও সাড়ে ৮ ইঞ্চির ভাঙা অংশটি সম্পূর্ণ নতুন ছিল। তা দিয়ে সহজে মানুষ ঢুকতে ও বের হতে পারে। যদিও সেখানকার পূর্ণাঙ্গ ফুটপ্রিন্ট পাওয়া যায়নি।

এদিকে সিআইডির সঙ্গে ডিএনএ বিশ্লেষণ করে টাস্কফোর্স জানায়, একসঙ্গে দুই বা তিনজনের ডিএনএ থাকলে শনাক্ত করা সম্ভব। সংখ্যায় এর বেশি হলে শনাক্ত করা কঠিন। নমুনায় ৫ থেকে ৬ জনের ডিএনএ থাকায় তা শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি।

উল্লেখ্য, ২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রাতে রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারে সাংবাদিক দম্পতি মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক সাগর সরওয়ার এবং এটিএন বাংলার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মেহেরুন রুনি তাদের ভাড়া বাসায় খুন হন। আলোচিত এ হত্যাকাণ্ডের পর রুনির ভাই নওশের আলম বাদী হয়ে শেরেবাংলা নগর থানায় মামলা করেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসমকালের দর্পণ
পরবর্তী নিবন্ধবেওয়ারিশ মানবসেবা বৃদ্ধাশ্রমে মানবিক সহায়তা প্রদান