আনোয়ারায় তিন নাবিক পরিবারে উৎকণ্ঠা

আনোয়ারা প্রতিনিধি | বৃহস্পতিবার , ১৪ মার্চ, ২০২৪ at ৮:১৭ পূর্বাহ্ণ

সোমালিয়ার দস্যুদের হাতে জিম্মি থাকা আনোয়ারার ৩ নাবিকের পরিবারের দিন কাটছে চরম উদ্বেগউৎকন্ঠায়। বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহর ২৩ নাবিকের মধ্যে আনোয়ারার ৩ নাবিক রয়েছে। জিম্মি দশার খবরের পর থেকে আনোয়ারার বৈরাগ ইউনিয়নের উত্তর বন্দরের বাসিন্দা গাজু মিয়ার ছেলে সাজ্জাদ হোসেন (৩০), মধ্য বন্দরের মৃত আয়ুব আলীর ছেলে শামসু উদ্দীন শিমুল (৩৫) ও বদল পুরা গ্রামের বদলপুরা গ্রামের আক্তার উদ্দীনের ছেলে আসিফুর রহমান (২৪) এর পরিবারে চলছে আহাজারি।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মো. সাজ্জাত হোসেন (৩০) এর মা শমসাদ বেগম দিনভর আহাজারি করছিলেন, আল্লাহ আমার ছেলেকে আমার কোলে ফিরিয়ে দাও, আল্লাহ তুমি রহমানুর রহিম, আমার ছেলে আমার কাছে ফেরত দাও, আল্লাহ আমারা বড় আশা করে আমার আত্মীয়ের মেয়েকে ছেলের বউ বানাবো বলে কাবিন করেছি। ওই মেয়ের উছিলায় হলেও আল্লাহ আমার ছেলেকে ফিরিয়ে দাও।

তাদের বাড়ি আনোয়ারা বৈরাগ ইউনিয়নের উত্তর বন্দর এলাকায়। পরিবারের পাঁচ ভাইয়ের মধ্যে সাজ্জাদ তৃতীয়। দীর্ঘ তিন মাস ছুটি শেষে গত ২৭ ফেব্রুয়ারি জাহাজে ফিরে যান তার আগের দিন ২৬ ফেব্রুয়ারি আত্মীয়ের এক মেয়ের সাথে সাজ্জাদের বাগদান হয়। ফিরে এসে জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজনে বিয়ের অনুষ্ঠান করার কথা ছিল। বিষয়টি জানান সাজ্জাদের ছোট ভাই মাকসুদ মিয়া।

বড় ভাই মোস্তাক মিয়া বলেন, মঙ্গলবার দুপুর দেড়টায় সাজ্জাদ ফোন করে জানায়, জলদস্যুরা আমাদের অস্ত্র নিয়ে জিম্মি করেছে। জানিনা কি হয়। আমার জন্য দোয়া করবেন। এরপর আর একবার কথা হয়। সর্বশেষ ছয় টা ৪৫ মিনিটে একটা ভয়েস মেইল দিয়ে জানায়, হয়তো আর কারো সাথে কথা হবে না, ওরা আমাদের মোবাইল নিয়ে নিচ্ছে। আমার জন্য দোয়া করবেন।

সাজ্জাদ হোসেনের পিতা গাজু মিয়া জানান, সারা জীবন দিনমজুর কাজ করে ৫ সন্তানকে শিক্ষিত করেছি। তাদের নিয়ে অনেক স্বপ্ন দেখি। মহান আল্লাহ যেন আমার ছেলেকে আমার বুকে ফেরত আনে। আমি সবার দোয়া এবং সরকারের সহযোগিতা কামনা করছি। জলদস্যুদের হাতে জিম্মির মধ্যে বন্দরের শামসু উদ্দীন শিমুল (৩৫) এর পরিবারে চলছে কান্নার রোল। তার স্ত্রী রীমা ও তিন কন্যা আর্তনাদ থামানোর কেউ নেই।

শিমুলের ভগ্নিপতি বদরুল হক জানায়, জলদস্যুরা জিম্মি করার পর দুপুর দুইটায় আমার শ্যালক শিমুল আমাকে ফোন করে ঘটনাটি বলেন। আপাতত ঘরে না জানার জন্য নিষেধ করলে পরবর্তীতে বিকেল ৪ টায় সে নিজেই স্ত্রী রিমা আক্তার কে ফোন করে জলদস্যু তাদের জিম্মি করেন বলে জানায়। এই খবরে তার স্ত্রীও পরিবারের মেয়েরা কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে। শিমুলের পরিবারে দুই ভাই দুই বোন ছাড়াও স্ত্রী ও তার তিন কন্যা সন্তান রয়েছে।

বদলপুরা গ্রামের আসিফুর রহমানের পিতা আক্তার উদ্দীন বলেন, মঙ্গলবার সন্ধ্যার আগে আসিফ আমাদের ফোন করে জানায় তাদের জাহাজটি দস্যুদের নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে। জলদস্যুরা তাদের জিম্মি করেছে। যে কোনো সময় তারা ফোন নিয়ে ফেলবে হয়তো আর কথা হবে না। আমার জন্য দোয়া করবেন। এই কথা বলে তিনি হাউমাউ করে কাঁদতে লাগলেন। আসিফের জন্য তার পুরো পরিবারের চলছে আহাজারি। তিনি আরো বলেন, আজ (বুধবার) আমরা অভিভাবকেরা সবাই কোম্পানির মালিকের কাছে গিয়েছি। তারা আশ্বাস দিয়েছে আমাদের সন্তানদের মুক্তির সব ব্যবস্থা করবেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকথা রাখতে পারেনি ওয়াসা
পরবর্তী নিবন্ধজিম্মির দিন ইফতারের সময় পরিবারের সাথে শেষ কথা হয় আতিকুল্লাহর