স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের চিরকালের অন্তহীন গৌরব অহংকারের অধিকারী বীর সেনানীদের অন্যতম একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা মো: খোরশেদ আলম বীরবিক্রম। তাঁর জন্ম কুমিল্লার বুড়িচং এর চন্ডিপুর গ্রামে ১৯৫১ সনে। স্বাধীনতা উত্তরকাল থেকে বসবাস ‘সুফিয়া মঞ্জিল’ সুপরিচিত কানুনগো বাড়ী, শান্তিধারা আ/এ, নাসিরাবাদ, চট্টগ্রাম। মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন চট্টগ্রাম সিটিকলেজে বিএসসি অধ্যয়ন কালে। প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন ভারতের পলাশি সহ দুটি প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে। স্মরণীয় ঘটনা নিশ্চিত মৃত্যু কবুল করে একটি জীপগাড়ি ভর্তি অস্ত্র নিয়ে কঠোর নিরাপত্তায় আচ্ছাদিত চট্টগ্রাম নগরীতে প্রবেশ ১৪ আগস্ট ৭১, সাথে ছিলেন মাত্র একজন বীরমুক্তিযোদ্ধা গাড়ীচালক জানে আলম (মীরসরাই)।
আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে অবিচ্ছেদ্য অংশীদার বীরমুক্তিযোদ্ধারা আর বেশিদিন থাকবেন না। প্রায় সবারই বিদায়ের সময় আসন্ন প্রায় উল্লেখ করে আবেগ আপ্লুত কন্ঠে তাঁদের উদ্দেশ্যে বলেন ‘এত কষ্ট আর ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত দেশের স্বার্থে দুর্নীতি অবিচার, অন্যায়, শোষণের বিরুদ্ধে আমরণ কোন আপোষ নাই। বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক হয়ে নেতাদের শেখ হাসিনার ত্যাগী চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে সুপথে চলার আবেদন জানিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের সাবধান থাকার আহবান জানান আর বর্তমান ও আগামী প্রজন্মের উদ্দেশ্যে বলেন গভীর আন্তরিকতা এবং মনযোগ সহ মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস পাঠ করা, প্রকৃত মুক্তিযুদ্ধাদের কাছ থেকে সে সময়ের বিভিন্ন ঘটনাবলি শুনতে পরামর্শ দেন এবং একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে প্রজন্মের উদ্দেশ্যে উপদেশবাণী হিসেবে বলেন ন্যায়নিষ্ঠতা, সততা, লেখাপড়া ও কঠোর পরিশ্রম করে সুনামের সাথে দেশ কে এগিয়ে নিতে হবে। মায়ের ফরমায়েশ পেয়ে পান সুপারি কিনতে বাড়ী থেকে বের হয়ে আর ফিরে আসেন নি, গায়েব হয়ে গিয়েছিলেন। তার কয়েকমাস পর গোপনে রাতের আঁধারে অস্ত্র হাতে এসে বীর মুক্তি সেনা মায়ের কাছে হাজির হন। স্মৃতিচারণ করেন সামান্য দূরে ও আর নিজাম রোড এর কাকলী ভবনে অবস্থানের জীবনমরণ সন্ধিক্ষণ এর দিনগুলি। সহযোদ্ধা শাহ আলম বীরোত্তম আর কমান্ডার এ ডাব্লিউ চৌধুরীর সাথে ভুয়া পরিচয় পত্র নিয়ে প্রতিমুহূর্তের সেই কঠিনতম সংকটের দিনরাতের কথা। নির্লোভ, নিরহংকার, ন্যায়নিষ্ঠ, ধর্মপ্রাণ নিভৃতচারী এই বীরমুক্তিযোদ্ধা এখন দুরারোগ্য ঘাতক ব্যাধির করালগ্রাসে কষ্টদায়ক জীবনের বোঝা নিয়ে সংকটাপন্ন অবস্থায় নিজ বাস ভবনে অবস্থান করছেন। মাত্র এক বছর আগে ঘাতকব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে সুখেদুঃখের আজীবনের সঙ্গীকে হারিয়েছেন।
দুই কন্যা আর এক পুত্রের জনক এই বীর সন্তান শারীরিক শক্তিসামর্থ্য থাকা অবস্থায় মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয় এর মাননীয় মন্ত্রীর সাক্ষাৎ কামনা করে ব্যর্থ হয়েছেন বলে জানালেন! সম্ভবত মন্ত্রীজীর এমন বিরল সৌভাগ্য মিস হয়ে গেল। অনুতাপ আক্ষেপের বিষয় নিজ বাসায় এমন কঠিন রোগাক্রান্ত হয়ে ধুকছেন, কিন্ত নিয়ম মাফিক মুক্তিযোদ্ধাদের বিধিবদ্ধ ভাতা ছাড়া এমন অসুস্থ বীর সেনাদের কি আর কিছুই পাওয়ার নেই? রাষ্ট্র – সরকারের আর কিছু কি করার নেই? দেশের জন্য, স্বাধীনতার জন্য সকল চাওয়াপাওয়া কে তুচ্ছজ্ঞান করা মুক্তিযোদ্ধাদের আমরা কিন্ত যথোপযুক্ত মর্যাদায় অভিষিক্ত করতে পারিনি, জীবনে মরণে আল্লাহ তাঁদের সহায় হউন। আর আসুন আমরা এই মহান মুক্তিযোদ্ধার আরোগ্য কামনা, হায়াত দারাজসহ সকল মুক্তিযোদ্ধার জন্য আল্লাহর দরবারে দোয়া করি।