রাউজান কলেজের সাবেক উপাধ্যক্ষ, কবি, প্রাবন্ধিক, ছড়াশিল্পী এবং চট্টগ্রাম একাডেমির জীবন সদস্য আনন্দ মোহন রক্ষিত। তিনি সত্তর দশকের একজন আলোচিত কবি। তাঁর কবিতায় আছে দেশপ্রেম, মুক্তিযুদ্ধ, বাঙালির বীরত্বগাথা, পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ আর ঘৃণা। তিনি একজন গুণী লেখক। তাঁর পাঁচটি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে; সেগুলো হলো– ঢালো বিষ ঢালো অমৃত (১৯৯৭), তুমিও ফেরালে চোখ (২০০১), মানুষের দ্রোহ মানুষ (২০০৬), অনুরাগে ভেজা চোখ (২০০৯), চেরাগির অপূর্ব আলোয় (২০২০)। এছাড়াও শোণিত গালিচা পাতা জনপদ (১৯৭৪) এবং নবান্ন (২০১২) তাঁর সম্পাদনায় প্রকাশিত হয়। কবি আনন্দমোহন রক্ষিত লেখালেখির স্বীকৃতিস্বরূপ বেশ কিছু সম্মাননাও পেয়েছেন। তিনি বাংলা একাডেমি, চট্টগ্রাম একাডেমিসহ বিভিন্ন সাহিত্য–সংস্কৃতি, সামাজিক ও সেবামূলক সংগঠনের সঙ্গে তিনি জড়িত ছিলেন।’ (সূত্র: শিশুসাহিত্যিক রাশেদ রউফ এর লেখক সারথি)
দাদার সাথে আমার পরিচয় চট্টগ্রাম একাডেমিতে। যেদিন আমি বই বন্ধু সম্মাননা পেলাম সেদিন উনিও ছিলেন। আমাকে নিজ থেকে জিজ্ঞেস করলেন, “আপনি কি জোনাকী দি? রীতা দিদির কাছে আপনার কথা শুনেছি। দৈনিক আজাদী পত্রিকায় লেখাও দেখি। আপনার বই প্রকাশিত হয়েছে। আমি রীতা দিদির সাথে একই বিল্ডিং এ থাকি। বাসায় আসবেন। আপনার বাসা কোথায়? আমার ‘চেরাগির অপূর্ব আলোয়’ বইটি বাতিঘরে পাবেন।’’
আমি উনার সব কথার উত্তর দিলাম। কত সহজ সরল আর হাসিমুখে অচেনাকে আপন করে নিতে পারেন তিনি! এরপর একাডেমিতে বইমেলায় আমার স্বামীর সাথে পরিচয় হলো। সেদিন তিনি সিঁড়ি দিয়ে নিচে নেমে আবার উঠে এলেন। বললেন, দিদি আপনার বই নিতে ভুলে গেছি। তারপর আমার ‘বাংলার খোকা থেকে বঙ্গবন্ধু‘ বইটি হাসিমুখে নিলেন।
আবার একাডেমির আরেকটি অনুষ্ঠানে এসে আন্তরিকভাবে আমাকে এবং আমার স্বামীকে উনার বাসায় নিয়ে গেলেন। উনার স্ত্রী লাকী দি আমাদের সাথে আলাপ করলেন। উনারা ঘুরে ঘুরে সব কিছু দেখাচ্ছেন। ছেলে মেয়ে নাতি নাতনির ছবি। আমার স্বামী আর লাকী দি গান করলেন। বললেন উনার গলার চিকিৎসা হিসেবে উনি গান শিখছেন। আমাদের আপ্যায়ন করলেন। আনন্দ দাদাকে বললাম উনার বইটি বাতিঘরে পাই নি। উনি আমাকে বইটি উপহার দিলেন। তারপর বললেন, রাশেদ রউফ আমাকে লেখা পাঠাতে বলেছে। বলেই উনি লিখতে বসলেন। লাকী দি বলেছিল দাদাকে নিয়ে আমাদের বাসায় আসবে। আর আসা হলো না।
গত ২রা সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম একাডেমিতে অধ্যক্ষ তরুণ কান্তি বড়ুয়ার বই এর প্রকাশনা উৎসব ও সুহৃদ সম্মাননা অনুষ্ঠানে যখন গেলাম আমি উনার পাশে বসেছিলাম। উনি হাসিমুখে বললেন কেমন আছেন? ভানুদা কেমন আছে? তারপর পাঁচ মাস সুইডেনে ছেলের সাথে কাটানো দিনগুলোর কথা বললেন। তিনি অসুস্থ থাকা সত্ত্বেও এসেছেন। রাশেদ রউফ দাদা ঐ অনুষ্ঠানে বলেছিলেন আনন্দ মোহন রক্ষিত দাদার ৭৫ তম জন্মদিন পালন করবেন। শুনে তিনি খুশিই হয়েছিলেন।
ঠিক তার চারদিন পর ৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩ তারিখে ৭৪ বছর বয়সে আনন্দ মোহন রক্ষিত দাদা সবার অজান্তে সবকিছু ছেড়ে চিরতরে চলে গেলেন। ১১ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম একাডেমিতে তাঁর শোক সভা অনুষ্ঠিত হয়। তিনি একজন মানবিক, হাসিখুশি, মিশুকে স্বভাবের মানুষ ছিলেন। তাঁর প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানাই। আমি দাদার আত্মার শান্তি কামনা করছি এবং পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করছি। আনন্দ দাদা আনন্দ লোকে সদা আনন্দে বিরাজ করুন এই প্রার্থনা করি।












