করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে অনেকে এখন অনলাইনে বাজার করার দিকে ঝুঁকছেন, বিশেষ করে যাদের কম্পিউটার বা স্মার্টফোন ব্যবহারের সুযোগ আছে। কারণ অনলাইনে কেনাকাটায় ঘরের বাইরে বেরোনোর প্রয়োজন নেই, অপরিচিত মানুষের সাথে মেলামেশা বা ছোঁয়াছুঁয়ির আশঙ্কাও এড়ানো যায়। অতিমারির সঙ্গে অর্থনৈতিক মন্দার শঙ্কা ছিল শুরু থেকেই। অতিমারি ঠেকাতে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে সামাজিক সংযোগ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় স্থবির হয়ে পড়ে অর্থনীতি। কাজ হারায় অনেক মানুষ। অর্থনৈতিক দুরবস্থায় টিকতে না পেরে এই শহর ছাড়েন অনেকেই। এমন দুর্যোগেও আশা জাগিয়েছিল ইন্টারনেট। সোশ্যাল মিডিয়া পেজনির্ভর উদ্যোগের মাধ্যমে কেউ শুরু করেছেন নতুন জীবন। আবার কেউ কেউ স্থবির ব্যবসাকেও দিয়েছে গতি। স্থবির অর্থনীতিতেও বেড়েছে ই-কমার্স বাজারের আকার, অনলাইন লেনদেনও বেড়েছে আশাতীত। অনেক মানুষ অবশ্য অনলাইন বাজারে অনেকদিন থেকেই অভ্যস্ত। তাদের কাছে আমাজন, ইবে এগুলো অতি পরিচিত নাম। কিন্তু অনলাইনে কেনাকাটার শুরু কীভাবে? কীভাবে জনপ্রিয় হয়ে উঠল অনলাইনে কেনাকাটা? আমাজন অনলাইনে ব্যবসা শুরু করেছে ৯০এর দশকের মাঝামাঝি, কিন্তু আমেরিকায় এমনকী ২০১০-এও খুচরা ব্যবসার মাত্র ৬% কেনাকাটা হতো অনলাইনে। তবে, যুক্তরাষ্ট্রে গত বছর মে মাসে অনলাইনে যত মানুষ কেনাকাটা করতেন, এ বছর মে মাসে তা ৩১% বেড়ে গেছে। ২০০৬ সালে ইউকে-তে অনলাইনে বাজার করত ৩% মানুষ, ২০২০-র গোড়ায় তা দাঁড়ায় ১৯% আর করোনা মহামারির পর এবছর এপ্রিলে তা লাফিয়ে বেড়েছে ৩০ শতাংশে।
মানুষের ইন্টারনেট ব্যবহার বাড়ছে শুধু উন্নত বিশ্বেই নয় – ইন্টারনেট জনপ্রিয় ও সহজলভ্য হচ্ছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। ফলে ইন্টারনেটে বাজারের চাহিদাও বাড়ছে দ্রুত ও ব্যাপক মাত্রায়।
বিশ্লেষকরা বলছেন, যেসব দেশে অনলাইনে কেনাকাটার চল বেশি, সেসব দেশে ইন্টারনেটে খুচরা ব্যবসার মোট পরিমাণ ৪ ট্রিলিয়ন ডলারে পৌঁছতে যাচ্ছে বলে তাদের ধারণা। দুদশক আগেও অনলাইনে বাজার করা একটা নতুন চমকের ব্যাপার ছিল। এমনকী কোভিড-১৯ মানুষের মাঝে তার থাবা বসানোর আগেও মানুষ ইন্টারনেটে বাজার করত কালেভদ্রে।
একটা সময় লোকে ভাবত যেসব দুর্লভ জিনিস দোকানে সহজে মেলে না, শুধু ইবে-র মত সাইটেই সেসবের সন্ধান পাওয়া যায়, সেগুলো কিনতে হলে অনলাইন বাজারের শরণাপন্ন হতে হবে।
চলমান করোনার এই মহামারিতে অনলাইনে কেনাকাটার যেমন প্রয়োজনীয়তা বেড়েছে, তেমনি পাল্লা দিয়ে বেড়েছে প্রতারণার ফাঁদ। গত ৩১ মে দৈনিক আজাদীতে ‘অনলাইন কেনাকাটায় প্রতারণার ফাঁদ’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। এতে বলা হয়েছে,
হরহামেশাই শোনা যায় ফেসবুক কিংবা কোনো গ্রুপের পেজে যে পণ্য অর্ডার দেওয়া হয়েছিলো হঠাৎই আগাম অর্থ নিয়ে উধাও হয়ে গেছে। আবার অনেক সময় অনলাইনে যে মানের পণ্য অর্ডার দেওয়া হয়েছিলো তা হাতে পাওয়ার পর ক্রেতার চোখ একেবারেই চড়কগাছ! অনেক ক্রেতা অভিযোগ করছেন ওয়েবসাইটে প্রদর্শিত ছবির সঙ্গে পণ্যের মিল নেই। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যথাযথ তদারকি না থাকায় এমন প্রতারণার সুযোগ নিচ্ছে কিছু ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান। এ প্রসঙ্গে সিএমপির অতিরিক্ত উপ পুলিশ কমিশনার (মিডিয়া) আজাদীকে বলেন, সমস্যা হচ্ছে, এ ধরনের সমস্যায় পড়লে সচরাচর কেউ অভিযোগ করতে চান না। অভিযোগ করলে কিন্তু আমরা অ্যাকশনে যাচ্ছি, অপরাধীরাও ধরা পড়ছে। কিন্তু অভিযোগটা করতে হবেতো!
আসলে আসল পণ্যের মোড়কে নকল পণ্য সরবরাহ, কখনোবা পরিমাণে কম দেওয়া, আবার কখনো আগাম অর্থ নিয়ে উধাও হয়ে যাওয়া-এসব অসাধু চক্রের নিত্যনৈমিত্তিক কাজ। আর এর বিরূপ প্রভাব পড়ছে দেশের ই-কমার্সের ওপর। ফলে স্বস্তি ও আস্থার জায়গা হারিয়ে মুখ থুবড়ে পড়ছে অনলাইন মার্কেটিং। অসাধু চক্রের হাতে ই-কমার্স খাত জিম্মি হয়ে পড়ায় আস্থা হারাচ্ছে বহু সৎ উদ্যোক্তা ও সাধারণ মানুষ।
বিশেষজ্ঞদের মতে, হাজারও উদ্যোক্তার কর্মস্থল ও জনসাধারণের আস্থা ও স্বস্তির জায়গা অনলাইন মার্কেটিংয়ে প্রতারণা রোধ করে একে নিরাপদ রাখতে জনসচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি ভোক্তা অধিকার আইনের প্রচার-প্রচারণা বাড়াতে হবে। সাইবার জগতেও বাড়াতে হবে নজরদারি। পাশাপাশি ই-কমার্স খাতে প্রণয়ন করতে হবে নতুন নীতিমালা ও আইন এবং এর সুষ্ঠু প্রয়োগের মাধ্যমে নিশ্চিত করতে হবে এ খাতের নিরাপত্তা।