কিয়োটা থেকে বাকু কেউ কথা রাখেনি!

এমরান হোসাইন | মঙ্গলবার , ১৯ নভেম্বর, ২০২৪ at ৮:৪১ পূর্বাহ্ণ

২০০১ সাল প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশজাপানে অনুষ্ঠিত ‘কিয়োটা প্রটোকল’কে ছুড়ে ফেলেছিলেন, যেখানে বৈশ্বিক উষ্ণায়নের জন্য দায়ী গ্রিনহাউজ গ্যাসের নিঃসরণ হ্রাসে শিল্পোন্নত দেশগুলোর জন্য একটি সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নির্ধারণ করে দিয়েছিল। ইতোমধ্যে ট্রাম্প প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, যেমনটি তিনি তার প্রথম মেয়াদে করেছিলেন।

ট্রাম্প চুক্তিটিকে ‘সম্পূর্ণ বিপর্যয়’ বলে অভিহিত করেছেন। তবে তাঁর প্রশাসন জীবাশ্ম জ্বালানী শিল্পকে লক্ষ্য করে আরও কয়েক ডজন জলবায়ু নীতির সাথে মিথেন নিয়ম বাতিল করবে বলে আশা করা হচ্ছে। ট্রাম্পের পরিকল্পনায় বিশ্বের জলবায়ু লক্ষ্যগুলিকে হুমকির মুখে ফেলে জীবাশ্ম জ্বালানি কোম্পানিগুলির মুনাফা বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে বলে খোদ যুক্তরাষ্ট্রে সমালোচনা সক্রিয়। এদিকে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত বাকু সম্মেলনেপরিবেশ সুরক্ষা সংস্থার কর্মকর্তারা একটি নতুন নিয়ম চূড়ান্ত করে ঘোষণা করেছেনপৃথিবীর শিল্পোন্নত দেশগুলোর তেল ও গ্যাস কোম্পানিগুলিকে (মিথেনের নির্গমন) একটি শক্তিশালী গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গত করার জন্য প্রথমবারের মতো ফি দিতে হবে। ২০২৪ সালে প্রতি মেট্রিক টন নির্গমনের ফি ৯০০শ ডলার থেকে শুরু যা ২০২৫এ ১২০০শ ডলার এবং ২০২৬এ ১৫০০ডলারএ বৃদ্ধি পাবে। ফি ২০৩৫ সাল পর্যন্ত কার্যকর থাকবে। ইউ এস এনভায়নরমেন্ট প্রটেকশন এজেন্সির প্রশাসক মাইকেল রেগান মঙ্গলবার বলেছেন, এটি তেল ও গ্যাস সেক্টরে দক্ষতা বাড়াবে, আমেরিকান চাকরির ক্ষেত্র বাড়বে, বিশুদ্ধ বাতাস রক্ষা করবে এবং বিশ্ব মঞ্চে মার্কিন নেতৃত্বকে শক্তিশালী করবে। এতে ১.২ মিলিয়ন মেট্রিক টন মিথেন বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করতে বাধা দেবে।

আন্তর্জাতিক শক্তি সংস্থার মতে, শিল্প বিপ্লব শুরু হওয়ার পর থেকে বিশ্বব্যাপী তাপমাত্রা বৃদ্ধির প্রায় এক তৃতীয়াংশের জন্য মিথেন দায়ী। যদিও এটি কার্বন ডাই অক্সাইডের চেয়ে অনেক দ্রুত ভেঙে যায়, তবে এটি স্বল্পমেয়াদে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রায় ৪০ গুণ বেশি তাপ আটকে যায়। কপ২৯ সভাপতি মুখতার বাবায়েভ প্রতিনিধিদের বলেছেনআমরা ভুল পথে এগুচ্ছি। গ্লাসগোতে বিশ্ব জলবায়ু আলোচনায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন গ্লোবাল মিথেন প্রতিশ্রুতি চালু করার তিন বছর পরও বিশ্বের বৃহত্তম মিথেন নির্গমনকারীচীন, ভারত এবং রাশিয়াসহএখনও স্বাক্ষর করতে পারেনি। যার ফলে বায়ুমণ্ডলে মিথেনের ঘনত্ব ক্রমাগত বাড়তে থাকে, যার কোনো শেষ দেখা যায় না। গ্লোবাল মিথেন প্রতিশ্রুতি চালু হওয়ার পর থেকে মিথেন নির্গমন আরও বেড়েছে।

সাম্প্রতিক বছরগুলিতে স্যাটেলাইট পরিমাপগুলি প্রকাশ করেছে যে মিথেন নির্গমন ২০২০ এবং ২০২৩ এর মধ্যে অতিরিক্ত ৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে, চীন, দক্ষিণ এশিয়া এবং মধ্যপ্রাচ্যে সবচেয়ে বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। শুধুমাত্র ইউরোপীয় ইউনিয়নই গত দুই দশকে অর্থপূর্ণভাবে মিথেন নির্গমন কমিয়েছে। প্রসঙ্গত বৈশ্বিক উষ্ণায়ন বিবেচনায় কার্বনডাই অঙাইডের চেয়েও বেশি ক্ষতিকর হাইড্রোফ্লুরোকার্বন। কিন্তু এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই, যদি ট্রাম্পের নতুন আমেরিকা আগের অবস্থানে থাকেতাহলে দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ গ্রিনহাউজ গ্যাস নি:সরণকারী দেশটি আর কোন নিয়মতান্ত্রিক খেলায় আইনী কাঠামোয় ফিরে আসবে না। বিশ্বের সর্বোচ্চ গ্রিনহাউজ গ্যাস নি:সরণকারী দেশ চীনের চুক্তি ভঙের আশঙ্কা ক্ষীণ। যেহেতু চীন তাঁর দেশে দূষণ ও নি:সরণ হ্রাসে ব্যাপকভাবে কর্মসুচী চালিয়ে রেখেছে। ভ

ারতের সামনে রয়েছে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত নানাবিধ ঝুঁকি ও সমস্যা। মৌসুমী বায়ুর ওপর প্রভাব, আবহাওয়ার চরম বৈরী আচরণ, সাতহাজার কিলোমিটার উপকূলীয় এলাকায় সমুদ্রপৃষ্টের উচ্চতা বৃদ্ধি, বনাঞ্চল ধ্বংসের প্রভাবে ভূমিধসযা বনায়ন কাযক্রমের মাধ্যমে এর ক্ষতিপূরণ সম্ভব নয়, হিমালয়ের অধিকাংশ এলাকার হিমবাহ গলে যাওয়াভাঙনে ভাটি অঞ্চল বাংলাদেশেও এর চরম প্রভাবে নদীর গতিপথ অস্তিত্বের সম্মুখীন হবে। এক্ষেত্রে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় বাংলাদেশের জাতীয় পরিকল্পনায় দ্রুত সৌরশক্তিতে সক্ষমতা অর্জন জরুরি। গিগাওয়াটের পিছনে না ছুটে কিলোওয়াটের দিকে মনোনিবেশ সময়ের প্রয়োজন। বিদ্যুৎ উৎপাদন ও বিতরণ প্রক্রিয়ায় বিকেন্দ্রীকরণের মাধ্যমে সামাজিক রূপান্তর সম্ভব। কয়লাভিত্তিক উৎপাদন প্রযুক্তি যুক্ত হলেও আগামী দশকের মধ্যে এর ব্যবহারের বিষয়টি জাতীয় বোঝা হিসেবে দেখা দিতে পারে। সবদিক বিবেচনায় এনে আমাদের মত ছোটছোট দেশে সর্বস্তরে পরিবেশ আইন কার্যকর করা উচিত। বৈশ্বিক উষ্ণায়ন নিয়ন্ত্রণে বৈশ্বিক লক্ষ্য অর্জনে আঞ্চলিক ও বিশ্বপরিসরে যোগাযোগ এবং সহযোগিতার বিকল্প নেই।

পূর্ববর্তী নিবন্ধরেলক্রসিং-এ নিরাপদ ব্যবস্থা চাই
পরবর্তী নিবন্ধআলো আঁধারের বোঝাপড়া