বাংলাদেশে সার্বিকভাবে নারী উন্নয়নের সূচক হিসাবে কর্মক্ষেত্রে নারীর উত্তরোত্তর অংশগ্রহণকে আমরা অনন্য উদাহরণ হিসাবে নিয়ে থাকি। অথচ সেটা কত শতাংশ আশানুরূপ হয়েছে, সেই হিসাবটি আমরা তলিয়ে দেখি না। কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ যথেষ্ট না হওয়ার অনেকগুলো কারণ রয়েছে। প্রথমত নারীর কর্মক্ষেত্র এখন পর্যন্ত নারীবান্ধব হয়নি। তারা যেন আজও পরগাছার মতো। কর্মক্ষেত্রকে নারীবান্ধব করার নানা পদক্ষেপ নেয়া হলেও নারীরা এখনও সেখানে যৌন হয়রানির শিকার হয়, বৈষম্যের শিকার হয়। দিনের একটা দীর্ঘসময় নারীরা তাদের কর্মক্ষেত্রে ব্যয় করেন। তাই এই সময়টাতেও তাদের জন্য নিরাপদ ও হয়রানিমুক্ত কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করতে এগিয়ে আসতে হবে আমাদেরকেই। কর্মক্ষেত্রে আমাদেরকে নারী–পুরুষ ভেদাভেদ ভুলে একসাথে কাজ করতে হবে। সুন্দর পরিবেশে কাজ করলে যেমন মন ভালো থাকে, তেমনি কাজের গুণগত মানও ভালো হয়। এখন কর্মক্ষেত্রে নারী সহকর্মীর জন্য অনুকূল পরিবেশ তো কেবল নারীদের উদ্যোগ বা সদিচ্ছার বিষয় নয়, বরং পুরোভাগে এটি পুরুষ সহকর্মীর উপরই বর্তায়। তাই এগিয়ে আসতে হবে পুরুষ সহকর্মীদেরই। আমরা অনেকভাবেই পাশের নারী সহকর্মীকে সুন্দর একটা পরিবেশ এনে দিতে পারি। প্রয়োজন কিছু ছোট ছোট পদক্ষেপ। সেরকম কিছু টিপসই এখানে বলবার চেষ্টা করব।
পুরুষ সহকর্মী হিসাবে অযথা যেচে পড়ে স্মার্টনেস দেখানো বন্ধ করুন, এতে আপনার নারী সহকর্মী বিব্রতবোধ করতে পারেন। ‘‘কিছু মনে করবেন না, আপনাকে একটা কথা বলি?’’- এই ধরনের প্রশ্ন করা থেকে বিরত থাকুন। বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই এই প্রশ্নগুলো মেয়েদের কাছে বিরক্তিকর। নারী সহকর্মী অসুস্থতাজনিত কারণে ছুটি নিয়ে কাজে ফিরলে শুধু হাসিমুখে বলুন, ‘‘ভালো আছেন?” – কি হয়েছিলো, কেনো হয়েছিলো, আমাকে বলতে পারতেন…ইত্যাদি নানা প্রশ্ন করার কোনো প্রয়োজন নাই। আপনার নারী সহকর্মী জুনিয়র হলে (এই টিপসটি নারী/ পুরুষ উভয়েরই জন্যই প্রযোজ্য) যেচে পড়ে ‘‘তুমি’’ সম্বোধন করবেন না। আপনি করেই সম্বোধন করুন, কেননা সেটাই দাপ্তরিক আদবকেতা। কোনো নারী কলিগ সুন্দর করে সেজে আসলে, সুন্দর ড্রেসআপ করে আসলে তাকে গদগদ হয়ে বলার দরকার নেই, ‘‘কী ব্যাপার! ঘটনা কি! দারুণ লাগছে, ইত্যাদি ইত্যাদি’’। সাজগোজ প্রত্যেকেরই ব্যক্তিগত ব্যাপার, আগ বাড়িয়ে জানতে চাওয়ার কিছু নাই। কোনো বিপদে একজন নারী সহকর্মীকে সাহায্য করুন ঠিক সেইভাবে, যেভাবে আপনি একজন পুরুষ সহকর্মীকে সাহায্য করে থাকেন। অফিসে নারী–পুরুষ নির্বিশেষে কারো সঙ্গেই রসালো বা আজেবাজে বিষয় নিয়ে গল্প করবেন না। নারী সহকর্মীর শারীরিক অসুস্থতায় অন্য কোনো নারী সহকর্মীর সাহায্য নিন। অথবা তার পরিবারকে খবর দিন, তাকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা বা হাসপাতালে নেবার ব্যবস্থা করুন। নারী সহকর্মীর পরিবার সম্পর্কে ঠিক যতটুকু জানার প্রয়োজন, ততটুকু জানুন। তিনি আপনার সহকর্মী, তাকে সেই সম্মানটুকু প্রদর্শন করুন। নারী সহকর্মীর অমনোযোগিতা, মন খারাপ, কষ্ট এসবের দিকে সহকর্মী হিসাবে আপনি অবশ্যই লক্ষ্য রাখবেন, প্রয়োজনে তাকে আলাদা করে জিজ্ঞাসাও করতে পারেন তার সমস্যার কথা, কিন্তু একান্ত ব্যক্তিগত ব্যাপারগুলো পরিহার করুন। মনে রাখবেন, হয়তো উনার কাছের বা একান্ত অনেক মানুষই আছে। আপনি আপনার স্বীয় সীমানা অতিক্রম না করে যতটুকু পারবেন ততটুকু সহায়তা করুন। আর কোনো কারণে আপনিই যদি তার সবচেয়ে কাছের মানুষ হয়ে থাকেন, ব্যাপারটা একটু নিশ্চিক হয়ে নেবেন। নারী সহকর্মী কোনো কাজে সমস্যায় পড়লে তাকে নেগেটিভ কিছু না বলে পজেটিভ আবহ নিয়ে কাজে সহযোগিতা করুন এবং কর্তৃপক্ষের কাছে তার কাজের স্বীকৃতি প্রকাশ করুন। মোদ্দাকথা নিজেকে একজন বিশ্বাসযোগ্য মানুষ হিসেবে উপস্থাপন করুন। সর্বোপরি সহকর্মী হিসাবে একজন নারী যেনো অফিসে আসতে আতঙ্কিত বোধ না করে, আপনার পাশে বসে কাজ করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে সেই পরিবেশটি নিশ্চিত করুন।