উখিয়ার লাল পাহাড়ে আরসার আস্তানা, অস্ত্র, গ্রেনেড ও রকেট সেল উদ্ধার

২ সন্ত্রাসী গ্রেপ্তার

এম. এ আজিজ রাসেল, কক্সবাজার | বুধবার , ১৫ মে, ২০২৪ at ৩:৪০ অপরাহ্ণ

কক্সবাজারের উখিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্প সংলগ্ন লাল পাহাড়ে আরসার আস্তানার সন্ধান পেয়েছে র‌্যাব। বুধবার (১৫ মে) ভোররাতে সেখানে দুঃসাহসিক অভিযান চালানো হয়।

অভিযানে বাংলাদেশে আরসার অন্যতম প্রধান সমন্বয়ক ও কমান্ডার মো. শাহনুর প্রকাশ মাস্টার সলিমসহ ২ জন আরসা সন্ত্রাসীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এসময় উদ্ধার করা হয় বিপুল পরিমাণ অস্ত্র, গ্রেনেড ও রকেট সেল।

আজ বুধবার দুপুরে অভিযান নিয়ে লাল পাহাড় এলাকায় সাংবাদিকদের ব্রিফিং করা হয়। ব্রিফিংয়ে র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার আরাফাত ইসলাম বলেন, সম্প্রতি ক্যাম্পে ঘটে যাওয়া হত্যাকাণ্ড এবং বিভিন্ন সন্ত্রাসী ঘটনার প্রেক্ষিতে র‌্যাব-১৫ পুনরায় গোয়েন্দা তৎপরতা ও নজরদারি শুরু করে। পার্শ্ববর্তী দেশে সৃষ্ট সংঘর্ষকে কাজে লাগিয়ে আরসাসহ সশস্ত্র সন্ত্রাসী গ্রুপগুলো পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে কিছু আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে আসার একটি তথ্য র‌্যাবের নিকট আসে।

এছাড়াও আরসা নেতৃত্ব শুন্য হয়ে পড়ায় পুনরায় পুনঃসংগঠিত হওয়ার লক্ষ্যে পার্শ্ববর্তী দেশ হতে কিছু নেতৃপর্যায়ে আরসা সদস্যকে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পাঠিয়েছে বলে তথ্য পায় র‌্যাব।

প্রাপ্ত তথ্যের প্রেক্ষিতে র‌্যাব-১৫ কার্যক্রম শুরু করে এবং জানতে পারে, মাস্টার সেলিম বর্তমানে বাংলাদেশের আরসার প্রধান হিসেবে নেতৃত্ব দিচ্ছে। তার নেতৃত্বে পুনরায় হত্যাসহ বিভিন্ন অপরাধ কর্মকান্ড পরিচালনা এবং পার্শ্ববর্তী দেশ হতে অস্ত্র-গোলাবারুদ সংগ্রহ করে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ত্রাস সৃষ্টি করছে।

এরই ধারাবাহিকতায়, র‌্যাব-১৫ এর একটি চৌকস আভিযানিক দল গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অবগত হয়ে উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্প সংলগ্ন লাল পাহাড়ে আরসার আস্তানায় অভিযান পরিচালনা করে। অভিযানে বর্তমানে বাংলাদেশে আরসার অন্যতম প্রধান সমন্বয়ক ও কমান্ডার মোঃ শাহনুর প্রকাশ মাস্টার সলিমসহ দুইজন আরসা সন্ত্রাসী গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।

এ সময় তাদের কাছ থেকে ৫টি গ্রেনেড, ৩টি রাইফেল গ্রেনেড, ১০টি দেশীয় তৈরী হ্যান্ড গ্রেনেড, ১৩টি ককটেল, ১টি বিদেশী রিভলবার, ৯ রাউন্ড ৯ এমএম পিস্তলের এ্যামুনিশন, ১টি এলজি এবং ৩টি ১২ বোর কার্তুজ উদ্ধার করা হয়।

গ্রেফতার মো. শাহনুর প্রকাশ মাস্টার সলিম উখিয়া ১৫ নং ক্যাম্পের সৈয়দুল আবেরার ছেলে ও মো. রিয়াজ (২৭) বালুখালী ০৮/ডব্লিউ রোহিঙ্গা ক্যাম্প, ব্লক-এ/২৩ এর মৃত মোহাম্মদ নুরের ছেলে।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, মো. শাহনুর প্রকাশ মাস্টার সলিম ২০১৭ সালের পার্শ্ববর্তী দেশ হতে অবৈধভাবে বাংলাদেশে প্রবেশ এবং ক্যাম্প-১৫ এ বসবাস শুরু করে। সে পার্শ্ববর্তী দেশে থাকাকালীন সেখানকার জোন কমান্ডারের দায়িত্বে নিয়োজিত ছিল। এছাড়াও আরসা প্রধান আতাউল্লাহ আবু আম্মার জুনুনির দেহরক্ষী হিসেবে দুই মাস দায়িত্ব পালন করে। বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শরণার্থী হিসেবে ২০১৭ সালে আসার পর মৌলভী আকিজের মাধ্যমে আরসায় পুনরায় যোগদান করে।

আরসার হয়ে আধিপত্য বিস্তার কোন্দলসহ খুন, অপহরণ, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অপরাধের সাথে সম্পৃক্ত হয়ে পড়ে। অস্ত্র চালনাসহ বিভিন্ন বিস্ফোরকের উপর পারদর্শী। প্রাথমিকভাবে ক্যাম্প-১৫ এর কমান্ডার হিসেবে তাকে নিয়োগ দেয়া হয়। সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে আরসা নেতৃত্ব শূণ্য হয়ে পড়ায় সে বাংলাদেশে আরসার প্রধান সমন্বয়ক হিসেবে দায়িত্ব নেয়। পার্শ্ববর্তী দেশে সৃষ্ট সংঘর্ষের ফলে লুটকৃত অস্ত্র-গোলাবারুদ বিভিন্ন মাধ্যম হতে সংগ্রহ করে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ত্রাশ সৃষ্টি করে। যার ফলশ্রুতিতে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পুনরায় আধিপত্য বিস্তার কেন্দ্রীক মারামারি, সংঘর্ষ ও হত্যার ঘটনা ঘটছে। তার বিরুদ্ধে ৩টি হত্যা মামলাসহ অন্যান্য বিভিন্ন অপরাধে একাধিক মামলা রয়েছে।

এছাড়া গ্রেফতার মো. রিয়াজ ২০১৭ সালে বাস্তুচ্যুত হয়ে পার্শ্ববর্তী দেশ হতে অবৈধভাবে বাংলাদেশে প্রবেশ করে এবং বসবাস শুরু করে। সে ২০১৮ সালে মৌলভী মোঃ ইব্রাহিমের মাধ্যমে আরসায় যোগদান এবং প্রাথমিকভাবে আরসার হয়ে পাহারাদারের দায়িত্ব পালন করে। এ সময় সে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীসহ আরসা বিরোধী সংগঠনের সদস্যদের গতিবিধি লক্ষ্য করতো। পরবর্তীতে ২০১৯ সালের মাঝামাঝি সময়ে পুনরায় পার্শ্ববর্তী দেশে ফিরে যায় এবং সেখানে ৬ মাসের সামরিক বিভিন্ন বিষয়াদিসহ মাইন, বোমা, হাত বোমা ও বিস্ফোরক তৈরীতে প্রশিক্ষণ লাভ করে। পরবর্তীতে পুনরায় বাংলাদেশে প্রবেশ করে গ্রেফতারকৃত মাস্টার সলিমের অন্যতম সহযোগী হয়ে বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকান্ডে অংশগ্রহণ করতো বলে জানা যায়। তার বিরুদ্ধে ১টি হত্যা মামলা মামলা সংক্রান্তে তথ্য পাওয়া যায়।

এসময় র‌্যাব-১৫ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল এইচ এম সাজ্জাদ হোসেন বলেন, লাল পাহাড়ে আরসার আস্তানা থেকে উদ্ধারকৃত বিস্ফোরকদ্রব্যাদি সমূহ অনিরাপদ, ঝুঁকিপূর্ণ ও সংবেদনশীল হওয়ায় বিজ্ঞ চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত, কক্সবাজার হতে যথাযথ অনুমতি গ্রহণপূর্বক বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বম্ব ডিসপোজাল ইউনিট কর্তৃক নিষ্ক্রিয় করা হয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধমহেশখালীতে ডাকাতের গুলিতে আহত পুলিশ সদস্য
পরবর্তী নিবন্ধমীরসরাইয়ে কবর খুঁড়তে গিয়ে পাওয়া গেলো গ্রেনেড