কঠোর হাতে নাশকতা মোকাবেলা করতে হবে

| বুধবার , ৩১ জুলাই, ২০২৪ at ১১:০০ পূর্বাহ্ণ

সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী নাশকতা প্রতিরোধ ও সমপ্রীতি বজায় রাখতে নগরের ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে স্থানীয় কাউন্সিলরদের নেতৃত্বে কমিটি গঠনের নির্দেশনা দিয়েছেন। গত রোববার অনুষ্ঠিত চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) বর্তমান পর্ষদের ৪২৩তম সাধারণ সভায় তিনি এ নির্দেশনা দেন। নাশকতা প্রতিরোধে কমিটি গঠনের নির্দেশনা দিয়ে মেয়র বলেন, কমিটিতে এলাকার মসজিদগুলোর ইমাম, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধানসহ এলাকার গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন শ্রেণীুপেশার মানুষকে সদস্য করে প্রতি মাসে সভা করতে হবে। তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আছে। তবে জনগণের ভোটে নির্বাচিত প্রতিনিধি হিসেবে আমাদেরও কিছু নৈতিক দায়িত্ব আছে। জনগণের জানমাল রক্ষায় কাউন্সিলররা প্রতিটি ওয়ার্ডে নাশকতা প্রতিরোধে অরাজনৈতিক কমিটি গঠন করুন। কমিটিতে এলাকার মসজিদগুলোর ইমাম, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধানসহ এলাকার গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন শ্রেণীপেশার মানুষদের সদস্য করে প্রতি মাসে সভা করে এলাকার মানুষদের মাঝে সচেতনতামূলক কার্যক্রম চালান। নাশকতামূলক যে কোনো কার্যক্রমকে তৃণমূলেই রুখে দিন।

তিনি বলেন, সমপ্রতি কোটাবিরোধী আন্দোলনের আড়ালে দেশিবিদেশি কিছু অপশক্তি মিলে দেশকে অকার্যকর করার অপচেষ্টা চালিয়েছে। বঙ্গবন্ধুকন্যার সাহসী ভূমিকার কারণে এই অপচেষ্টা প্রতিহত করা গেছে। তিসি বলেন, আমার অভিজ্ঞতার আলোকে এবারের যে কার্যক্রম তাকে কোনোভাবেই আন্দোলন বলতে পারি না। এটা ছিল রাষ্ট্র ধ্বংসের আন্দোলন। না হলে, সেতু ভবন, মেট্রোরেল স্টেশন, হানিফ ফ্লাইওভার, বিটিভি, পুলিশ বক্সএগুলো কী দোষ করেছে? এগুলো কেন ধ্বংস করা হলো? আন্দোলনের নামে টোকাই, ভাড়া করা লোক, বেকার যুবকদের দিয়ে দেশজুড়ে নাশকতা চালানো হয়েছে।

এদিকে, চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বলেছেন, কোটা আন্দোলনের নামে সারা দেশে সৃষ্ট নৈরাজ্য ও নাশকতার প্রেক্ষিতে প্রত্যেক উপজেলা, পৌরসভা, ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন পর্যায়ে ২০১৩ সালে গঠিত সন্ত্রাস ও নাশকতা প্রতিরোধ কমিটিকে পুনরায় সক্রিয় করে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। এটি মন্ত্রী পরিষদ বিভাগের সিদ্ধান্ত। জেলা ও মহানগর সন্ত্রাস ও নাশকতা প্রতিরোধ কমিটির সভার কার্যবিবরণীর অনুলিপি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, মন্ত্রী পরিষদ বিভাগ, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার বিভাগ, সংশ্লিষ্ট বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয় ও প্রয়োজন অনুসারে অন্যান্য মন্ত্রণালয়, বিভাগ বা দপ্তরে প্রেরণ করতে হবে। এজন্য উপজেলা, পৌরসভা, ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন পর্যায়ে সন্ত্রাস ও নাশকতা প্রতিরোধ কমিটির কার্যক্রম প্রতি মাসে প্রতিবেদন আকারে জেলা প্রশাসকের কাছে জমা দিতে হবে।

গত রোববার সকালে নগরীর সার্কিট হাউজে অনুষ্ঠিত জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির মাসিক উন্নয়ন সমন্বয় সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, চট্টগ্রাম একটি বিভাগীয় শহর। এখানে জেলা আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত কোর কমিটি রয়েছে। দেশে যেদিন থেকে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে যাচ্ছে সেদিন থেকে বিভাগীয় ও জেলা কোর কমিটির সভা করেছি। বিভাগীয় কমিশনার ও সিএমপি কমিশনারের নেতৃত্বে বিভাগীয় কোর কমিটি, ডিআইজি, জেলা প্রশাসক, জেলা পুলিশ সুপার, বিজিবি, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীনৌ বাহিনী, কোস্টগার্ড, র‌্যাব, এনএসআই, ডিজিএফআই, আনসারভিডিপি থেকে শুরু করে সংশ্লিষ্ট গোয়েন্দা সংস্থা সকলে মিলে জেলা কোর কমিটি সময়োপযোগী উদ্যোগ নিয়েছিলাম। নাশকতাকারীরা কোথায় কোথায় অবস্থান নিতে পারে সে সকল বিষয়ে অবগত হয়ে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়েছিলাম। সকলে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার কারণে সন্ত্রাসীরা এখানে কিছুই করতে পারেনি। সামনের দিনগুলোতেও আমরা সমন্বিতভাবে কাজ করব।

নগরবাসীকে নিরাপদ রাখার জন্য এ ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া সত্যিই প্রশংসনীয়। কেউ যেন বিশৃঙ্খলা করতে না পারে, সেজন্য প্রশাসন বদ্ধপরিকর। তবে এসব কর্মকাণ্ডে প্রশাসনের পাশাপাশি রাজনীতিবিদসহ সমাজের নানা প্রতিনিধিত্বশীল মানুষকে সম্পৃক্ত করতে হবে। সামাজিক আন্দোলনের মাধ্যমে নাশকতা মোকাবিলা করতে হবে। সামাজিক বিশৃঙ্খলা হতে পারেএমন ইস্যুতে অপপ্রচার বন্ধ এবং প্রযুক্তির অপব্যবহার রোধে আরও কঠোর হতে হবে। বাসে আগুন দেওয়া দুর্বৃত্ত ও নাশকতাকারীদের বিরুদ্ধে আইনের সর্বোচ্চ প্রয়োগ করতে হবে। এছাড়া নাশকতা প্রতিরোধে এমন কিছু নতুন পদ্ধতি চালু করতে হবেযাতে সন্ত্রাসীদের ধরতে সুবিধা হবে।

যদিও আমরা জানি, পরিপূর্ণ নিরাপত্তা বলতে পৃথিবীতে কিছু নেই। চোরাগোপ্তা কিংবা ছদ্মবেশে হামলা মোকাবেলা সবচেয়ে বেশি চ্যালেঞ্জিং হয়ে পড়েছে। সামপ্রতিক সময়ে আমরা যার কিছু নমুনা দেখছি। যারা এ ধরনের নাশকতা করছে, তারাও কিন্তু তাদের কৌশল পরিবর্তন করছে। এসব মাথায় রাখতে হবে। এখন যারা নাশকতা করছে সেটি শতভাগ নির্মূল করা চ্যালেঞ্জিং। তবু চেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। যত নির্মম নিষ্ঠুর হোক না কেন, আইন প্রয়োগ করতে হবে কঠোর হাতে। নাশকতাকারীরা যদি তাদের অপতৎপরতা বন্ধ না করে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে আইনের কঠোর প্রয়োগ দরকার।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে