সীতাকুণ্ডের বিএম কন্টেনার ডিপোতে ভয়াবহ বিস্ফোরণ ও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার জের ধরে বিশ্বের শিপিং সেক্টর নড়েচড়ে বসেছে। একাধিক শিপিং লাইন হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড পরিবহনে অনীহা প্রকাশের পর এবার বিশ্বের অন্যতম ব্যস্ততম বন্দর সিঙ্গাপুর বন্দর কর্তৃপক্ষ হাইড্রোজেন পারঅক্সাইডের কোনো চালান গ্রহণ করবে না বলে ঘোষণা দিয়েছে।
সূত্র বলেছে, গত ৪ জুন বিএম কন্টেনার ডিপোতে হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড বোঝাই কন্টেনারে অগ্নিকাণ্ড এবং বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে ৪৬ জনের প্রাণহানি ছাড়াও অসংখ্য মানুষ আহত হন। ঘটনাটি বিশ্বের শিপিং সেক্টরে ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি করে। ওই ঘটনার প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ থেকে সমুদ্রপথে হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড পরিবহন প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। ইতোমধ্যে তিনটি মেইন লাইন অপারেটরসহ (এমএলও) একাধিক শিপিং লাইন্স চট্টগ্রাম বন্দর থেকে আর হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড ভর্তি কন্টেনার পরিবহন না করার ঘোষণা দিয়েছে। শিপিং লাইনগুলোর ঘোষণার পরপর গতকাল থেকে সিঙ্গাপুর পোর্ট হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড বোঝাই কোনো কন্টেনার রিসিভ না করার ঘোষণা দেয়। পোর্ট অথরিটি অফ সিঙ্গাপুর (পিএসএ) বন্দরের নিরাপত্তা ও ইয়ার্ডের ধারণ ক্ষমতা ছাড়িয়ে যাওয়ায় হাইড্রোজেন পারঅক্সাইডের চালান গ্রহন না করার ঘোষণা দেয় বলে সূত্র জানিয়েছে।
বাংলাদেশ শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সৈয়দ মোহাম্মদ আরিফ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, সিঙ্গাপুর পুলিশ ফোর্স (এসপিএফ) হাইড্রোজেন পারঅক্সাইডকে বিস্ফোরক দ্রব্য হিসেবে নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। এসপিএফের লাইসেন্স মোতাবেক পিএসএতে এ পণ্যটি মজুতের একটি নির্দিষ্ট সীমা রয়েছে। বর্তমানে হঠাৎ সরবরাহ বেড়ে যাওয়ার ফলে বন্দরে পণ্যটির মজুত বেড়ে গেছে। তাই হাইড্রোজেন পারঅক্সাইডের চালান সীমিত আকারে হ্যান্ডলিং করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সিঙ্গাপুর পোর্ট। পিএসএ আর হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড বোঝাই কোনো কন্টেনার রিসিভ না করার সিদ্ধান্ত নেয়ায় নতুন সংকট তৈরি হলো বলেও সূত্রগুলো মন্তব্য করেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, চট্টগ্রামের চারটি বেসরকারি আইসিডিতে রফতানির লক্ষ্যে ১১৩ কন্টেনার হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড রয়েছে। শিল্পের কাঁচামাল হওয়ায় হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড বিশ্বব্যাপী পরিবাহিত হয়। এটির আমদানি-রফতানি বন্ধ হলে বহু শিল্প মুখ থুবড়ে পড়বে। তাই এই কেমিক্যাল পরিবহন বন্ধ হবে না। তবে সাময়িকভাবে মেইন লাইন অপারেটরের বিভিন্ন জাহাজের ক্যাপ্টেন, পোর্ট কর্তৃপক্ষ এ পণ্য নিয়ে উদ্বিগ্ন।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ থেকে বর্তমানে ভিয়েতনাম, চীন, কোরিয়াসহ নানা দেশে হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড রপ্তানি হয়। চট্টগ্রামের ওসিএল ডিপোতে ৪৯ কন্টেনার, পোর্টলিংক ডিপোতে ৩৩ কন্টেনার, ইস্টার্ন লজিস্টিকে ২৪ কন্টেনার এবং কেএনটিতে ৭ কন্টেনার হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড রয়েছে। সিঙ্গাপুর পোর্ট হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড বোঝাই কন্টেনার গ্রহণ না করায় এসব পণ্য রপ্তানি পুরোপুরি অনিশ্চয়তায় পড়ল।