২৯ এপ্রিল, দিনটি এলে ফিরে আসে ১৯৯১ সালে ভয়াল প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড়ে স্বজন হারানো দুর্বিষহ সেই স্মৃতি। প্রতি বছর উপকূলবাসী গভীর শ্রদ্ধায় দিনটি স্মরণ করেন। সেই সাথে সামনে আসে বেড়িবাঁধ ও সুরক্ষিত উপকূলের দাবি। রায়পুরের খোর্দ গহিরার বাসিন্দা স্বজন হারা হাফেজ নুরুল আনোয়ার বলেন, ২৯ এপ্রিলের ঘূর্ণিঝড়ে আমি আমার মাসহ অনেক আত্মীয় স্বজনকে হারিয়েছি। সেদিনের পর থেকে এখনো মাকে খুঁজে পাইনি।
তবে দিন কিছুটা বদলেছে। ২০১৬ সালে সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ এমপির প্রচেষ্টায় আনোয়ারার উপকূলীয় মানুষের জানমাল রক্ষায় ৫৭৭ কোটি টাকার বেড়িবাঁধ উন্নয়ন প্রকল্প অনুমোদন করা হয়। চলতি বছরের জুনে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। ২০১৭ সাল থেকে একাধিক প্রকল্পের মাধ্যমে আনোয়ারার উপকূলীয় রায়পুর, জুইদন্ডিসহ বিভিন্ন ইউনিয়নে বেড়িবাঁধ নির্মাণ কাজ শুরু হয়ে বর্তমানে প্রকল্পের কাজ শেষ পর্যায়ে আছে। বেধিবাঁধ নির্মিত হওয়ায় গত ৩ বছর ধরে রায়পুর ইউনিয়নে বাঁধ ভেঙে এলাকা প্লাবিত হয়নি। এতে এলাকার মানুষ খুশি হলেও কাজের মান নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে প্রশ্ন রয়েছে। সমপ্রতি অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়েশা খান এমপি সরেজমিনে বেড়িবাঁধ পরিদর্শন করে অনিয়মের ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস প্রদান করেন।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, প্রকল্পের পোল্ডার এ এর অধীনে ৪৮ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ রয়েছে। পারকী সমুদ্র সৈকতের সাপ মারা খাল থেকে শুরু করে পরুয়াপাড়া, মধ্যম গহিরা, রায়পুর, বার আউলিয়া, ঘাটকূল, ফকিরহাট, সরেঙ্গা হয়ে সাপ মারা খাল হয়ে পারকি বিচ পর্যন্ত, পোল্ডার বি এর অধীনে শিকলবাহা হতে চাতরি, কৈখাইন, পরৈকোড়া, হাইলধর, বারখাইন, তৈলারদ্বীপ, বরুমচড়া, জঁইদন্ডি ভরাশংখ মুখ পর্যন্ত ৩১ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ রয়েছে। বর্তমানে পোল্ডার এ তে মধ্যম গহিরা বাইগ্যার ঘাট এলাকায় ৩০০ মিটার বাঁধ, ঘাটকুল এলাকায় ৭০০ মিটারের বেশি বাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ রয়েছে। তাছাড়া জুইদন্ডি ইউনিয়নেও ৫০০ মিটারের বেশি বাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ রয়েছে বলে জানা গেছে।
রায়পুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আমিন শরীফ জানান, আনোয়ারার উপকূলীয় অঞ্চলে বেড়িবাঁধ নির্মিত হওয়ায় গত তিন বছর ধরে এলাকায় এখনো সাগরের পানি ঢুকেনি। স্থানীয়দের জানমালের ক্ষতি হয়নি।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী কর্মকর্তা শওকত ইবনে সাহীদ জানান, ৫৭৭ কোটি টাকা ব্যয়ে আনোয়ারা ও পতেঙ্গা আংশিক বেড়িবাঁধ নির্মাণ কাজের প্রকল্পটি চলতি বছরের জুন মাসে শেষ হবে। বর্তমানে বাঁশখালী ও আনোয়ারা উপজেলায় যৌথভাবে আরো একটি উন্নয়ন প্রকল্প অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে। এ প্রকল্পে আনোয়ারার রায়পুর ইউনিয়নে ২.৭ কিলোমিটার আর জুঁইদন্ডি ইউনিয়নে ২.৪ কিলোমিটার বাঁধ নির্মিত হবে। বর্তমানে প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে।