করোনাকালে প্রণোদনার নামে প্রায় সাড়ে ৬ লাখ টাকা ভাগ-বাটোয়ারা হয়েছে চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডে। বোর্ডের শীর্ষ পর্যায় থেকে শুরু করে সকল পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী এ সুবিধা পেয়েছেন। শিক্ষাবোর্ড সংশ্লিষ্টদের দাবি- করোনা পরিস্থিতিতে অফিস বা দায়িত্ব পালন করায় অতিরিক্ত আর্থিক এ প্রণোদনা নেয়া হয়েছে। শিক্ষাবোর্ড সূত্রে জানা গেছে- করোনাকালে প্রণোদনা বাবদ নির্ধারিত অংকের টাকা (নামের পাশে উল্লিখিত) কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঞ্চয়ী হিসাবে স্থানান্তরের অনুরোধ জানিয়ে গত ২ জুলাই সোনালী ব্যাংককে চিঠি দেয় শিক্ষাবোর্ড কর্তৃপক্ষ। সবমিলিয়ে মোট ৬ লাখ ৩৭ হাজার ৮৬৩ টাকা স্থানান্তরের অনুরোধ জানানো হয় চিঠিতে। সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা যায়- করোনা পরিস্থিতিতে অফিস বা দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে মূল বেতন বিবেচনায় একটি নির্ধারিত হারে এই প্রণোদনা হিসাব করা হয়েছে।
এই প্রণোদনা বাবদ কর্মকর্তাদের একজন সর্বোচ্চ ৫৭ হাজার টাকা নিয়েছেন। কেউ পেয়েছেন ৩৫ হাজার টাকার বেশি। কেউবা ২৫ হাজার, আর কেউবা ১৫ হাজার। আর কর্মচারীদের মধ্যে সর্বনিম্ম ৪০০ টাকাও পেয়েছেন কেউ কেউ।
তবে হাতে গোনা কয়েকজন কর্মকর্তা ও কর্মচারী এই প্রণোদনা পান নি। ওই সময়ে অফিস না করায় তাদের এ প্রণোদনা দেয়া হয়নি বলে বোর্ড সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। করোনাকালে প্রণোদনা গ্রহণের কথা স্বীকার করে শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর প্রদীপ চক্রবর্তী বলেছেন- করোনাকালে সাধারণ ছুটির মধ্যে যারা পরীক্ষা সংক্রান্ত ডিউটি বা দায়িত্ব পালন করেছেন, তাদের কিছু প্রণোদনা দেয়া হয়েছে। সব নিয়ম মেনেই এটি নেয়া হয়েছে। আন্তঃবোর্ডের সিদ্ধান্ত ছিল এবং অন্যান্য শিক্ষাবোর্ডও এ ধরনের প্রণোদনা নিয়েছে বলেও দাবি করেন চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর প্রদীপ চক্রবর্তী। তবে অন্যান্য বোর্ডে খোঁজ নিয়ে এ তথ্যের সত্যতা পাওয়া যায়নি। করোনাকালে প্রণোদনার নামে কোন প্রণোদনা বা অতিরিক্ত আর্থিক সুবিধা গ্রহণে আন্তঃশিক্ষা বোর্ডের পক্ষ থেকে কোন সিদ্ধান্ত ছিল না বলে জানিয়েছেন আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাব-কমিটির সভাপতি ও ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর মু. জিয়াউল হক। গতকাল দুপরে মুঠোফোনে তিনি আজাদীকে বলেন- সাধারণ ছুটি থাকলেও আমাদের অফিস (শিক্ষাবোর্ড) কিন্তু বন্ধ ছিল না। এসএসসি পরীক্ষার ফলাফল প্রস্তুত ও প্রকাশের কাজ কিন্তু চালিয়ে নিতে হয়েছে। দায়িত্ব পালন করলেও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যে প্রাপ্য, তাঁরা তো সেটি পাচ্ছেনই। তাই করোনা কালীন প্রণোদনার নামে আলাদা ভাতার প্রশ্ন আসবে কেন? এরকম ভাতা কেন নেবে? ঢাকা শিক্ষাবোর্ডে এ ধরণের কোন প্রণোদনা বা ভাতা নেয়া হয়নি বলে নিশ্চিত করেন তিনি।
করোনা পরিস্থিতিতে অফিস বা দায়িত্ব পালন করলেও আলাদা কোন প্রণোদনা বা ভাতা নেয়া হয়নি বলে জানিয়েছেন কুমিল্লা শিক্ষাবোর্ডের উপ-পরিচালক (হিসাব ও নিরীক্ষা) মো. সানাউল্লাহ।
প্রসঙ্গত, নিয়মিত বেতন-ভাতার বাইরে প্রতিটি পাবলিক (জেএসসি, এসএসসি ও এইচএসসি) পরীক্ষায় বোর্ডের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারী তাদের মূল বেতনের আড়াই গুণ হারে সম্মানি পান। যা শিক্ষা মন্ত্রণালয় অনুমোদিত। সে হিসেবে তিনটি পরীক্ষায় (জেএসসি, এসএসসি ও এইচএসসি) মূল বেতনের সাড়ে ৭ গুণ সম্মানি পেয়ে থাকেন শিক্ষা বোর্ডে কর্মরতরা। যা অন্যান্য যে কোন সরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরতদের আর্থিক সুবিধার তুলনায় ঢের বেশি। অন্য একটি সরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত একই পদের একজন কর্মকর্তা বা কর্মচারীর তুলনায় শিক্ষাবোর্ডে কর্মরত একজন কর্মকর্তা বা কর্মচারী প্রায় তিনগুণ বেশি আর্থিক সুবিধা পান বলে সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে।
কেবল একটি শিক্ষাবোর্ড (চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ড) এ ধরণের প্রণোদনা নিয়ে থাকলে তা সম্পূর্ণ অনৈতিক বলে মনে করেন সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক-টিআইবি) চট্টগ্রাম নগরের সভাপতি আখতার কবির চৌধুরী। চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ড কি আলাদা কোন দ্বীপ, এমন প্রশ্ন রেখে আখতার কবির চৌধুরী আজাদীকে বলেন, এটা আত্মসাৎ। আমি আত্মসাতই বলবো। তাঁরা এ অর্থ ভাগ-বাটোয়ারা করেছে। এটা হরিলুট। শিক্ষাবোর্ডের কর্মকর্তারা সবাই সরকারি কলেজের শিক্ষক। মানুষ গড়ার কারিগর। তাঁরা প্রেষণে সেখানে যান। তাঁরাই যদি এভাবে সরকারি অর্থ লুট করেন, নয়-ছয় করেন, তাহলে তাদের কাছ থেকে শিক্ষার্থীরা কি শিখবে?
এই হরিলুটের সাথে জড়িতদের জবাবদিহির আওতায় আনার দাবি জানিয়ে আখতার কবির চৌধুরী বলেন, এই অর্থ অবশ্যই সরকারি কোষাগারে ফেরত আনার পাশাপাশি জড়িতদের শাস্তির ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। যাতে ভবিষ্যতে আর কেউ এভাবে অর্থ লুটের সাহস না করে। এ বিষয়ে তড়িৎ ব্যবস্থা নিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষের প্রতি দাবি জানান তিনি।