চট্টগ্রামের বহুল প্রত্যাশার আউটার রিং রোড প্রকল্পে আবারো সংশোধনী আনা হচ্ছে। চট্টগ্রামে বিনিয়োগকারীদের সুবিধার পাশাপাশি বিমানবন্দর সড়কে যান চলাচলের চাপ কমাতে আউটার রিং রোড প্রকল্প সংশোধনের এই উদ্যোগ নেয়া হয়। প্রায় ৪০ কোটি টাকা বাড়তি খরচ করে এক কিলোমিটার দীর্ঘ একটি রাস্তা নির্মাণের মাধ্যমে চট্টগ্রাম ইপিজেডকে বিশেষ এই সুবিধায় যুক্ত করা হচ্ছে। আগামী জুনের মধ্যে রাস্তাটি চালু করা হবে। গতকাল মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করা হয়েছে।
২ হাজার ৪২৬ কোটি ১৪ লাখ টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়নাধীন চট্টগ্রাম আউটার রিং রোড অনানুষ্ঠানিকভাবে চালু হয়েছে। প্রকল্পটির আওতায় পতেঙ্গা থেকে সাগরিকা বিভাগীয় স্টেডিয়াম পর্যন্ত ১৫.২ কিলোমিটারের চার লেনের একটি রাস্তা নির্মাণ করা হয়েছে। পতেঙ্গা থেকে রাসমনি ঘাট পর্যন্ত ১৫.২ কিলোমিটার আউটার রিং রোড এবং এর পরে পোর্ট টোল রোডের পাঁচ কিলোমিটার ব্যবহার করে পতেঙ্গা থেকে ফৌজদারহাটে ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কে পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে। চট্টগ্রাম ইপিজেডের সাথে এই রিং রোডের কোনো সংযোগ ছিল না। ইপিজেডের কোনো গাড়ি এই রোড ব্যবহার করতে হলে পতেঙ্গা ঘুরে রাস্তাটিতে উঠা নামা করতে হত। কিন্তু বিষয়টি বিমানবন্দর সড়কের এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজ করতে গিয়ে চট্টগ্রাম ইপিজেডের গাড়ি নিয়ে সিডিএ সংকটের মুখে পড়ে। চট্টগ্রাম ইপিজেডে দৈনিক প্রায় পাঁচ হাজার গাড়ি প্রবেশ করে। এর একটি বড় অংশ কাভার্ড ভ্যানসহ কন্টেনার মোভার। এই বিপুল সংখ্যক গাড়ি নগরীর বিমানবন্দর সড়ক ব্যবহার করে বন্দরে কিংবা ঢাকাসহ দেশের নানা স্থানে যাতায়াত করে। এর একটি বড় অংশেরই চট্টগ্রাম নগরের সাথে কোনো সম্পর্ক থাকে না। অথচ এসব গাড়ি নগর ট্রাফিকে মারাত্মক রকমের চাপ সৃষ্টি করে।
বিষয়টি নিয়ে চিন্তা করতে গিয়ে সিডিএর শীর্ষ কর্মকর্তারা অনুধাবন করেন, ইপিজেডের সাথে যদি আউটার রিং রোডের একটি সংযোগ ঘটানো যায় তাহলে বিপুল সংখ্যক গাড়ি রিং রোড ধরেই ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যাতায়ত করতে পারবে। যেসব গাড়ি আর বিমানবন্দর সড়ক কিংবা নগর ট্রাফিকে কোনো প্রভাব ফেলবে না। বিষয়টি নিয়ে প্রাথমিকভাবে পরিকল্পনা করা হয়। যাতে দেখা যায়, চট্টগ্রাম ইপিজেডের পেছনের দিকেই আউটার রিং রোড গেছে। দূরত্ব খুব বেশি নয়। কিন্তু রিং রোড থেকে ইপিজেড প্রায় ২৮ ফুট নিচু। এজন্য রিং রোড থেকে একটি সাব সড়ক করে ঢালু (স্লোপ) মিলিয়ে গাড়ি চলাচলের ব্যবস্থা করতে হবে। আর এজন্য দূরত্ব বেশি না হলেও প্রায় এক কিলোমিটার একটি সাব সড়ক নির্মাণ করে এই স্লোপ মিলাতে হবে।
চট্টগ্রাম ইপিজেডের পেছনের বাউন্ডারি ভেঙে তাতে আউটার রিং রোডের সাথে যোগাযোগের জন্য প্রবেশ এবং বাইরে যাওয়ার (এন্ট্রি এন্ড এঙিট) সিস্টেম তৈরি করতে হবে। এজন্য খরচ হবে প্রায় ৪০ কোটি টাকা। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের এই প্রস্তাবে গতকাল সায় দিয়েছে গৃহায়ণ ও গনপূর্ত মন্ত্রণালয়। গতকাল ঢাকায় অনুষ্ঠিত একটি বৈঠকে বিষয়টি চূড়ান্ত করা হয়েছে। এই রাস্তাটি নির্মাণের মাধ্যমে চট্টগ্রাম ইপিজেডকে আউটার রিং রোডের সাথে যুক্ত করা হলে বিপুল সংখ্যক গাড়ি ওই রাস্তা ধরে চলাচল করতে পারবে।
এই ব্যাপারে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চিফ ইঞ্জিনিয়ার কাজী হাসান বিন শামসের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের প্রেক্ষিতে আউটার রিং রোডের সাথে ইপিজেডকে সংযুক্ত করার বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, আমরা খুব শীঘ্রই এই কাজ শুরু করব। আগামী জুনের মধ্যে আউটার রিং রোড প্রকল্পের মেয়াদের মধ্যেই রাস্তাটি আমরা চালু করতে পারব। রাস্তাটি হলে শুধু ইপিজেডের গাড়ি চলাচলেই গতিশীলতা নয়, একই সাথে বিনিয়োগকারীরাও বিশেষ সুবিধা পাবেন। বিশ্বের নানা দেশ থেকে আসা বিনিয়োগকারীরা বিমানবন্দরে নেমেই মাত্র কয়েক মিনিটেই ইপিজেডে পৌঁছাতে পারবেন। এটি চট্টগ্রাম ইপিজেডকে একটি ভিন্ন মর্যাদা দেবে বলে মন্তব্য করে সিডিএর চিফ ইঞ্জিনিয়ার কাজী হাসান বিন শামস বলেন, আমরা খুবই দ্রুত প্রকল্পটির কাজ শেষ করতে চাই। আগামী ছয় মাসের মধ্যে রাস্তাটি চালু করে ইপিজেডকে সংযুক্ত করা সম্ভব হবে বলেও তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।