মোহাম্মদ খালেদ – বরেণ্য সাংবাদিক, বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ এবং বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক। এদেশের সংবাদপত্র ও সাংবাদিকতার জগতে তাঁর অবদান অসামান্য। বাংলাদেশের রাজনীতিতেও তিনি দায়িত্বশীল ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় সংসদের সম্মানিত সদস্য ছিলেন তিনি। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়ন কমিটির সদস্য হিসেবে কাজ করেছেন। ঐতিহ্যবাহী পত্রিকা দৈনিক আজাদীর সাথে যুক্ত ছিলেন প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই।
অধ্যাপক মোহাম্মদ খালেদের জন্ম ১৯২২ সালের ৬ জুলাই পাটনায়। তবে তাঁর পৈতৃক নিবাস চট্টগ্রাম জেলার রাউজান থানার সুলতানপুর গ্রামে। ১৯৪২ সালে চট্টগ্রাম কলেজ থেকে কৃতিত্বের সাথে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে কলকাতার ইসলামিয়া কলেজে স্নাতক শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছিলেন। কিন্তু হঠাৎ পিতার মৃত্যু হলে ফিরে আসেন চট্টগ্রামে এবং চট্টগ্রাম কলেজ থেকে স্নাতক সমাপ্ত করেন। ইসলামিয়া কলেজে পড়ার সময় তাঁর পরিচয় হয়েছিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে। পরবর্তী সময়ে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইসলামের ইতিহাসে এম.এ ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি। অধ্যাপক মোহাম্মদ খালেদের কর্মজীবন ও রাজনৈতিক জীবন – দুই-ই শুরু হয়েছিল ছাত্রাবস্থায়। বায়ান্নোর ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে চুয়ান্নোর যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ছেষট্টির ছয় দফা আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণ অভ্যুত্থান, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ সহ দেশের স্বাধীকার ও প্রগতিশীল বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামে প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত ছিলেন তিনি। আর কর্মজীবন ছিল বহুমুখী। ব্যবসা করেছেন, ব্যাংক কর্মকর্তা ছিলেন, শিক্ষকতার সঙ্গে যুক্ত থেকেছেন বেশ কিছুকাল, আর সাংবাদিকতা – এর সাথে তো জড়িয়ে ছিলেন নিবিড়ভাবে।
১৯৬২ সাল থেকে আমৃত্যু চট্টগ্রামের প্রাচীন দৈনিক পত্রিকা ‘দৈনিক আজাদী’র সম্পাদক ছিলেন তিনি। ১৯৭১ সালে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র এবং বৈদেশিক প্রচার দপ্তরে কাজ করেন। সকল ক্ষেত্রে সদাই তিনি ছিলেন সৎ, নীতিনিষ্ঠ। ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক জীবনেও এর ব্যত্যয় ঘটে নি। মানবিক মূল্যবোধসম্পন্ন বিবেক আর মানব কল্যাণমুখী চেতনায় চালিত হয়েছেন আজীবন। সাংবাদিক হিসেবে তাঁর লেখনী সর্বদাই সত্য আর ন্যায়ের পক্ষে ছিল সোচ্চার। শুভ্র জীবনাদর্শ, নির্লোভ দৃঢ়চিত্ত আর ঋজু ব্যক্তিত্বের গুণে নিজেই তিনি একটি প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছিলেন। ২০০৩ সালের ২১ ডিসেম্বর অধ্যাপক মোহাম্মদ খালেদ প্রয়াত হন।