ইউক্রেনে চলমান সামরিক অভিযান তাৎক্ষণিকভাবে বন্ধ করতে রাশিয়াকে নির্দেশ দিয়েছে আন্তর্জাতিক বিচার আদালত- আইসিজে। কিয়েভের অভিযোগের বিষয়ে শুনানি করে গত বুধবার প্রাথমিক এই আদেশ জারি করে জাতিসংঘের এই সর্বোচ্চ আদালত। ১৩-২ ভোটে সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামতের ভিত্তিতে দেওয়া আদেশে আদালত বলেছে, ২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনের ভূখণ্ডে শুরু করা সামরিক অভিযান তাৎক্ষণিকভাবে স্থগিত করতে হবে রুশ ফেডারেশনকে। আদেশে আরও বলা হয়, মস্কো নিয়ন্ত্রিত বা সমর্থিত অন্য কোনো বাহিনীও যাতে সামরিক অভিযান না চালায় সেটাও রাশিয়াকে নিশ্চিত করতে হবে। খবর বিডিনিউজের।
এই আদালতের আদেশ মানার বাধ্যবাধকতা থাকলেও, আদেশের বাস্তবায়ন নিশ্চিত করার সরাসরি কোনো উপায় আইসিজের নেই এবং অতীতে খুব কম ক্ষেত্রেই দেশগুলো আদেশ অমান্য করেছে। রাশিয়া গত ২৪ ফেব্রুয়ারি সামরিক আগ্রাসন শুরুর পরপরই আইসিজেতে অভিযোগ করে ইউক্রেন। সেখানে বলা হয়, পূর্ব ইউক্রেনে গণহত্যা রোধের যে অজুহাত তুলে এই সামরিক অভিযান শুরু করেছে মস্কো, তার কোনো প্রমাণ মেলেনি। মামলার শুনানিতে ইউক্রেন বলেছে, পূর্ব ইউক্রেনে গণহত্যা চালানোর কোনো হুমকি নেই, এবং জাতিসংঘের ১৯৪৮ সালের সনদ অনুযায়ী গণহত্যা রোধে সামরিক অভিযান পরিচালনার সুযোগ নেই। ওই সনদে রাশিয়াও সই করেছে। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন চলমান সামরিক অভিযানকে একটি বিশেষ সামরিক পদক্ষেপ হিসেবে বর্ণনা করেছেন এবং দাবি করছেন, পূর্ব ইউক্রেনের রুশভাষী জনগোষ্ঠীকে রক্ষার জন্যই এটা জরুরি।
আইসিজের ৭ মার্চের শুনানিতে অবশ্য রাশিয়া অংশ নেয়নি। বরং তারা ইউক্রেনের মামলাকে অমূলক বলে দাবি করেছে। অবশ্য মস্কোর পক্ষ থেকে একটি লিখিত বিবৃতিতে আদালতে বলা হয়েছে, আইসিজের উচিত হবে না এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া। রাশিয়ার পক্ষ থেকে বলা হয়েছে প্রেসিডেন্ট পুতিন গণহত্যা শব্দটি দিয়ে যা বোঝাতে চেয়েছেন তা নিজে থেকেই গণহত্যা সনদের সঙ্গে মিলে যাবে না। এই সনদের ব্যাখ্যা নিয়ে বিতর্কের মীমাংসা না করে আদালতের এখতিয়ার নেই এ বিষয়ে কথা বলার।
অবশ্য বিচারকমণ্ডলীর প্রধান জোয়ান ডোনোহ বলেন, দুই দেশ গণহত্যা সনদের ব্যাখ্যা নিয়ে আপত্তি জানিয়ে রেখেছে এবং এর বাস্তব এখতিয়ার নিয়ে পরে সিদ্ধান্ত হবে। তবে জরুরি পরিস্থিতিতে ইউক্রেনের সংঘাত চলমান থাকায় আদালত জরুরি পদক্ষেপ হিসেবে আদেশ দিতে পারে, এমনকী আদালতের এখতিয়ার আছে কিনা তা মীমাংসা হওয়ার আগেই।
যুক্তরাষ্ট্রকে রাশিয়ার হুঁশিয়ারি : বিশ্বের সেরা পরাশক্তিকেও সাধারণের স্তরে নামিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা মস্কোর আছে বলে যুক্তরাষ্ট্রকে হুঁশিয়ার করে বলেছে রাশিয়া। রাশিয়াকে একঘরে করে রাখতে পশ্চিমা দেশগুলো হিংস্র রুশোফোবিক চক্রান্তে ইন্ধন দিচ্ছে বলেও গতকাল বৃহস্পতিবার তারা অভিযোগ করেছে, জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। ইউক্রেন নিয়ে পশ্চিমা দেশগুলো, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে রাশিয়ার তুমুল কথার লড়াই চলছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এরই মধ্যে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে যুদ্ধাপরাধীও বলেছেন। তার পাল্টায় ২০০৮ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পদে থাকা দিমিত্রি মেদভেদেভ বলেছেন, রাশিয়াকে হাঁটু গেড়ে বসানোর চেষ্টায় যুক্তরাষ্ট্র ঘৃণ্য রুশোফোবিয়া (রাশিয়াভীতি) উসকে দিচ্ছে। এটা কাজ করবে না। আমাদের সব উদ্ধত শত্রুকে সাধারণের স্তরে নামিয়ে দেওয়ার রাখার ক্ষমতা রাশিয়ার আছে, বলেছেন এখন রাশিয়ার নিরাপত্তা পরিষদের ডেপুটি সেক্রেটারি মেদভেদেভ।