ইতিহাস বদলে দেওয়া জয়ে বিশ্বকাপ শুরু পাকিস্তানের

ভারতের শোচনীয় হার

ক্রীড়া প্রতিবেদক | সোমবার , ২৫ অক্টোবর, ২০২১ at ৫:০১ পূর্বাহ্ণ

পাকিস্তানের গ্রেট ক্রিকেটারের তালিকাটা বেশ লম্বা। ইমরান খান, জাবেদ মিয়ানদাদ, ওয়াসিম আকরাম, ইনজামাম উল হক এবং সবশেষ শহীদ আফ্রিদি। এদের সবার মধ্যে একটি জায়গায় দারুণ মিল রয়েছে। তা হচ্ছে তাদের কারো নেতৃত্বে বিশ্বকাপে ভারতকে হারাতে পারেনি পাকিস্তান। সেটা ওয়ানডে বিশ্বকাপ হোক আর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। জয়ের পাল্লা শতভাগ ভারতের। সংখ্যার হিসেব করলে বিশ্বকাপে ১২ ম্যাচের ১২টিতেই জিতেছে ভারত। যেখানে ওয়ানডে বিশ্বকাপে ৭টি আর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ৪টি। ২০০৭ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ম্যাচটি টাই হয়েছিল। সে টাই ম্যাচটিও টাইব্রেকারে জিতেছিল ভারত। তাই গতকাল আরেকটি বিশ্বকাপ ম্যাচ জয়ের পথে শতভাগ ফেভারিট হিসেবে পাকিস্তানের বিপক্ষে মাঠে নেমেছিল ভারত। লক্ষ্য ছিল ব্যবধানটা ১৩-০ করা। অপরদিকে পাকিস্তানের উপর যেন পাহাড়সম চাপ। তবে সে চাপে ভেঙ্গে পড়েনি বাবর আজমের দল। আগের সব ইতিহাসকে মিথ্যে প্রমাণ করে বিশ্বকাপে ভারতকে প্রথমবারের মত হারের তেতো স্বাদ দিল পাকিস্তান। এবারের বিশ্বকাপে দুর্ধর্ষ দল হিসেবে দেখা হচ্ছে ভারতকে। সে ভারতকেই কিনা আকাশ থেকে একেবারে মাটিতে নামিয়ে নিয়ে আসল পাকিস্তান। বিশ্বকাপ খেলতে আসার আগে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বাবর আজমদের বলেছিলেন ভয়ডরহীন ক্রিকেট খেলে তারা যেন ভারতকে হারের স্বাদ দিয়ে বিশ্বকাপ শুরু করে। ইমরানের কথা রাখলেন বাবর আজমরা। যে কাজ ইমরান খান করতে পারেননি সেটা পূর্বসূরীকে উপহার দিলেন বাবর আজম। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারতকে উড়িয়ে দিয়ে বিশ্বকাপ শুর করল পাকিস্তান। এমন সূচনা যেন আরাধ্য ছিল পাকিস্তানের জন্য। সেই আরাধ্য সূচনা করল বাবর আজমের দল। ভারতকে ১০ উইকেটে উড়িয়ে দিয়েছে পাকিস্তান ।
ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যকার ক্রিকেট ম্যাচ আর আট দশটি ম্যাচের মত নয়। এই দু’দলের ম্যাচটি খেলার মাঠ ছাপিয়ে চলে যায় দু’দেশের সীমানা পর্যন্ত। দু’দলের ক্রিকেট ম্যাচ মানে যেন অন্যরকম এক যুদ্ধ। যেখানে স্বাভাবিক খেলাও খেলতে পারেনা ক্রিকেটাররা। রাজ্যের চাপ যেন পেয়ে বসে ক্রিকেটারদের। তবে সে চাপ যারা সরাতে পারে শেষ হাসিটা তারাই হাসে। গত ১২ মোকাবেলায় ভারত হেসেছে একতরফা। কিন্তু অপয়া তেরতে এসে থামল ভারতের জয়রথ। প্রতিশোধের নেশায় মত্ত থাকা পাকিস্তানের কাছে এই জয়টাকে যেন বিশ্বজয়ের সমান। নাহয় ম্যাচ শেষে কেমন এমনভাবে উদযাপন করবে! যার নেতৃত্বে ইতিহাস বদলে দিয়েছে পাকিস্তান সেই বাবর আজম দলকে সামনে থেকে শুধু নেতৃত্বই দেননি টেনে নিয়ে গেছেন জয়ের বন্দরে। একজন যোগ্য নেতাই যেন এই বাবর আজম। বোলারদের দিয়ে ভারতের ব্যাটসম্যানদের বেধে রাখার পর ব্যাট হাতে নিজেই জয়ের বন্দরে নিয়ে গেছেন দলকে। তাইতো এই জয়ের মহাত্ন তার কাছে অন্যরকম। যদিও ম্যাচের আগে বরাবরই বলেছেন, এই ম্যাচটিও তাদের কাছে আর অন্যসব ম্যাচের মতই। কিন্তু মাঠের প্রতিক্রিয়া বুঝিয়ে দেয় তাদের কাছে এই ম্যাচের গুরুত্ব কতটুকু। সে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে শেষ হাসি পাকিস্তানের।
টসে জিতে ভারতকে ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ জানিয়েছিল পাকিস্তান অধিনায়ক বাবর আজম। ইনিংসের প্রথম ওভারেই রোহিত শর্মাকে ফিরিয়ে অধিনায়কের সিদ্ধান্তের যৌক্তিকতা প্রমাণ করেন শাহিনশাহ আফ্রিদি। নিজের দ্বিতীয় ওভারে লোকেশ রাহুলকে বোল্ড করে উল্লাসে মাতেন শাহিনশাহ আফ্রিদি। এক প্রান্ত আগলে রাখা অধিনায়ক বিরাট কোহলিকে সঙ্গ দিতে পারেননি সুরিয়া কুমার যাদবও। ১১ রান করে ফিরেছেন যাদব। তবে চতুর্থ উইকেটে রিশভ পান্ত এসে কোহলির সাথে যোগ দিলে গতি বাড়ে রানের চাকার। ৫৩ রানের জুটি গড়েন দুজন। শাদাব খানকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে তারই হাতে ক্যাচ দেন পান্ত। ৩০ বলে ২টি চার এবং ছক্কার সাহায্যে ৩৯ রান করেন পান্ত। এরপর বলতে গেলে একাই লড়ে গেছেন বিরাট কোহলি। ঠিক সঙ্গ বলতে যা বুঝায় তা দিতে পারেনি তেমন কেউই। রবীন্দ্র জাদেজার ১৩ এবং হার্দিক পান্ডিয়ার ১১, যা একটু সহযোগিতা ছিল। শেষ পর্যন্ত ভারত যে ১৫১ রানে যেতে পেরেছে তার সিংহভাগ অবদান বিরাট কোহলির। দ্বিতীয় স্পেলে বল করতে আসা শাহিনশাহ আফ্রিদি ফেরান কোহলিকে। ফেরার আগে ৪৯ বলে ৫৭ রান করে আসেন ভারতীয় অধিনায়ক। তার ইনিংসে ৫টি চার এবং একটি ছক্কার মার ছিল। পাকিস্তানের পক্ষে সফল বোলার শাহিনশাহ আফ্রিদি ৩১ রানে নিয়েছেন ৩ উইকেট। ২টি উইকেট নিয়েছেন হাসান আলি। তবে তার জন্য খরচ করতে হয়েছে ৪৪ রান।
১৫২ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে পাকিস্তানের দুই ওপেনার মোটেও তাড়াহুড়ো করেনি। মারার বল মেরেছেন আবার ছাড়ার বল ছেড়েছেন। যেটা মেরেছেন সেটা একেবারে সীমানার ওপারে। প্রায় ৮ এর কাছাকাছি রানরেটকে কখনোই নিজেদের উপর চেপে বসতে দেয়নি বাবর আজম এবং মোহাম্মদ রিজওয়ান। অবিচল আস্থায় ছুটে চলেছেন লক্ষ্যের পানে। ১৩ বল এবং পুরো দশ উইকেট হাতে রেখে ঐতিহাসিক জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে পাকিস্তান। বাবর আজম অপরাজিত ছিলেন ৬৮ রানে। তার ৫২ বলের ইনিংসটিতে ৬টি চার এবং ২টি ছক্কার মার ছিল। অপর ওপেনার রিজওয়ান অপরাজিত ছিলেন ৭৯ রানে। তার ৫৫ বলের ইনিংসে ৬টি চার এবং তিনটি ছক্কার মার ছিল। তবে ম্যাচ সেরা হয়েছেন দুর্দান্ত বল করে ৩ উইকেট নেওয়া শাহিনশাহ আফ্রিদি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচসিক জেনারেল হাসপাতাল কেন্দ্রেও দেওয়া হবে ফাইজারের টিকা
পরবর্তী নিবন্ধপুলিশ পরিদর্শকের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা