নিরাপদ যাত্রী পরিবহনের জন্য রেলওয়েতে গেটকিপার, পয়েন্টসম্যান, পোর্টার, ওয়েম্যান, টিএঙআর খালাসিদের গুরুত্ব সবচেয়ে বেশি। এদের পাশাপাশি ওয়ার্কশপ খালাসি, লোকো খালাসি, অফিস সহকারীসহ বিভিন্ন অপারেশনাল কাজের দায়িত্ব পালনকারী কর্মীদের গুরুত্বও কম নয়। গুরুত্বপূর্ণ এসব পদে বর্তমানে টিআরএল (টেম্পোরারি লেবার রিক্রুট) বা অস্থায়ী কর্মী রয়েছে প্রায় ৫ হাজারের মতো। টিএলআর বা অস্থায়ী কর্মী হিসেবে নিয়োগ হলেও তাদের দায়িত্বটা অনেক বেশি।
গুরুত্বপূর্ণ এসব পদে তারা ৫ থেকে ১৫ বছর ধরে বিভিন্ন শাখায় দায়িত্ব পালন করে আসলেও তারা সাধারণত ‘নো ওয়ার্ক, নো পে’ ভিত্তিতে কাজ করে থাকেন। গত ৪-৫ মাস ধরে বেতন পাচ্ছেন না তারা। নিজস্ব তহবিল থেকে বেতন দেওয়ার সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে রেলওয়ে। টিআরএল (টেম্পোরারি লেবার রিক্রুট) বা অস্থায়ী কর্মী নিয়োগ থেকে সরে এসেছে রেলওয়ে। আগামী ডিসেম্বরের পর থেকে চাকরি থাকছে না তাদের। এখন এসব পদে ‘আউটসোর্সিং’-এর মাধ্যমে অস্থায়ী লোক নিয়োগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রেল কর্তৃপক্ষ।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এমনিতেই রেলের অভিজ্ঞ লোকবল সংকটে রয়েছে। এর মধ্যে হঠাৎ করে বিপুলসংখ্যক অভিজ্ঞ কর্মীদের বাদ দেওয়া হলে অভিজ্ঞ লোকবলের সংকট আরও ভয়াবহ রূপ নেবে। রেলওয়ের এক শীর্ষ কর্মকর্তা আজাদীকে জানান, আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে শূন্যপদে লোক নিয়োগের বিষয়টি রেলওয়ের নয়, সরকারের। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে এ নিয়ে পরিপত্রও জারি করা হয়েছে। রেলওয়ে কেবল সরকারের নির্দেশনা অনুসরণ করছে। আউটসোর্সিং প্রক্রিয়ায় সেবা গ্রহণ নীতিমালা-২০১৮ প্রণয়ন করে সরকার। এতে সেবাগ্রহণকারী ও সেবা ক্রয়কারীর বিষয়ে বিস্তারিত রূপরেখা দেওয়া হয়। ২০১৯ সালের ১০ জুন অর্থ মন্ত্রণালয় এক পরিপত্রে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে সেবা আদান-প্রদানে অর্থমূল্য নির্ধারণ করে দেয়। এর পর থেকে সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে লোক নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু হয়। রেলেও একই প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হচ্ছে।
রেলওয়ের তথ্য মতে, সর্বশেষ রেলে ২০২১-২২ অর্থবছরে ৪ হাজার ৮৯৬ জন অস্থায়ী শ্রমিক কাজ করেন। গত জুলাইয়ে ১০০ জন অস্থায়ী শ্রমিকের চাকরি চলে গেছে। অবশিষ্ট লোক এখনও কাজ করছেন। এ খাতে রেলকে ৬০ কোটি টাকা খরচ করতে হয়। গত জুলাই থেকে কোনো বাজেট বরাদ্দ কিংবা চাকরির মঞ্জুরি হয়নি। এ কারণে বেতন পাচ্ছেন না এসব শ্রমিকরা। তারা পরিবার নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। তারপরও ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক রাখতে কাজ করে যাচ্ছেন তারা। এ ব্যাপারে বেশ কয়েকজন গেটকিপার, পয়েন্টসম্যান ও খালাসির সাথে কথা হলে তাদের মধ্যে সাইফুল ও দেলোয়ার ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমরা ঝড়-বৃষ্টি কিংবা তীব্র শীত উপেক্ষা করে ট্রেন চলাচল ঠিক রাখতে রেল লাইনে পাহারায় থাকতে হয়। অথচ করা ক্যাটাগরি-ভেদে আমাদের বেতন ১৫ হাজার টাকা, ১৫ হাজার ৫০০ টাকা এবং ১৭ হাজার ২৫০ টাকা। এই টাকাও আমরা ঠিক মতো পায় না। গত ৫ মাস ধরে আমরা বেতন পাচ্ছি না। তার মধ্যে ডিসেম্বর থেকে নাকি আমাদের চাকরি থাকবে না। এখন চোখে মুখে অন্ধকার দেখছি। রেলওয়ে অস্থায়ী (টিএলআর) শ্রমিক পরিষদের আহ্বায়ক দেলোয়ার হোসেন বলেন, দক্ষ শ্রমিকদের ছাঁটাই করা হলে স্টেশন এবং বিভিন্ন লেভেল ক্রসিং লোকবল সংকটে বন্ধ হয়ে যাবে। পাশাপাশি ট্রেন অপারেশনাল কাজেও ব্যাঘাত ঘটবে। ট্রেন দুর্ঘটনাও বাড়বে। তাই আমরা রাজপথে আন্দোলনে নামতে বাধ্য হয়েছি।












