আ’লে রসুল গাউছুল আযম বাবা ভাণ্ডারী

আওলাদে রসুল, আওলাদে গাউছুল আযম মাইজভান্ডারী

ডা. সৈয়দ মিশকাতুন নূর মাইজভান্ডারী | বৃহস্পতিবার , ৪ এপ্রিল, ২০২৪ at ১০:৩৪ পূর্বাহ্ণ

মহান রব্বুল আলামিন সৃষ্টির সেরা জীব মানবকে বন্দেগীর জন্য সৃষ্টি করে বন্দেগী আমরা কিভাবে করব তা জানার ও হাতে কলমে শিক্ষার জন্য যুগে যুগে আসমানী কিতাব ও পথপ্রদর্শক প্রেরণ করেছেন। সুরা রাদে ইরশাদ হয়েছে লি কুল্লে আযালিন কিতাব, লি কুল্লে কওমিন হাদীঅর্থাৎ প্রত্যেক যুগে আসমানি কিতাব ও প্রত্যেক কওমের জন্য হাদী (পথ প্রদর্শক) প্রেরণ করা হয়েছে। হযরত আদম সফিউল্লাহ (🙂 হতে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (দঃ) পর্যন্ত নবুওয়াত ও রেসালত এবং তার ধারাবাহিকতায় নবুওয়াতের পরিসমাপ্তির পর বেলায়ত বহাল থাকবে। রউফুর রহিম হযরত মুহাম্মদ (দঃ) এর মর্যাদা অনন্য। নবীপাক (দঃ) হলেন অদৃশ্য রবকে দেখার আয়না। হাদীসে কুদসীতে ইরশাদ হয়েছে মান রা আনি ফাকাদ রাআল হক্ক। অর্থাৎ যারা আমাকে দেখেছে তারা আল্লাহকে দেখেছে। সাহাবায়ে কেরামের অনন্য মর্যদার কারণ তারা ঈমান এনেছেন এবং নবী করিম (দঃ) কে দেখে অদৃশ্য আল্লাহর উপর ঈমান এনেছেন। আল্লাহ পাক যেমন অদৃশ্য থেকে নবী পাকের মাধ্যমে তাকে দেখার সুযোগ দিয়েছেন, তেমনিভাবে নবী পাক বেছালে হক অর্থাৎ পরকালীন অদৃশ্য জগতে যাওয়ার পূর্বে নবীকে দেখার সুযোগ দিয়েছেন আহলে বায়তে রসুল (দঃ) এর মাধ্যমে। হযরত উম্মে সালমা (রা🙂 বর্ণিত হাদিসে নবীজী কর্তৃক নিজ গৃহে চাদরাবৃত হয়ে নিজেকে, মাওলা আলী, মা ফাতেমা, ইমাম হাসানহোসাইনকে আল্লাহুম্মা হাউলায়ে আহলে বায়তবলে আহলে বায়তে খাস হিসেবে পরিচয় করিয়ে আল্লাহর নিকট ফরিয়াদ করেন তাদেরকে অপবিত্রতা থেকে মুক্ত করতে। আল্লাহ পাক সুরা আহযাবে বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহর ইচ্ছা তোমাদের (আহলে বায়ত) থেকে সকল অপবিত্রতা দূর করতে এবং তোমাদের সম্পূণরূপে পুতঃপবিত্র করতে। সুরা শুআরায় ইরশাদ হয়েছে হে নবী আপনি বলুন আমি তোমাদের জন্য যা কিছু করেছি, তার বিনিময় চাই না। শুধু চাই আমার আহলে বায়তের প্রতি মহব্বত। আহলে বায়তের প্রধান সদস্য মাওলা আলী সম্পর্কে বলেন, ‘আমি ও আলী একই নুর হতে সৃষ্ট। হাদীসে ইরশাদ হয়েছে, ‘আনা মদিনাতুল ইলম ওয়া আলিউন বাবুহাঅর্থাৎ আমি ইলমুল বেলায়তের শহর আলী তার দরজা। লক্ষ সাহাবার সম্মুখে নবী পাক (দঃ) বলেন, ‘মান কুনতু মওলা ফাহাজা আলিউন মওলা। অর্থাৎ আমি নবী যার মওলা আলী ও তার মওলা। এ থেকে সুস্পষ্ট যে নবী পাক (🙂 পর্দা করার পর উনার সর্বোচ্চ উন্নীত বেলায়ত (বেলায়তে ওজমা) এর বিকাশ প্রকাশস্থল মওলা, অভিভাবক, ইমামুল আউলিয়া মওলা আলী শেরে খোদা (🙂। যুগের সন্ধিক্ষণে যখন ইসলামী চেতনা অবক্ষয়ের পথে তখন মহান রবের পক্ষ থেকে আলে রসুলগণের মধ্য হতে বেলায়তের ইমামিয়ত, মুজাদ্দেদিয়ত, কুতুবিয়ত অর্থাৎ সর্বোচ্চ মকামের গাউছিয়ত দিয়ে প্রেরণ করা হয় দ্বীনকে পুনঃজাগরিত করার জন্য। তার ধারাবাহিকতায় বাগদাদ শরীফে মুহিউদ্দিন আবদুল কাদের জিলানি (🙂 এবং আজমীরে খাজা মঈনউদ্দিন চিশতী আজমেরি (🙂 মশহুর হন। সে সময় সর্বোচ্চ স্তরের বেলায়ত কুতুবুল আকতাব, মোজাদ্দেদ, ইমামুল আউলিয়া নামে পরিচিত ছিল। পরবর্তীতে সর্বোচ্চ মকামের গাউছিয়তের আসীনকে গাউছুল আযম উপাধিতে ভূষিত করা হয়। মূলত গাউছুল আযম হলেন খলিফাতুর রসুলুল্লাহ (দঃ)। রসুলে পাকের চরম উন্নীত বেলায়তের যারা মোহরদান অর্থাৎ প্রত্যয়নকারী তারাই গাউছুল আযম। হাদীসের বাণীতালাবুল ইলমে ফরিদাতুন আলা কুল্লে মুসলিমিন ওয়াল মুসলিমাতঅর্থাৎ প্রত্যেক মুসলমান নরনারীর জন্য জ্ঞান অর্জন ফরজ। *মান আরাফা নাফসাহু ফাকাদ আরাফ রাব্বাহু। যে নিজেকে জানে রবকে জানে। প্রত্যেক গাউছুল আযম এ আপ্তবাণীগুলো ধারণ করে কুরআন, হাদীস, ফিকাহর জ্ঞানে চরম উৎকর্ষ সাধন করে বায়াতের ব্যাপারে, সুরা ফাতহর হুকুম, “ইন্নাল্লাজিনা যুবাউনাকা ইন্নামা য়ুবাউনাল্লাহা য়াদউল্লাহে ফাওকায়েদীহিমপালন করে পীরের বায়াত গ্রহণ করেন। স্বীয় পীরের মাধ্যমে আধ্যাত্মিক চরম উৎকর্ষ সাধন করে এক সময় খলিফাতুর রসুল (গাউছুল আযম) হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। কুরআনের বাণী; সিবগাতাল্লাহা ওয়ামান আহসানা সিবগাতাবাস্তবায়ন করে নিজেদের সম্পূর্ণ জীবনকে আল্লাহ ও রসুলের রঙে রঙিন করেন। দয়াল নবী নুরাম মিন নুরিল্লাহ অর্থাৎ আল্লাহর নূরে নুরান্বিত। গাউছুল আযম কুতুবুল আকতাব রসুলে পাকের খলিফা হিসেবে আল্লাহ নুর হতে নিসবত প্রাপ্ত। গাউছুল আযম হযরত শাহ আহমদ উল্লাহ প্রকাশ হযরত কেবলা হেদায়তের ধারাবাহিকতায় ১৮২৬ সালে এ ধরাধামে এসে মাইজভাণ্ডারি ত্বরিকা প্রবর্তন করেন এবং দীক্ষাগুরু হিসেবে অসংখ্য জলিল কদর অলীকে খেলাফত ও বেলায়ত অনুমোদন করে উপমহাদেশের ইসলাম প্রচারে মুখ্য ভূমিকা পালন করেন। ১৮৬৫ সালে গাউছুল আযম সৈয়দ গোলামুর রহমান প্রকাশ বাবা ভাণ্ডারী কেবলার বেলাদতকালীন হযরত কেবলা (🙂 কর্তৃক বাবা ভাণ্ডারীর (🙂 মাকে পীরানে পীরের মা সম্বোধন, বাবা ভাণ্ডারীর ২৫ বছর বয়সে হযরতের জুব্বা মোবারক নিজ হাতে পরিয়ে দিয়ে আনুষ্ঠানিক খেলাফত প্রদান, পরবর্তীতে হযরত কেবলার নির্দেশে সুন্নতে রসুল হেরা পর্বতের ধ্যান সাধনার ন্যায় বিভিন্ন পাহাড় পর্বতে নির্জনে মোরাকাবা মোশাহেদার জন্য প্রেরণ এবং হযরত কেবলার বেছালে হকের পূর্বে হযরত কেবলার খলিফাগণকে পাঠিয়ে বাবা ভাণ্ডারী কেবলাকে গহীণ অরণ্য ধ্যান সাধনস্থল থেকে ফিরিয়ে আনার কছিদা, *গাউছে ধনে (হযরত কেবলা) তোমায় নিতে পাঠাইয়াছেন রায়, মাইজভাণ্ডার সিংহাসনে (গাউছুল আযমিয়তের আসন) বসাব তোমায়হযরতের অন্যতম খলিফা বাহারুল উলুম আবদুল গণি কাঞ্চনপুরি কর্তৃক আয়নায়ে বারি কিতাবে বাবা ভাণ্ডারীকে খলিফাতুর রসুল (গাউছুল আযম) আখ্যা দেয়া, হযরতের অন্যতম খলিফা মুফতিয়ে আযম আমিনুল হক ফরহাদাবাদী কর্তৃক বাবা ভাণ্ডারীকে কুতুবুল আকতাব ফি হাজাজ জমান (জমানার গাউছুল আযম), ইমামে আহলে সুন্নাত আজিজুল হক শেরে বাংলা কর্তৃক দিওয়ানে আজীজে বাবা ভাণ্ডারী কেবলাকে গাউছুল আযম সম্বোধন করা ইত্যাদি বাবা ভান্ডারী কেবলার গাউছুল আযম পদে পদবান হওয়ার সাক্ষ্য বহন করে । গাউছুল আযম বাবা ভাণ্ডারী আশেকগণকে হক্কুল্লাহ (ফরজ, ওয়াজিব, নফল, মোস্তাহাব এবাদত) এবং হক্কুল এবাদ সৃষ্টির খেদমতের মাধ্যমে মানবের মধ্যে বিরাজমান সামাজিক, পারিবারিক, ধর্মীয় বিভক্তিকে সমাধান করে মানবকে সিরাতুল মোস্তাকিমে অধিষ্ঠিত করার ব্যাপারে চরম উৎকর্ষিত উছিলা হিসেবে আবির্ভূত হন। ‘উদউ ইলা সাবিলে রাব্বিকা বিল হিকমতে ওয়াল মওজিয়াতাল হাসানা। আল্লাহর প্রতি আহবানের হেকমতকে ব্যবহার করে ভারতীয় উপমহাদেশের সুর পাগল জনতাকে লাহওয়াল হাদীস (কুরুচিপূর্ণ অশ্লীল বাক্য) পরিহার করে তদস্থলে সুরের সাথে কালামের মাধ্যমে আল্লাহ, রসুল ও আহলুল্লাহগণের স্মরণকে সেমা হিসেবে মশহুর করে ত্বরীকায়ে মাইজভান্ডারীয়ার অনুসারীদের জন্য ধ্যান সাধনের নব দিগন্ত উন্মোচন করেন। যার ফলশ্রুতিতে রমেশ ফকির, রায়হান, সাহাপুরী, বন্দে আলী, গফুর হালীর মত সুফি কবির উদ্ভব হয়। তার জাহেরী জিন্দেগিতে অসংখ্য খলিফাগণকে গাউছিয়ত ও বেলায়ত দান করে সমগ্র বিশ্বে উত্তম মানবিক চর্চার মাধ্যমে ত্বরিকায়ে মাইজভান্ডারীয়ার চরম উৎকর্ষ ও বিস্তার লাভে মুখ্য ভূমিকা রাখেন। আহলুহগণের (নবী অলিগণ) মাধ্যমে আল্লাহ নিজেকে প্রকাশ করেন। সুরা হজে ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহর নিদর্শনসমূহ সম্মান কর, যাতে তোমাদের মধ্যে খোদাভীরুতা অর্জন হয়। আহলুল্লাহগণ নিঃসন্দেহে আল্লাহর সর্বোত্তম নিদর্শন। সুরা বনি ইসরাইলে ইরশাদ হয়েছে’, ‘হে হাবিব আপনি বলে দিন, তোমরা ডাক আমাকে আল্লাহ অথবা রহমান বলে। আল্লাহর রহমানি নামের নিসবতপ্রাপ্ত আহলুল্লাহ গাউছুল আযম সৈয়দ গোলামুর রহমান বাবা ভান্ডারীর বেছালে হক মহান ২২ শে চৈত্র উরশে পাকের প্রাক্কালে এ ক্ষুদ্র ইলমি প্রচেষ্টা তার প্রতি শ্রদ্ধার অর্ঘ্য হিসেবে মালিক কবুল করুন। আমিন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপ্রিয় নবিজীর প্রথম নারী জীবনীকার আয়েশা আল-বাউনিয়াহ
পরবর্তী নিবন্ধকাল আজকাল