অন্যায়কারী এবং অন্যায় সহ্যকারী উভয়ই সমভাবে ঘৃণ্য। তারা স্রষ্টা এবং সৃষ্টির নিকট সমানভাবে অপছন্দের। মানুষ সামাজিক জীব। সৃষ্টিকর্তা মানুষকে এই পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন এবং সঙ্গে সঙ্গে আচরণবিধি ঠিক করে দিয়েছেন। এগুলোকে আমরা ধর্মীয় আইন বলি। এ অনুশাসনকে অনেকে মান্য করে না, তারা অন্যকে উৎপীড়ন করে, অন্যের অধিকারে অন্যায় হস্তক্ষেপ করে উচ্ছৃঙ্খল আচরণে সামাজিক শৃঙ্খলাকে উপেক্ষা করে সামাজিক স্বার্থবিরোধী অন্যায় ও অবৈধ কর্মতৎপরতায় লিপ্ত হয়। এরা সমাজের চোখে অন্যায়কারী ও আইনের চোখে অপরাধী বলে বিবোচিত হয়। এই অপরাধ বা অন্যায়ের বিরুদ্ধাচরণ যে করে না বরং শৈথিল্যের সঙ্গে তা মেনে নেয়, সূক্ষ্ম বিচারে সেও অপরাধী। কেননা অন্যায়ের বিচার বা প্রতিবিধান না হলে তার মাত্রা বেড়ে যায়। ফলে মানুষের পক্ষে সমাজে বসবাস করা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। এই অবস্থার জন্য অন্যায় সহ্যকারীর দায়িত্বকে অস্বীকার করার উপায় নেই। জোসেফ ম্যাটাসিনির বহুবিখ্যাত একটি উক্তি এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করা যেতে পারে Where ever you see corruption by your side and do not strive against it, you there by betray your duty. নিজের দায়িত্বকে অস্বীকার করার অর্থ সমাজের অপরাধ প্রবণতাকে বাড়িয়ে দেওয়া অবশ্য অপরাধীকে ক্ষমা করার মহৎ গুণের কথা এ প্রসঙ্গে উঠতে পারে, কিন্তু মনে রাখতে হবে ক্ষমারও নির্দিষ্ট মাত্রা ও সীমা থাকা দরকার। অন্যায় আচরণটি যদি একান্তই নির্দিষ্ট কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে সংঘটিত হয় তবে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ইচ্ছে করলে তা ক্ষমা করতে পারে। অন্যায় করে যদি কেউ অনবরত ক্ষমা পেতে থাকে, তবে দিন দিন তার অপরাধ প্রবণতা প্রবল হয়ে উঠবে। তার স্বেচ্ছাচারিতায় মাত্রা ও তেজ হয়ে উঠবে আকাশচুম্বী। দিনে দিনে বাড়বে তার শক্তি ও সাহস। শাসনযন্ত্রেও যে প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হবে এবং শেষ পর্যন্ত দুর্বিনীত অন্যায়কারী সবার কাছ থেকে ভীতিনত সমীহ পেতে ব্যস্ত হয়ে উঠবে। ফলে সমাজে বিশৃঙ্খল অবস্থা ও অস্থিরতা বিরাজ করবে।
অন্যায়কারী ও অন্যায়কে প্রশ্রয়দানকারী উভয়েই সমান অপরাধী। ক্ষমার দুর্বলতাকে সম্বল করে কেউ যেন অন্যায় কাজে প্রবৃত্ত হতে না পারে যে ব্যাপারে আমাদের সচেতন থাকতে হবে। অন্যায়কারী এবং অন্যায় সহ্যকারী উভয়কেই আমরা সমঘৃণার চোখে দেখব।











