কালো পোশাক পরা বাবুল আক্তারের নাটক বলে মন্তব্য করেছেন সাত বছর আগে নগরীর ও আর নিজাম রোডে ছুরিকাঘাত ও গুলিতে নিহত মাহমুদা খানম মিতুর মা শাহিদা মোশাররফ। ‘বাবুল মিতুকে এখনো হৃদয়ে ধারণ করেন। মিতু মারা যাওয়ার পর বাবুল শোক প্রকাশে কালো ব্যতীত কোনো পোশাক পরেনি– এ বিষয়ে আপনার বক্তব্য কী!’ জেরা করার সময় বাবুল আক্তারের আইনজীবী কফিল উদ্দিনের এমন প্রশ্নের উত্তরে শাহিদা এ মন্তব্য করেন। গতকাল বুধবার মিতু খুনের মামলায় মিতুর মা শাহিদা মোশাররফকে দ্বিতীয় দফায় সাড়ে পাঁচ ঘণ্টা জেরা করা হয়। বেলা সাড়ে ১১টায় শুরু হয়ে বিকেল ৫টা পর্যন্ত চলে এ জেরা। কিন্তু এরপরও শেষ হয়নি। আজ বৃহস্পতিবারও তাকে জেরা করা হবে।
শাহিদাকে আইনজীবী কফিল উদ্দিনের প্রশ্ন ছিল, বর্তমান স্ত্রীকে বাবুল বিয়ে করেছে কোনো সন্তান নিবে না এবং দুই সন্তানকে নিজের সন্তানের মতো মানুষ করবে। এ বিষয়ে আপনার বক্তব্য কী! উত্তরে তিনি বলেন, আমি জানি না। আইনজীবী প্রশ্ন করেন, বর্তমান স্ত্রীর সাথে বাবুলের ১০১ টাকার কাবিনে বিয়ে হয়। জানেন কিনা! উত্তরে শাহিদা বলেন, আমি জানি না।
‘গায়ত্রী ও বাবুলকে কক্সবাজারের হোটেলে মিতু আপত্তিকর অবস্থায় দেখেছে’ আদালতে দেওয়া সাক্ষ্যে বলেছেন শাহিদা। এ বিষয়ে তাকে প্রশ্ন করা হলে উত্তরে তিনি বলেন, বাবুল ২০১৩ সালের শেষে গায়ত্রীর সঙ্গে পরকীয়ায় জড়িত হয়। তারিখ বলতে পারব না। বাবুল কক্সবাজারে কোন বছর থেকে কোন বছর চাকরি করেছেন স্মরণ নাই। গায়ত্রী কোন বছর থেকে কোন বছর কক্সবাজার ছিল বলতে পারব না। গায়ত্রীকে কখনো দেখিনি। গায়ত্রী তার ছেলেসহ থাকত। ছেলে আইয়ুশের বয়স ৭ বছর। স্বামী মাঝে মাঝে আসত। গায়ত্রী মিতু ও বাবুল কক্সবাজারে একত্রে হোটেলে উঠার তারিখ বলতে পারব না। ঐদিন গায়ত্রীর হোটেল রুমে বাবুল ও গায়ত্রী ছাড়া আর কেউ ছিল না। গায়ত্রীর ছেলে কোথায় ছিল জানি না। হোটেলটার নাম, তা কয়তলা, রুম নম্বর কিছুই বলতে পারব না।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর কেশব নাথ আজাদীকে এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, গত মঙ্গলবারও শাহিদা মোশাররফকে তার দেওয়া সাক্ষ্য বিষয়ে আংশিক জেরা করা হয়। আজকে (গতকাল) মনে করেছি শেষ হবে। কিন্তু তা হয়নি। বৃহস্পতিবারও তাকে আসামি পক্ষের আইনজীবীরা জেরা করবেন। কেশব নাথ বলেন, গত মঙ্গলবার শাহিদা মোশাররফ ও পাঁচলাইশ থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মহিউদ্দিন মাহমুদ সাক্ষ্য দেন। সেদিনই মহিউদ্দিন মাহমুদকে জেরা সম্পন্ন করেন আসামি পক্ষের আইনজীবীরা। কেশব নাথের সাথে রাষ্ট্রপক্ষে আরো ছিলেন অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর দুলাল দেবনাথ ও প্রবীর ভট্টাচার্য।
আদালতসূত্র জানায়, আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা ইউএনএইচসিআর’র এক কর্মীর সঙ্গে পরকীয়ায় জড়িয়ে স্ত্রী মিতুকে খুন করিয়েছেন সাবেক এসপি বাবুল আক্তার নিজেই, এমনটা উল্লেখ করে গত বছরের ১৩ সেপ্টেম্বর বাবুল আক্তারসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে ২০৮৪ পৃষ্ঠার ডকেট ও ২০ পৃষ্টার চার্জশিট দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই পরিদর্শক আবু জাফর মো. ওমর ফারুক। বাবুল ছাড়া চার্জশিটভুক্ত বাকি ৬ জন হলেন মোতালেব মিয়া প্রকাশ ওয়াসিম, আনোয়ার হোসেন, এহতেশামুল হক ভোলা, শাহজাহান মিয়া, কামরুল ইসলাম মুসা ও মো. খায়রুল ইসলাম কালু।