তীব্র তাপদাহে জনজীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠলেও কৃষি বিভাগ বলছে, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ধান দ্রুত পাকছে। আরো কয়েকদিন এই তাপদাহ অব্যাহত থাকলে ধান পাকা যে শুরু হয়েছে তা আরো ত্বরান্বিত হবে। এটা কৃষকদের জন্য আশীর্বাদ হয়ে উঠেছে। এর ফলে কৃষকরা দ্রুত সময়ের মধ্যে ধান ঘরে তুলতে পারবেন বলে জানিয়েছেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের শস্য বিশেষজ্ঞরা। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে কালবৈশাখীর মতো ঝড় না হলে বোরোর বাম্পার ফলন হওয়ার সম্ভাবনার কথা জানায় কৃষি বিভাগ।
গত দুই বছরের তুলনায় এবার চট্টগ্রামে বোরো চাষ বেশি হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রার ৬৮ শতাংশ জমিতে উচ্চ ফলনশীল (উফশী) জাতের ধান আবাদ হয়েছে। তাই এ মৌসুমে কাঙ্ক্ষিত ফলনের ব্যাপারেও আশাবাদী কৃষি বিভাগ।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর চট্টগ্রামের অতিরিক্ত উপপরিচালক (শস্য) মো. ওমর ফারুক আজাদীকে বলেন, খরা চলমান থাকলেও বোরো ধানের জমিতে পানি থাকলে তেমন কোনো সমস্যা হবে না। বরং তাপদাহের কারণে ধান পাকা ত্বরান্তিত হচ্ছে। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে কালবৈশাখীর মতো ঝড় না হলে বোরোর বাম্পার ফলন হবে। জেলার বিভিন্ন উপজেলায় ইতোমধ্যে বোরো ধান কাটা শুরু হয়েছে। লোহাগাড়া ও রাঙ্গুনিয়ার গুমাই বিলে ৫ শতাংশের মতো ধান কাটা হয়েছে। মে’র প্রথম থেকে পুরোদমে কাটা শুরু হবে। এবার প্রতি হেক্টরে ৬ দশমিক ১৫ মেট্টিক টন বোরো উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ধান দ্রুত পেকে যাচ্ছে। তবে বাতাস না হয়ে বৃষ্টি হলে ধানের কোনো ক্ষতি হবে না, বরং আউশের বীজতলা তৈরি করতে কৃষকের সুবিধা হবে। তবে খরা দীর্ঘ হলে আউশ বিলম্ব হবে।
তিনি বলেন, খরা এবং তীব্র তাপদাহে বোরো ধানের জন্য এ মুহূর্তে করণীয় নিয়ে মাঠপর্যায়ে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের নির্দেশনা ও আশু করণীয় নিয়ে কৃষকের পাশে থাকার জন্য কৃষি মন্ত্রণালয় ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর নির্দেশনা দিয়েছে।
বোরো ধানের জমিতে পানি থাকায় এখনো পর্যন্ত কোনো উপজেলায় হিট শকের কারণে বোরোর ক্ষয়ক্ষতি হয়নি উল্লেখ করে উপপরিচালক বলেন, এর প্রধান কারণ হলো মাঠে ধান আধা পাকা এবং পাকা অবস্থায় আছে। যদি ধানগুলো ফ্লাওয়ারিং স্টেজে (ফুল অবস্থায়) থাকত তাহলে তাপমাত্রা বেশি হলে হয়তো সমস্যা হতো। যেহেতু বর্তমানে ফুল অবস্থায় কোনো ধান নেই, সেহেতু তাপের কোনো প্রভাব পরেনি। তবে তীব্র গরমে কৃষকের ধান কাটতে সমস্যা হচ্ছে। তাপমাত্রা কমে আসলে কাটার গতি আরো বাড়বে।
চট্টগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এবার চট্টগ্রামে ৬৭ হাজার ৭৯৯ হেক্টর জমিতে বোরো ধনের চাষ হয়েছে। তীব্র খরার কারণে জেলার কোনো উপজেলায় এখনো পর্যন্ত বোরোর কোনো ক্ষতি হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি। সবকিছু ঠিক থাকলে কৃষকরা ভালোভাবেই বোরো ঘরে তুলতে পারবে বলে আশা কৃষি বিভাগের।
মাঠ পর্যায়ে বাঁশখালী, রাঙ্গুনিয়া ও ফটিকছড়ি উপজেলার উপ–সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা আজাদীকে জানান, হিট অ্যালার্টের মাঝেও উপজেলা পর্যায়ে বোরো ফসল ঘরে তুলতে মাঠে কাজ করছেন কৃষকরা। প্রাকৃতিক দুর্যোগের শঙ্কায় এবার আগে থেকেই ধান কাটা শুরু করেছেন কৃষকরা। পাকা ধানের ম–ম গন্ধ বাতাসে ছড়াচ্ছে মিষ্টি ঘ্রাণ। কৃষকরা এ বছর সর্বস্ব দিয়ে ফলিয়েছেন সোনালি ধান। আর বাড়তি যত্নের কারণে ফলনও হয়েছে বাম্পার। বড় কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি ধান উঠবে কৃষকের গোলায়। তাই সকল ঝুঁকি এড়াতে পাকা ধান দ্রুত কেটে ঘরে তুলছেন কৃষকরা।
বাঁশখালী উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, বাঁশখালীতে ধান মাত্র কাটা শুরু হয়েছে। মে মাসের শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত লাগবে। আবাদ ভালো হয়েছে। ভালোভাবে কর্তন সম্পন্ন করতে পারলে কৃষক ভালো ফলন পাবেন। গত কয়েক বছরের তুলনায় এবার বোরো ধানের ফলন ভালো হয়েছে। বোরোর বাম্পার ফলনে কৃষক খুশি। এখনো কালবৈশাখী ঝড়ের বড় কোনো প্রভাব পড়েনি ধানে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে সোনালি ধান যথাসময়ে ঘরে তুলতে পারবেন কৃৃষকরা।