আঁদ্রে মালরো। বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে ভিনদেশী এক সহযোদ্ধা। ফ্রান্সের খ্যাতিমান ঔপন্যাসিক ও লেখক। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মানির বিরুদ্ধে ফ্রান্সের প্রতিরোধ যোদ্ধা হিসেবেও অংশ নেন। যতদিন জীবিত ছিলেন, সারা বিশ্বে যতো মুক্তি সংগ্রাম হয়েছে, সব সময় তিনি ন্যায়, স্বাধীনতা আর মুক্তির পক্ষে কথা বলেছেন। কম্বোডিয়ার যুদ্ধে তাঁর অবস্থান ছিল নিজ দেশের বিরুদ্ধে। আঁদ্রে মালরোর জন্ম ১৯০১ সালের ৩ নভেম্বর ফ্রান্সে। পড়াশোনা করেছেন নন্দনতত্ত্বে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় মালরো স্বেচ্ছাসেবী প্রাইভেট হিসেবে অংশ নেন। তাকে জার্মানরা বন্দী করে, কিন্তু তিনি পালিয়ে যান।
এরপর তিনি ফরাসি প্রতিরোধের একজন কর্নেল হিসেবে কাজ করেন এবং পুনরায় বন্দী হন। প্রথম জীবনে সাম্যবাদের সাথে জড়িত থাকলেও ১৯৪৫-১৯৪৬ সালে তিনি ফ্রান্সের রাষ্ট্রপতি শার্ল দ্য গোলের অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের তথ্যসচিব হন। ১৯৫৯ থেকে ১৯৬৯ সাল পর্যন্ত তিনি ফ্রান্সের সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রী ছিলেন।
এরপর তিনি অবসর জীবনে চলে যান এবং প্যারিসের এক শহরতলীতে বাস করা শুরু করেন। ১৯৭১ সালে মালরো একাই বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে ফ্রান্সে সাংস্কৃতিক আন্দোলন গড়ে তোলায় উদ্যোগী হন। ফ্রান্স সরকারকে উদ্দেশ্য করে তাঁর আকুতি ছিল: আমাকে একটি যুদ্ধ বিমান দাও, আমি বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য শেষ লড়াইটা করতে চাই।
তাঁর এই আন্দোলন বক্তৃতা, বিবৃতি আন্তর্জাতিক প্রেরণা হয়ে সেসময় বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধাদের অনুপ্রাণিত করেছিল। ১৯৭৩ সালের এপ্রিলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ব্যক্তিগত আমন্ত্রণে তিন দিনের সফরে সস্ত্রীক সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশে এসেছিলেন মালরো। সফরসঙ্গী ছিল ফরাসি টেলিভিশনের একটি দল। এই দলটি ‘বাংলাদেশ ইয়ার ওয়ান ফ্রম ডিসপেয়ার টু হোপ’ নামে একটি প্রামাণ্য চিত্র তৈরি করে।
পরবর্তী সময়ে বাংলায় ভাষান্তর করে এর নাম দেওয়া হয় ‘বাংলাদেশ : প্রত্যাশার পথে’। সেই সফরে মালরো চট্টগ্রামেও এসেছিলেন। চট্টগ্রামে অলিয়ঁস ফ্রঁসেজের উদ্যোগে সংবর্ধিত হয়েছিলেন তিনি। মালরোর রচনার মধ্যে উল্লেখযোগ্য: ‘লে কোঁকের’, ‘লা ভোঁয়া রইয়াল’, ‘লা কোঁদিসিও উমেন’, ‘লা তঁ দু মেপ্রি’, ‘সাইকোলজি দ্য লার’, তিন খণ্ডের ‘লা মেটামরফোজ দে দিও’, ‘লা ট্রায়াঙ্গল নোয়ার’ প্রভৃতি। ‘লা কোঁদিসিও উমেন’ উপন্যাসটির জন্য তিনি ফ্রান্সের মর্যাদাপূর্ণ প্রি গোঁকুর পুরস্কার অর্জন করেন। ১৯৭৬ সালের ২৩ নভেম্বর তিনি মৃত্যুবরণ করেন।