বিএনপির ডাকা টানা তিনদিনের অবরোধের প্রভাবে কক্সবাজারের পর্যটন শিল্পে ধস নেমেছে। মঙ্গলবার ও বুধবার কক্সবাজার শহরের হোটেল–মোটেলের প্রায় ৯০ ভাগ কক্ষই ছিল খালি। একইভাবে অবরোধে যান চলাচল বন্ধ থাকায় পর্যটকশূন্য হয়ে পড়েছে খাগড়াছড়ি জেলার পর্যটন কেন্দ্রগুলো। দিনের বেলায় এসব জায়গা থেকে দূরপাল্লার বাস চলাচল বন্ধ থাকলেও রাতের বেলায় পুলিশ প্রহরায় কিছু বাস চলাচল করছে।
কক্সবাজার প্রতিনিধি জানান, গতকাল বুধবার যথারীতি কক্সবাজার বিমান বন্দর থেকে ঢাকায় ২২টি ফ্লাইট আসা–যাওয়া করেছে। টেকনাফ–সেন্টমার্টিন নৌ–পথেও ২টি পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল করেছে। অবরোধের প্রথম ও দ্বিতীয় দিন সড়ক–মহাসড়কের কোথাও বিএনপি নেতাকর্মীদের পিকেটিং করতে দেখা যায়নি। অবরোধ চলাকালে জামায়াত ও যুবদলের উদ্যোগে সন্ধ্যার পর শহরে কয়েকটি খণ্ড খণ্ড ঝটিকা মিছিলের খবর পাওয়া গেছে। তবে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবরও পাওয়া যায়নি। সরকারি অফিস–আদালত, ব্যাংক–বিমাও যথারীতি খোলা ছিল। কক্সবাজার জেলা সদর থেকে মাইক্রোবাস ও সিএনজি টেক্সিসহ অন্যান্য ছোটখাটো যানবাহন উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে বিনা বাধায় চলাচল করেছে। টেকনাফ–সেন্টমার্টিন নৌ–পথেও চলাচলকারী তিনটি জাহাজের মধ্যে গতকাল দুটি পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল করেছে এবং জাহাজ দুটিতে প্রায় ৪শ পর্যটক সেন্টমার্টিন আসা–যাওয়া করেছে বলে জানান সি–ক্রুজ ওনার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (স্কোয়াব) সাধারণ সম্পাদক হোসাইন ইসলাম বাহাদুর। তিনি জানান, অবরোধের প্রভাবে সেন্টমার্টিনে পর্যটক কমে গেছে।
কক্সবাজার বিমান বন্দরের ব্যবস্থাপক গোলাম মর্তুজা জানান, মঙ্গলবার ও বুধবার কক্সবাজার বিমান বন্দর থেকে ২২টি ফ্লাইট আসা–যাওয়া করেছে। এসব ফ্লাইটে প্রতিদিন দেড় হাজার থেকে দুই হাজার যাত্রী যাতায়াত করেন। তবে অবরোধের প্রভাবে কক্সবাজারের পর্যটন শিল্পে ধস নেমেছে বলে জানান জেলা রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির সভাপতি ও জেলা জাসদ সভাপতি নঈমুল হক চৌধুরী টুটুল। তিনি বলেন, অবরোধ ডাকার কারণে সোমবার ৯০ শতাংশ পর্যটক কক্সবাজার ত্যাগ করেছে। দূরপাল্লার বাস চলাচল বন্ধ থাকায় পর্যটন শিল্পে ব্যাপক প্রভাব পড়েছে। সাগরপাড়ের রেস্তোরাঁগুলো লোকসান গুণছে। তবে রাতের বেলায় পুলিশ প্রহরায় বাস চলাচল করায় বুধবার অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়েছে।
কক্সবাজার ট্যুরিজম সার্ভিস এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ও হোটেল–মোটেল গেস্ট হাউস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার জানান, মঙ্গলবার ও বুধবার হোটেল–মোটেল জোনের হোটেলগুলোতে প্রায় ৯৫% কক্ষই ছিল খালি। তার নিজের মালিকানাধীন হোটেল ডায়মন্ডে মঙ্গলবার মাত্র ৩টি কক্ষ ও বুধবার ৪টি কক্ষ ভাড়া হয়েছে। হোটেল ইলাপ ইন্টারন্যাশনালের মহাব্যবস্থাপক খায়রুল আমিনও একই দাবী করেন।
খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি জানান, বুধবার বিকেলে খাগড়াছড়ির প্রধান পর্যটন কেন্দ্র আলুটিলায় গিয়ে দেখা যায় সুনসান নিরবতা। কয়েকদিন আগেও পর্যটকে মুখরিত থাকলেও এখন একেবারেই ভিন্নচিত্র। পর্যটন কেন্দ্রের নন্দনপার্ক, সুড়ঙ্গ, ঝুলন্ত ব্রিজ কোথাও পর্যটক নেই।
আলুটিলা পর্যটন কেন্দ্রের তত্ত্বাবধায়ক চন্দ্র কিরণ ত্রিপুরা বলেন, এখন শীত মৌসুম শুরু। বছরের এসময়ে প্রচুর পর্যটক থাকে। কিন্তু বিএনপির অবরোধ হরতালের কারণে পর্যটক নেই বললেই চলে। প্রতিদিন ৫শ থেকে ৬শ পর্যটক এখানে ভ্রমণে আসে। আজ (বুধবার) সারাদিন মিলে ৫০ জনও আসেনি।
আলুটিলা পর্যটন কেন্দ্রের ভেতরে থাকা ‘আলুটিলা কফি হাউস এন্ড রেস্টুরেন্টে’র ব্যবস্থাপক মেহেদি হাসান হৃদয় বলেন, ট্যুরিস্ট কম। আমাদের রেস্টুরেন্ট ব্যবসা ক্ষতির দিকে।
একই অবস্থা খাগড়াছড়ির অন্যসব পর্যটন কেন্দ্রে। খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদ পার্ক, রিছাং ঝরনা কোথাও কোনো পর্যটক দেখা যায়নি। অবরোধের কারণে অনেকেই ট্যুর বাতিল করেছে। এতে আগাম বরাদ্দ হওয়া কক্ষ বাতিল হয়ে গেছে।
খাগড়াছড়ির অভিজাত আবাসিক হোটেল গাইরিং এর ব্যবস্থাপক প্রান্ত বিকাশ ত্রিপুরা বলেন, দুর্গা পূজার পর থেকে আমাদের হোটেল ৪৩টি কক্ষের অধিকাংশই বুকড ছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের একটা গ্রুপ পুরো হোটেল বুকিং নিয়ে অবস্থান করছিল। অবরোধে খবরে তারা একদিন আগেই হোটেল ছেড়ে চলে গেছে। আমরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। কারণ পর্যটক না আসলেও হোটেলের নিয়মিত খরচ বহন করতে হচ্ছে।
অবরোধের কারণে খাগড়াছড়ির সাথে ঢাকাসহ সারাদেশে সাথে বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। রবি এক্সপেস এর কাউন্টার ম্যানেজার জামশেদ আলম সুমন বলেন, আমাদের প্রতিদিন দিনের বেলায় দুইটা বাস খাগড়াছড়ি ছেড়ে ঢাকায় যায়। আজকে একটাও ছাড়িনি। অনেক পর্যটক আটকা পড়েছে। রাতে বাস ছাড়ার পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু কোম্পানির নির্দেশে বাস বাতিল করে টিকেটের টাকা ফেরত দিয়েছি।
এদিকে অবরোধ ঘোষণা আগে বেড়াতে আসা অনেক পর্যটক ভোগান্তিতে পড়েছেন। ঢাকায় ফেরা বাস না পেয়ে অনেকে খাগড়াছড়িতে আটকা পড়েছেন। ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী সোহাগ জানান, বন্ধুরা মিলে ২৯ অক্টোবর সাজেকে বেড়াতে এসেছি। এখন ফেরার বাস পাচ্ছি না। দুটো বাসের টিকেট করেছি। পরে কাউন্টার থেকে বলা হলো রাতে গাড়ি ছাড়বে না। এখন বিকল্প উপায়ে যাওয়ার চেষ্টা করছি।