একটা সময় ছিল, যখন গ্রাম বাংলার পল্লী মা-দাদীদের ঢেঁকিতে চন্দময় শব্দে পাড়ার আবালবৃদ্ধ বনিতার প্রভাতের ঘুম ভেঙে যেত। নিস্তব্ধ প্রকৃতিতে সরবতায় ভরিয়ে দিত। নবান্নের উৎসব কিংবা শীতের হিম প্রভাতে নতুন চালের তৈরী গুঁড়িতে মা-চাচী আর দাদা দাদীদের কোমল হাতের স্পর্শে তৈরী হতো ভাপা, পুলি-পুয়া পাটি-সাপটা চিতইসহ হরেক রকমের মজাদার পিঠা। পরিবারের সবাই এক সাথে কুণ্ডলী পাকিয়ে বসে গরম গরম পিঠা খাওয়ার মনোমুগ্ধকর পরিবেশটাও ছিল সত্যিই স্মরণীয় করে রাখার মতো। পিঠার জনপ্রিয়তা বজায় থাকলেও কালের আবর্তনে ঢেঁকি অতীত স্মৃতির অতল গহবরে স্থান করে নিচ্ছে। ক্রমান্বয়ে হারিয়ে যাচ্ছে পল্লীর চারুময় লোকাচার থেকে। রাতের শেষ প্রহরের সূচনা হতেই মা দাদী চাচীদের ঢেঁকিতে বারা দেয়ার পর্ব প্রস্তুতি শুরু হতো। তাদের বারা দেয়ার সৃষ্টি সুর আর চন্দমুখর সরবতা প্রকৃতিকে জাগিয়ে তুলত। ছোট খাটো কল্প কাহিনী শ্লোকের রঙ্গাত্মক প্যাচ আর হাসি তামাশার মধ্য দিয়ে কার্যক্রম এগিয়ে চলত। এখন আর গ্রামবাংলার পাড়ায় পাড়ায় গৃহস্থের ঘরে ঢেঁকির সুমধুর ধুপধাপ তাল পরিলক্ষিত হচ্ছে না। আর ভোরের ঘুমটাও যেন সহজে ভাঙতে চায় না। এমনি করে হারিয়ে যেতে বসেছে আমাদের জাতীয় সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের ধারক ঢেঁকি শিল্প।
এম. এ. গফুর, বলুয়ার দীঘির দক্ষিণ-পশ্চিম পাড়, কোরবানীগঞ্জ, চট্টগ্রাম।