আমার কল্পনার রাজ্যে এক পাহাড় চাই। লোকালয় থেকে অনেক দূরে থাকবে সেই পাহাড়। পাহাড় ঘেঁষে একটা ছোট্ট নদী থাকবে। যান্ত্রিক কোনো কোলাহল থাকবে না। থাকবে না মানুষের ভিড়। পাহাড়ের ওপর ছোট্ট একটা বাড়ি থাকবে। খুব বেশি বড়ো নয়। দু‘টো ছোটো ছোটো রুম, একটা ডাইনিং রুম আর একটা রান্নাঘর। যে রুমটায় আমি থাকবো সেই রুমের সাথেই একটা মাঝারি আকারের বারান্দা থাকবে। বাড়ির সামনে ছোট্ট একটা বাগান থাকবে। বাড়ির পাশে পাহাড় থেকে নামার একটা সিঁড়ি থাকবে। পাহাড় থেকে নামলেই থাকবে নদীর ঘাট। ঘাটে একটা নৌকা বাঁধা থাকবে সবসময়। সেটাও না হয় আমি কিনে নিবো। বাড়ির সামনে বাগানের পাশে অল্প একটু জায়গা কিন্তু অবশ্যই লাগবে। যাতে করে ঝুম বৃষ্টি শুরু হলেই সেই উঠোনে নেমে ভিজতে পারি। বাগান ভর্তি থাকবে নানা রকমের ফুল, ফল ও পাতাবাহার গাছ। কখনো মন খারাপ হলে বাগানে ঢুকলেই যেনো মন খারাপ উবে যায়। রুমের সাথে যে বারান্দা থাকবে, সেই বারান্দা যদি বাড়ির দক্ষিণ দিকটায় হয় তবে খুব ভালো মানাবে। সাথে পূর্ব ও পশ্চিম দিকের একটু জায়গা দখল করলেও মন্দ হয় না। প্রতিদিন সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দুটোই উপভোগ করা যাবে। মাঝরাতে ঘুম না হলে ধোঁয়া ওঠা এক কাপ চায়ে চুমুক দিতে দিতে বারান্দার কোনো এক চেয়ারে বসে জোছনাবিলাস করবো। নিয়ম করে যান্ত্রিক কোলাহল কিংবা মানুষের চেঁচামেচিতে ঘুম না ভেঙে; ঘুম ভাঙবে পাখির কিচিরমিচির শব্দে। কখনো ইচ্ছে হলে পূর্ণিমা রাতেই বেরিয়ে যাবো নৌকা ভ্রমণে। আমার একাকিত্বের সঙ্গী হবে সেই চাঁদ আর পানির ছলাৎ ছলাৎ শব্দ। কখনো কখনো ঘাটে বসেই সময়ে–অসময়ে নোট খাতা অথবা ডায়েরির পাতা জুড়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লিখে যাবো কোনো এক অচেনা মেয়ের গল্প। যে কি–না হারিয়ে যেতে চেয়েছিল এমন এক পরিবেশে। কখনো বা খুব সিরিয়াস হয়ে বারান্দায় বসেই খাতা কলম নিয়ে মিলিয়ে নিতে চাইবো জীবনের জটিল সমীকরণগুলো। তবুও দিনশেষে রাতের অন্ধকার যখন নেমে আসবে তখনও আমার সেই সমীকরণ মেলানো যাবে না। এভাবেই কেটে যাক একেকটা দিন, একেকটা মাস, একেকটা বছর। ক্ষতি কী? মানসিক প্রশান্তি তো দিনশেষে মিলবেই। যা এই যান্ত্রিক শহর আমাকে কখনোই দেয়নি, দিতে পারেনি অথবা দিতে চায়নি।