মরণঘাতী ভাইরাস করোনার তাণ্ডবে তছনছ পৃথিবীর প্রতিটি জনপদ, জনপদের প্রতি ইঞ্চি মাটি। বছরের কাছাকাছি আণুবীক্ষনিক এ ভাইরাসটি দাপিয়ে বেড়াচ্ছে পৃথিবীময়। মহাসত্য এ পৃথিবীর স্রষ্টা আমার আল্লাহতায়ালা প্রদত্ত মহাসত্য আল্-কোরআনের প্রতিটি বর্ণ মনুষ্য জীবনের একমাত্র পাথেয়, মানব জীবনের সর্বক্ষেত্রে কোরআনের প্রতিটি বর্ণের প্রতিষ্ঠা করা অত্যাবশ্যক আর এর ন্যূনতম অবহেলায় সৃষ্টি হয় শতাব্দির ভয়াবহতম আসমানী গজব-যা ইতোমধ্যে পুরো বিশ্ববাসীর কাছে প্রমাণিত সত্য। এটা অস্বীকার করার কোন উপায় নাই নেই, করোনার নতুন মেরুকরণ আমাদের চরম অবাধ্যতার ফসল। ‘নিশ্চয়ই আল্লাহতায়ালা কখনো কোনো জাতির অবস্থার পরিবর্তন করেন না, যতক্ষণ না তারা নিজেরা নিজেদের অবস্থা পরিবর্তন করে; আল্লাহতায়ালা যখন কোন জাতির জন্যে কোন দুঃসময়ের ইচ্ছা করেন তখন তা রদ করার কেউ থাকে না-না তিনি ব্যতীত ওদের আর কোন অভিভাবক থাকে’-সূরা আর রাদ-১১। করোনাভাইরাসের নতুন ধরণ পাওয়া গেছে বাংলাদেশসহ পাঁচটি দেশের ১৬টি জায়গায়, এর সাথে যুক্তরাজ্যে আবিষ্কার হওয়া নতুন ধরনের সাথে যথেষ্ট মিল রয়েছে। আমাদের দেশে করোনা ভাইরাসের পূর্ণাঙ্গ জিন নকশা (হোল জিনোম সিকোয়েন্স) উন্মোচন করে বিজ্ঞানীরা বলছেন, ভাইরাসটিতে নতুন আরেকটি শক্তিশালী ধরনের অস্তিত্ব মিলেছে। এটির সঙ্গে যুক্তরাজ্যের নতুন ধরনের মিল রয়েছে, তবে এটি ততটা ভয়ংকর নয়। বাংলাদেশে এই পর্যন্ত ৪৮৩টি করোনা ভাইরাসের পূর্ণাঙ্গ জিন নকশা উন্মোচন করা হয়েছে। নতুন ধরন করোনা ভাইরাসের নামটি হল পি৬৮১আর ভ্যারিয়েন্ট। আমাদের দেশে করোনাভাইরাসের গতিপথ কোনদিকে ধাবিত হচ্ছে ও কতটা শক্তিশালী তার গবেষণায় নিয়োজিত বিজ্ঞানীরা বলছেন, করোনা ভাইরাস দ্রুত পরিবর্তনশীল এবং এটি বার বার রূপান্তরিত হয়। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী ৫ লক্ষ ৬ হাজার ১০২ জনের দেহে করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে, তার মধ্যে ৭,৩৭৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। চীনের উহান প্রদেশে প্রথম করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়ে গত বছরের ডিসেম্বরে আর আমাদের দেশে এটি শনাক্ত হয় গত ৮ মার্চ। করোনা ভাইরাস-অপ্রতিরোধ্য এ ভাইরাসটি আল্লাহর পক্ষ থেকে একটি hard message, hard information. আমাদের দেশের প্রতিটি ইঞ্চি জায়গায় এটি চষে বেড়িয়েছে-অনেক মানুষকে আক্রান্ত করেছে আর অনেকের প্রাণ সংহার করেছে। বিশ্বের প্রতিটি দেশের মতন আমাদের দেশেও অশ্লীলতা ও বেহায়াপনার কালো থাবায় জর্জরিত উঠতি যুবসমাজ। যুগে যুগে নবী রাসূলগণ এসেছেন বিপথগামী জাতিকে সু-পথে ফিরে আনার জন্যে। পৃথিবীতে এ পর্যন্ত ১ লক্ষ ২৪ হাজার পয়গম্বর এসেছেন সত্য দ্বীন ইসলামকে আল্লাহর জমিনে প্রতিষ্ঠিত করার মিশন নিয়ে। প্রত্যেক নবী রাসূলগণ তাঁর নির্দিষ্ট জাতিকে হেদায়াতের পথে আনার জন্যে আপ্রাণ প্রচেষ্টা চালিয়েছেন-কেউ সুপথে ফিরেছেন কেউবা হেদায়াত লাভের সুযোগ পাননি কারণ হেদায়তের মালিক একমাত্র একজনই, যিনি সমাসীন রয়েছেন মহান আরশে-যিনি মহাশক্তিমান ও মহাপরাক্রমশালী। এমন নবী-রাসূলও এসেছেন যাঁদের মধ্যে কেউ সত্য দ্বীন ইসলামকে গ্রহণ করেনি। হযরত ইব্রাহীমের জাতিদের মধ্যে কেউ ইসলাম গ্রহণ করেনি। কিন্তু কেয়ামত অবধি এ ইক্বামতে দ্বীন প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে ইনশাআল্লাহ্। সর্বশেষ নবী ও রাসূল, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ আমার রাসূল (স.) এসেছিলেন কেয়ামত অবধি পুরো মানবজাতিকে হেদায়াতের আলো দেখানোর মহান ব্রত নিয়ে। তাঁর প্রদর্শিত জীবন ব্যবস্থা ইসলামই আল্লাহর কাছে একমাত্র গ্রহণযোগ্য আর কোন আদর্শ, মতাদর্শ, ধর্ম আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। ‘আজ আমি তোমাদের জন্যে তোমাদের দ্বীন পরিপূর্ণ করে দিলাম, আর তোমাদের উপর আমার (প্রতিশ্রুত) নেয়ামতও আমি পুরো করে দিলাম, তোমাদের জন্যে জীবন বিধান হিসাবে আমি ইসলামকেই পছন্দ করলাম’-সূরা আল মায়েদা-২। করোনা ভাইরাসের মতন মহামারি এ জমিনে এর আগেও এসেছিল অবাধ্য জনগোষ্ঠীকে পরিশুদ্ধ করার জন্যে। মহান আল্লাহতায়ালা এভাবে বার বার reminder দিয়ে থাকেন, যেন আমরা আল্লাহর দেয়া জীবন ব্যবস্থাকে তাঁরই জমিনে কায়েম করার প্রচেষ্টায় নিয়োজিত থাকি কিন্তু কে শোনে কার কথা। আমরা গড্ডালিকা প্রবাহে গা ভাসিয়ে দিই নিরন্তর-বিলাসিতায় একাকার করে দিই নিজেদের। একমাত্র স্থায়ী নিবাস পরকালের সফলতার চেয়ে দুনিয়ার সফলতাকেই প্রাধান্য দিই বার বার, ‘কিন্তু তোমরা তো দুনিয়ার জীবনকেই আখেরাতের উপর প্রাধান্য দিয়ে থাক অথচ আখেরাতের জীবনই হচ্ছে উৎকৃষ্ট ও স্থায়ী’-সূরা আল আ’লা ১৬-১৭। করোনার মতন আপদ এসেছে আমাদের কৃতকর্মের কারণে, ‘মানুষের কৃতকর্মের দরুন জলে স্থলে (সর্বত্র) বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়েছে, (মূলত) আল্লাহতায়ালা তাদের কিছু কাজ কর্মের জন্যে তাদের শাস্তির স্বাদ আস্বাদন করাতে চান, আশা করা যায় (এর ফলে) তারা (সে সব কাছ থেকে) ফিরে আসবে’-সূরা আর রোম ৪১। এ মহাসত্য গ্রন্থ আল্-কোরআনকে একান্ত আপন করে না নেয়ার কারণে আর কোরআনের বিধানকে আল্লাহর জমিনে প্রতিষ্ঠা করার কাজে নিজেকে নিয়োজিত না করার কারণে এ নাফরমান জাতির উপর বার বার আযাব-গজব নাযিল করেছেন মহান আল্লাহতায়ালা, ‘অবশ্যই যারা (কোরআনের মত) স্মরণিকা (গ্রন্থটি) তাদের কাছে আসার পর তা অস্বীকার করে (তারা অচিরেই এর পরিণাম টের পাবে), মূলত সেটি হচ্ছে এক সম্মানিত গ্রন্থ’-সূরা হা-মী-ম আস্ সাজদা। করোনা নামক ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র জীবাণুটির প্রতি আমরা কত অসহায় সেটি গত এপ্রিল-মে মাসে বোঝা গেছে আমাদের এ দেশেই। স্থবির মানব জীবন, ভীত সন্ত্রস্ত মানবকূল, সমগ্র হাসপাতালগুলোতে উপচে পড়া ভীড় করোনা রোগীদের। চোখের সামনেই জীবন প্রদীপ নিভে যাচ্ছে। কারো করার কিছুই নেই। ছেলের কাছে ঘেঁষতে পারেন না বাবা-বাবার কাছে ঘেঁষতে পারে না ছেলে-স্বামীর কাছে ঘেঁষতে পারে না মমতাময়ী স্ত্রী-আর স্ত্রীর পাশেও ঘেঁষতে পারে না সারাজীবনের সঙ্গী স্বামী-এটাই ছিল করোনা নামক অপ্রতিরোধ্য জীবাণুর আসল রুপ, আসল রহস্য অথচ আমরা বার বার অমোঘ বিধান কোরআনের আয়াতকে অস্বীকার করছি, কোরআনের আওয়াজকে উচ্চকিত করতে দিই না-এটাই চলমান গজবের সারাংশ। মহান আল্লাহতায়ালা চাইলে পুরো জমিনকে উপড়ে দিতে পারেন যেমনটি দিয়েছিলেন লূত জাতিকে তাঁর বাণীকে অস্বীকার করার কারণে, ‘আসমান জমিনের সমূদয় শক্তি একমাত্র আল্লাহর জন্যেই, অবশ্যই আল্লাহতায়ালা শাস্তি দেয়ার ব্যাপারে অত্যন্ত কঠোর ’-সূরা বাকারা ১৬৫। সময় এসেছে নিজেকে পরিশুদ্ধ করে নেয়ার, সাথে সাথে নিজের পরিবার-সমাজ-রাষ্ট্র সবখানেই মহাশক্তিধর আল্লাহতায়ালার সত্যগ্রন্থ, মহাবিস্ময়কর কিতাব আল্-কোরআনের প্রত্যেকটি হরফকে এ জমিনের প্রতিটি ইঞ্চিতে প্রোথিত করার এবং নিজেকে প্রকৃত মুমিন হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করার আর এতেই রয়েছে দুনিয়া ও আখেরাতের সাফল্য। তবেই আমরা জয়ী হতে পারব আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে পাঠানো জীবাণু সৈন্য করোনার বিরুদ্ধে।
লেখক: সভাপতি, রাউজান ক্লাব, সিনিয়র কনসালটেন্ট (ইএনটি),
রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতাল