আমেরিকা কি যুদ্ধে নামবে, জানা যাবে দু’সপ্তাহের মধ্যে

তেল আবিব ও হাইফার সামরিক কারখানায় ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা । ইরান থেকে ট্রাম্পকে সরে আসার আহ্বান স্টারমারের । যুক্তরাষ্ট্রকে সতর্ক করল রাশিয়াও

আজাদী ডেস্ক | শুক্রবার , ২০ জুন, ২০২৫ at ৬:০৮ পূর্বাহ্ণ

ইসরায়েল ইরানে প্রথম হামলা চালানোর পর দুই দেশের মধ্যে পাল্টাপাল্টি হামলা অব্যাহত রয়েছে। গতকাল সপ্তমদিনে এ হামলা আরো তীব্র হয়। ইসরায়েলের রাজধানী তেল আবিব ও বাণিজ্যিক শহর হাইফার উদ্দেশ্যে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালানোর দাবি করেছে ইরানের রেভ্যুলেশনারি গার্ড কর্প (আইআরজিসি)। আল জাজিরা বলছে, তেল আবিব এবং হাইফায় সামরিক কারখানাগুলোকে লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা শুরু হয়েছে। হামলা চলেছে ইসরায়েলি সেনার কমান্ড অ্যান্ড ইন্টেলিজেন্স সদর দফতরেও। তেল আবিবেও ইরানের একাধিক ক্ষেপণাস্ত্র উড়ে এসে পড়েছে। ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি ইরানি জনগণের উদ্দেশে বলেছেন, ‘যদি শত্রু বুঝতে পারে যে আপনি তাদের ভয় পান, তাহলে তারা আপনাকে ছেড়ে দেবে না।’ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সএর একটি পোস্টে তিনি বলেছেন, ‘এখন পর্যন্ত আপনাদের যে আচরণ ছিল তা চালিয়ে যান; শক্তি নিয়ে এই আচরণ চালিয়ে যান।’ এদিকে দক্ষিণ ইসরায়েলের বেয়ারশেবার সোরোকা হাসপাতাল ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই হামলার পর ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেছেন, ‘ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির ‘অস্তিত্ব আর থাকতে দেওয়া যাবে না।’ তবে হাসপাতাল লক্ষ্য করে হামলা চালানোর অভিযোগ অস্বীকার করেছে ইরান। জাতিসংঘের ইরানি মিশন সামাজিক মাধ্যম এক্সএ দেয়া একটি পোস্টে বলেছে, ইসরায়েল ‘মিথ্যা দাবি’ করেছে এবং এটা ‘স্পষ্টভাবে প্রত্যাখ্যান’ করছে তারা। এ পোস্টে বলা হয়েছে, ইরানের হামলাগুলো ‘সুনির্দিষ্ট’ এবং শুধু ‘ইরানের ওপর ইসরায়েলের আক্রমণে সরাসরি জড়িত এবং সমর্থনকারী স্থাপনাগুলোকে লক্ষ্য করেই চালানো হয়েছে।’

অপরদিকে ইসরায়েলের হয়ে আমেরিকা যুদ্ধে নামবে কি না, তা নিয়ে জল্পনা অব্যাহত রয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজেই সেই জল্পনা জিইয়ে রেখেছেন। বলে রেখেছেন, তিনি নামতেও পারেন, আবার নাও নামতে পারেন। কিন্তু তিনি কী করবেন, তা কেউ জানে না। তবে গতকাল রাতে সর্বশেষ খবরে বলা হয়েছে, ইরানইসরায়েল সংঘাতে যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি যোগ দেবে কিনা সে বিষয়ে দুই সপ্তাহের মধ্যেই সিদ্ধান্ত নেবেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। হোয়াইট হাউজের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছ থেকে সরাসরি এই বার্তা পৌঁছে দিয়েছেন। লেভিট বলেন, ট্রাম্প যুদ্ধ জড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়ার এই সময়সীমা দিয়েছেন। কারণ, তিনি বিশ্বাস করেন নিকট ভবিষ্যতে ইরানের সঙ্গে আলোচনায় বসার যথেষ্ট সুযোগ আছে। এই কূটনৈতিক প্রচেষ্টার জন্য ট্রাম্প দুই সপ্তাহ সময় দিয়েছেন।

যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের সঙ্গে ইরানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে যোগ দিলে এর পরিণতি ভয়াবহ হতে পারে বলে এর আগে হুঁশিয়ারি দেন ইরানের উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী সাইদ খতিবজাদেহ। বিবিসিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে খতিবজাদেহ বলেন, ‘ইরান কূটনীতি চায় কিন্তু তার দেশের বিরুদ্ধে বোমাবর্ষণ অব্যাহত থাকলেকেউ আলোচনায় যেতে পারবে না। যে মুহূর্তে এই আগ্রাসন বন্ধ হবে, অবশ্যই কূটনীতিই হবে প্রথম বিকল্প।’ তিনি স্পষ্ট করে বলেন, ‘এই যুদ্ধ আমেরিকার নয়। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এতে জড়িয়ে পড়লে ইতিহাস তাকে মনে রাখবে এমন এক যুদ্ধে নাম লেখানোর জন্য, যা তার ছিলই না।’

এদিকে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ের স্টারমার ইরানের বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপ থেকে সরে আসতে ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, এখানে সংঘাত ‘বৃদ্ধির বড় ঝুঁকি’ রয়েছে। তিনি সব পক্ষকে কূটনৈতিক সমাধান খোঁজার আহ্বান জানিয়েছেন। স্টারমার বলেছেন, এর আগে ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে বেশ কয়েক দফা আলোচনা হয়েছে এবং আমার মতে, এটিই এই সমস্যা সমাধানের উপায়।’ এমন সময়ে তার এই মন্তব্য এসেছে যখন যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি এই উত্তেজনা কমানোর উদ্দেশ্যে আলোচনার জন্য ওয়াশিংটন যাচ্ছেন। যেখানে তিনি ট্রাম্পের শীর্ষ কূটনীতিক মার্কো রুবিওর সাথেও দেখা করবেন।

গতকাল আমেরিকাকে সতর্ক করেছে রাশিয়াও। সে দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা জানান, আমেরিকা ইরানে হামলা চালালে তার পরিণাম ভয়ঙ্কর হবে।

এর আগে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হোয়াইট হাউসের এক কর্মকর্তাকে উদ্ধৃত করে মার্কিন সংবাদমাধ্যম ‘ব্লুমবার্গ নিউজ’ জানায়, চলতি সপ্তাহের শেষেই ইরানে হামলা চালানোর পরিকল্পনা করছে আমেরিকা! যদিও হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে এই দাবির আনুষ্ঠানিক সমর্থন মেলেনি। আবার সংবাদমাধ্যম সিএনএনএর প্রতিবেদন অনুযায়ী, ওয়াশিংটনের একটি অংশ চাইছেন, আমেরিকা এই যুদ্ধে নিজেদের জড়িয়ে ফেলুক। যুদ্ধে না জড়িয়েও কী ভাবে স্বার্থরক্ষা করা যায়, তা নিয়েও আলোচনা চলছে হোয়াইট হাউসে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকালুরঘাট সেতুতে ট্রেন দুর্ঘটনায় চালক ও সহকারীর দায় দেখছে তদন্ত কমিটি
পরবর্তী নিবন্ধবন্দরের ট্যারিফ বৃদ্ধি হলে রপ্তানিমুখী শিল্পখাত ক্ষতির সম্মুখীন হবে