পুলিশি বাধায় কালুরঘাট বেতার কেন্দ্রে যেতে পারেননি বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীসহ দলটির নেতাকর্মীরা। গতকাল শনিবার দুপুরে বিপ্লব উদ্যানে শ্রদ্ধা জানানো শেষে কালুরঘাট যাওয়ার পথে দুই নম্বর গেটে তাদের গাড়ি আটকে দেয় পুলিশ। এ সময় পুলিশের সঙ্গে বাকবিতণ্ডা হয়েছে বিএনপি নেতৃবৃন্দের। পরে সেখান থেকে ফিরে যান তারা। জানা গেছে, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের স্মৃতি বিজড়িত কালুরঘাট বেতার কেন্দ্রে ‘শ্রদ্ধা জ্ঞাপন কর্মসূচি’ ঘোষণা করেছিল বিএনপি। গত ২৩ মার্চ বিষয়টি লিখিতভাবে সিএমপি’কে অবহিত করেন স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন চট্টগ্রাম বিভাগীয় সমন্বয় কমিটির সদস্য সচিব মাহবুবের রহমান শামীম। তবে পুলিশ সেখানে কর্মসূচির অনুমতি দেয়নি। পরে গত পরশু শনিবার দিবাগত রাতে কালুরঘাটের পরিবর্তে পলোগ্রাউন্ড মাঠে সমাবেশের ঘোষণা করে বিএনপি। এদিকে গতকাল সকাল থেকে কালুরঘাট বেতার কেন্দ্রের সামনে অবস্থান নেয় আওয়ামী লীগ।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গতকাল দুপুর একটায় বিপ্লব উদ্যানে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান মির্জা ফখরুল, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন ও আমীর খসরু, ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান, মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দীন, বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা এম এ সালাম, আবুল খায়ের ভূঁইয়া, জয়নাল আবেদীন ফারুক, গোলাম আকবর খোন্দকার, সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম, নগর বিএনপির আহ্বায়ক ডা. শাহাদাত হোসেন ও সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্কর।
শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে কালুরঘাটের দিকে যাওয়ার পথে তাদের গাড়ি আটকে দেয় পুলিশ। এসময় মির্জা ফখরুল ও আমীর খসরুসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ গাড়ি থেকে নেমে আসেন। তাদের সঙ্গে বাকবিতন্ডা হয় পুলিশের। এ সময় মির্জা ফখরুল দায়িত্বরত পুলিশকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘আওয়ামী লীগ করতে পারলে আমরা কেন পারবো না?’ তবে শেষ পর্যন্ত অনুমতি না থাকায় পুলিশ বিএনপি নেতৃবৃন্দকে বেতার কেন্দ্রে যেতে দেয়নি।
পরে উপস্থিত সাংবাদিকদের মির্জা ফখরুল বলেন, দুর্ভাগ্য আমাদের, কালুরঘাট বেতারকেন্দ্রে যেতে আমাদের বাধা দেয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগ বেতারকেন্দ্রের সামনে দখল করে রেখেছে। স্বাধীন দেশে আমরা স্বাধীনভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারছি না। তিনি বলেন, মেজর জিয়াউর রহমান কালুরঘাট বেতারকেন্দ্র থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন। পুরো জাতিকে তিনি মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে আহ্বান করেছিলেন। দীর্ঘ নয়মাস যুদ্ধের পর দেশ স্বাধীন হয়েছে। জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে সেদিন যুদ্ধ হয়েছে। আমরা স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন করছি।
এ সময় খন্দকার মোশাররফ বলেন, মেজর জিয়া ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সৈনিকদের জড়ো করে ২৫ মার্চ রাতে এখান থেকে রিভোল্ট করেছে। এটা কেউ অস্বীকার করতে পারবে না। তিনি কালুরঘাট বেতারকেন্দ্র থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন। এটা কেউ অস্বীকার করতে পারবে না। এটা যারা অস্বীকার করে তারা মুক্তিযুদ্ধের, স্বাধীনতার ইতিহাসকে অস্বীকার করে। মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাসকে আমরা জনগণের কাছে তুলে ধরতে চাই। এই সরকার কেন মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে বিকৃত করতে চাচ্ছে, যেহেতু তারা দুর্বল, স্বাধীনতার ঘোষণা করার কথা ছিল, তখন যারা জনগণের দ্বারা নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি, সেই আওয়ামী লীগের নেতাদের।
এ বিষয়ে নগর পুলিশের উপ-কমিশনার মোখলেসুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, ‘মির্জা ফখরুলের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্রে যাওয়ার অনুমতি ছিল না। দলের পক্ষ থেকেও বলা হয়েছিল সেখানে তারা যাবেন না। শুধু বিপ্লব উদ্যানে ফুল দেবেন। কিন্তু বিপ্লব উদ্যানে ফুল দিয়ে তারা কথা না রেখে কালুরঘাটের দিকে যেতে চেয়েছিলেন।
পাঁচলাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহিদুল কবীর গণমাধ্যমকে বলেন, বিপ্লব উদ্যানেই বিএনপি’র শ্রদ্ধা জানানোর কর্মসূচি ছিল। সেখানে তারা শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। এরপর নির্ধারিত কর্মসূচি হচ্ছে পলোগ্রাউন্ড মাঠে সমাবেশ। কিন্তু ওনারা নির্ধারিত কর্মসূচির বাইরে বেতারকেন্দ্রে যেতে চেয়েছিলেন। সেখানে অনুমতি ছিল না। সেজন্য আমরা বলেছি, আপনারা নির্ধারিত কর্মসূচি পালন করেন। এর বাইরে কর্মসূচি পালনের অনুমতি নেই।