অদ্ভুত প্রাণী এলিয়েন

অপু চৌধুরী | বুধবার , ১৮ জুন, ২০২৫ at ১২:০২ অপরাহ্ণ

আমরা এসেছি তোমাদের পাশের সোলার সিস্টেমের একটি নির্দিষ্ট গ্রহ থেকে যা এখান থেকে প্রায় একশত আলোকবর্ষ দূরে। জানতে পেরেছি, তোমরা আমাদের এই অবস্থানগুলোকে “হাইসিয়ান এক্সোপ্লানেট” বলো। দৈবাৎ আমাদের গ্রহের অদ্ভুত রকমের ক্ষয়ে যাওয়া দেখে প্রাণ বাঁচানোর তাগিদ থেকে তোমাদের কাছে আসা। আমাদেরকে রক্ষা করো! –কথাগুলো বলছিলেন অদ্ভুত রকমের ভিন্ন ভিন্ন দেহাবয়ব বিশিষ্ট দুই দুটো প্রাণী। অর্ণব আর অনন্যা তাদের দেখে ভীষণ ভয় পেয়ে গেলেও প্রাণীগুলোর মুখে অন্যকোনো সৌরজগত ও গ্রহের কথা শোনায় কৌতুহলী হয়ে পড়ে। তাদেরকে বাড়ির সারভেন্ট রুমে বসার ও থাকার ব্যবস্থাও করে দেয় তারা।

মাথা, ঘাড়, ধরে অবিভক্ত দেহ বিশিষ্ট এবং নানা স্থিতিস্থাপক অঙ্গ উপাঙ্গে গঠিত এই অতি চটপটে প্রাণীগুলোর শরীরের আশেপাশে কেবল হাইড্রোজেন গ্যাসের গন্ধ উড়ছিল। এদের দেহের অগ্রভাগে এমন কিছু উপাঙ্গ রয়েছে যা দিয়ে তারা প্রকৃতি থেকে বেঁচে থাকার উপকরণ যেমন গ্রহণ করতে পারে তেমনি কয়েক আলোকবর্ষ দূর থেকে কোনোকিছু দেখার বা অনুভূতি গ্রহণ করার ক্ষমতাও তারা রাখে বলে জানা যায়। প্রকট তাদের অনুভূতি শক্তি আর স্মৃতি শক্তি।

অর্ণবঅনন্যা কিছু বুঝে ওঠার আগে এরা প্রশ্ন ছুঁড়ে দেয়,

তোমরা কি আমাদেরকে ভয় পাচ্ছ?

হ্যাঁ, তোমাদের অনুরূপ দেহাকৃতি বিশিষ্ট কোনো মানুষ বা প্রাণী আমাদের এই গ্রহে নেই তাই তোমাদের দেখে ভয় পাচ্ছি, তবে….তোমরা যে অনেক দূর অর্থাৎ ভিন্ন কোন্‌ জায়গা থেকে যেন এসেছ বললে, তা জানার কৌতুহল থেকে ভয়টা কেটে গেল।

ও আচ্ছা, তাই? তাহলে শোন।

আমরা এসেছি তোমাদের এই সৌরজগতের বাইরের কোনো এক গ্রহ থেকে। আমাদের সেই গ্রহের আলাদা এক সূর্য বা নক্ষত্র রয়েছে। আমাদের গ্রহের নিকটে প্রায় ১০০ কোটি কি.মি দূরে অবস্থান করছিল তোমাদের এই সৌরজগতের বামন গ্রহ প্লুটো। আমাদের নিজস্ব যান্ত্রিক হিসেব মতে প্রতি সেকেন্ডে ২৫০০০ কি.মি এরও বেশি গতিবেগে উড়াল দিয়েও তোমাদের এখানে পৌঁছাতে আমাদের পাঁচ দিনেরও বেশি সময় লেগে গেছে। ইতিমধ্যে আমরা খুব ক্লান্ত হয়ে পড়েছি, ভ্রমণে ব্যবহারের জন্য নিয়ে আসা সঞ্চিত সকল শক্তিও প্রায় শেষের দিকে। যতটুকু পথ পাড়ি দিয়ে এসেছি তার কোথাও এমন কোনো সুযোগ কিংবা ব্যবস্থা ছিল না যে যেখান থেকে প্রয়োজনীয় কিছু নিতে পেরেছি। সুতরাং আমরা এখানে খুব অসহায়, আমাদেরকে সহায়তা করো।

ঠিক আছে, তোমরা কী খেতে চাও বলো। আর এমন কী সব জিনিস তোমাদের পছন্দের এবং প্রয়োজন, বলতে পারো। তা যদি আমাদের কাছাকাছি থেকে থাকে আমরা চেষ্টা করব ব্যবস্থা করে দিতে।

ঠিক আছে, শক্তি সংগ্রহের উৎস হিসাবে যা কিছু গ্রহণ করা যায় তা নিয়ে আসো।

অর্ণব আর অনন্যা তাদের খাদ্য অভ্যাস নিয়ে তেমন কিছু না জানলেও দেরি না করে বিভিন্ন রকমের ফলমূল সহ ভাত মাংসের ব্যবস্থা করে দিল। সাথে আরো আনলো বিভিন্ন রকমের বাদাম, বীজ, অভ্যাকাডো, মাছ, রোজমেরি, হলুদ ও গ্লুকোজ জাতীয় খাবার।

খাবারের আইটেম দেখে অদ্ভুত প্রাণী দ্বয় অর্ণবঅনন্যাকে ধন্যবাদ জানাতে ভুল করেনি এবং সাথে সাথে মুখে তুলে নিতে থাকে বাদাম, বীজ, অ্যাভাকাডো, মাছ, রোজমেরি, হলুদ ও গ্লুকোজ ইত্যাদি।

ভাতমাংসে অপেক্ষাকৃত কম আগ্রহ দেখে অনন্যা তাদের জিজ্ঞেস করলে তারা উত্তর দেয়,

এ মুহূর্তে আমাদের ব্রেইনের শক্তি আগে বাড়াতে হবে আর তাই তোমার দেওয়া যে খাবারে ব্রেইন উৎকর্ষের উপাদান অর্থাৎ ফ্যাটি অ্যাসিড বেশি তাই আগে নিচ্ছি। বাকী খাবারও নিব তবে আরো পরে,

এবং নিতেই হবে নয়তো আমাদের পরিপাক তন্ত্রের ৫০০ ট্রিলিয়ন অণুজীব (যা তোমাদের পাঁচ গুণ) নিষ্‌ক্িরয় হয়ে পড়বে অসাড় হয়ে পড়বে আমাদের পুরো শরীর।

আচ্ছা ঠিক আছে, আপনারা আপনাদের ইচ্ছে মতো খাবার গ্রহণ করুন আর যদি কোনো সমাস্যা বোধ না করেন তবে খেতে খেতে বলে যেতে পারেন আপনাদের এতদূর পাড়ি দিয়ে আসার দুঃসাহসিক অভিযানের গল্প।

হ্যাঁ, তা হতে পারে। শোনো তাহলে সেদিন আমরা দু’জন অনিবার্য কারণে স্বনিয়ন্ত্রিত যানে করে প্লুটোর দিকে প্রায় পুরোটা পথ পেরিয়ে এসেছি। আমরা স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছিলাম, খোলা আকাশে দ্রুত গতির অনিয়ত আকৃতির বৃহদাকার গ্রহ সাদৃশ্য অন্য আরেকটি জ্বলন্ত পিণ্ড সজোরে আঘাত করছে আমাদের সেই আজন্ম পরিচিত প্রিয় গ্রহটিকে। চোখের পলকে ঘটে চলছে নানা অদ্ভুত সব ঘটনা দূর্ঘটনা। খণ্ড খণ্ড আগুনে পুরো মহাবিশ্ব যেন জ্বলে উঠেছে ক্ষণিকের জন্য। আমরা দূর থেকে লক্ষ্য করছিলাম আমাদের প্রিয় আবাস ভূমি আমাদের প্রিয় গ্রহ চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে পরবর্তীতে একটা নির্দিষ্ট দিকে ধাবিত হচ্ছিল এবং এক পর্যায়ে সেই স্থানেই নিশ্চিহ্ন হয়ে যাচ্ছিল। অগণিত গ্রহবাসীর কী অবস্থা হলো কেউ জানিনা। আমরাও সেপথ ধরে অনুভব করছিলাম কোনো এক অদৃশ্য শক্তির টান। যে টান হয়তো আমাদেরকেও নিয়ে যেত প্রবল শক্তিশালী মৃত্যু কূপের অজানা রহস্যের দিকে, যেটাকে তোমরা কৃষ্ণ বিবর বলো। এই ভয়ঙ্কর বিপদ অনুভব করতে পেরে ঠিক তখনই আমাদের উড়ন্ত যানের দিক পরিবর্তন হয়ে যেতে থাকে, গতিও বেড়ে যায় স্বয়ংক্রিয় ভাবে কারণ আমাদের এই বাহনে বিভিন্ন দুর্ঘটনা যেমন কারো আক্রমণ এবং অগ্নি সংবেদনশীল সেন্সর লাগানো ছিল বিধায় সংকেত এসে পড়েছিল মুহূর্তেই। আর তখনই মনে হলো আমরা তোমাদের এই সূর্য নামের নাক্ষত্রিক গ্যালাক্সিতে প্রবেশ করে ফেলেছি। টানা পাঁচ দিন শূন্য মণ্ডল পাড়ি দিয়ে অনিবার্য মৃত্যুর মুখে থেকেই আজ খোঁজ পেলাম তোমাদের এই পৃথিবী নামক গ্রহটির। আমরা জানিনা এখন কি করবো কোথায় যাবো।

অর্ণবঅনন্যা তাদের কথা শুনে বুঝতে পারে, এই অদ্ভুত প্রাণীই তাদের পঠিত আধুনিক বিজ্ঞানের ভিন্ন গ্রহের শক্তিশালী প্রাণী এলিয়েন ছাড়া আর কিছু নয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবিচার ও ক্ষতিপূরণের দাবিতে চট্টগ্রাম নাগরিক ফোরামের স্মারকলিপি
পরবর্তী নিবন্ধখোকার জেদ