ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে চলা গাজা যুদ্ধের এক বছর পূর্ণ হচ্ছে সোমবার। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে গাজার ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের নজিরবিহীন হামলার মধ্য দিয়ে এই যুদ্ধের সূত্রপাত হয়েছিল। খবর বিডিনিউজের।
এক বছরে ইসরায়েলের অবিরাম হামলায় ফিলিস্তিনি ছিটমহলটির ৪১ হাজারেরও বাসিন্দা নিহত হওয়ার পাশাপাশি ভূখণ্ডটি প্রায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, সেখানে ধ্বংস হয়ে যাওয়া অট্টালিকাও এখনও দাড়িয়ে আছে কিন্তু ক্ষতিগ্রস্ত এমন ভবনগুলোর ধ্বংসস্তূপের পরিমাণ চার কোটি ২০ লাখ টনেরও বেশি হবে।
জাতিসংঘ জানিয়েছে, এসব ধ্বংসস্তূপ ২০০৮ থেকে গত বছর যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগ পর্যন্ত গাজা ভূখণ্ডে সঞ্চিত আবর্জনার ১৪ গুণ এবং ২০১৬–১৭ সালে ইরাকের মসুলে হওয়া যুদ্ধের ধ্বংসস্তূপের পাঁচ গুণের বেশি। এসব ধ্বংসস্তূপ একসঙ্গে জড়ো করে স্তূপীকৃত করা হলে তা দিয়ে মিশরের বৃহত্তম পিরামিডটিকে (গিজার মহা পিরামিড) ১১ বার ভরে দেওয়া যাবে।
আর এই ধ্বংস্তূপ প্রতিদিনই বাড়ছে। রয়টার্স জানায়, গাজার খান ইউনিসে এপ্রিলে ইসরায়েলের বিমান হামলায় ধ্বংস হয়ে যাওয়া তাদের দোতলা বাড়ির ছাদের ভেঙে পড়া খণ্ডগুলো জড়ো করে আরও ছোট ছোট টুকরায় পরিণত করছিলেন ১১ বছর বয়সী মোহাম্মদ, তার বাবা এগুলো গাজা যুদ্ধে নিহতদের কবরে ব্যবহার করবেন।
মোহাম্মদের বাবা সাবেক নির্মাণ কর্মী জিহাদ শামালি (৪২) বলেন, আমরা এসব ধ্বংসস্তূপ সংগ্রহ করছি বাড়ি বানানোর জন্য না, এগুলো কবর ও কবরের পাথর হিসেবে ব্যবহার করবো। এক দুঃখকে আরেক দুঃখের কাজে লাগাচ্ছি।
যে কাজ তারা করছেন তা অত্যন্ত কষ্টসাধ্য, কখনও কখনও মারাত্মক। মার্চে গৃহস্থলী কাজ করার সময় শামালির এক ছেলেকে হত্যা করা হয়েছিল। এখন পরিবারটি ওই নিহতদের কবরে একটি সমাধি তৈরি করছে।
হামাসকে ধ্বংস করতে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী গাজায় যে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে এটি তার অত্যন্ত ক্ষুদ্র একটি অংশ। তবু গাজাবাসীরা হয়তো এভাবেই তাদের বিপুল ধ্বংসস্তূপের মোকাবেলা করতে শুরু করেছেন।
জাতিসংঘের তিন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এসব ধ্বংসস্তূপ নিয়ে কী করা যায় তা নিয়ে জাতিসংঘ গাজার কর্তৃপক্ষকে সাহায্য করার চেষ্টা করছে। জাতিসংঘের নেতৃত্বাধীন একটি ধ্বংসাবশেষ ব্যবস্থাপনা ওয়ার্কিং গ্রুপ ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষগুলোকে সঙ্গে নিয়ে চলতি মাসেই খান ইউনিস ও গাজার মধ্যাঞ্চলীয় দিয়ের এল–বালাহয় রাস্তার পাশের আবর্জনা পরিষ্কার করার একটি পাইলট প্রকল্প শুরু করছে।