একজন কাউন্সিলরও যদি না চায় নেতৃত্বে থাকব না : শেখ হাসিনা

বাংলাদেশের অর্থনীতি বেশ শক্ত অবস্থানে রয়েছে ।। আমি চাই সব দল নির্বাচনে আসুক, না এলে সরকার কিছু চাপিয়ে দিতে পারে না

| শুক্রবার , ৭ অক্টোবর, ২০২২ at ৭:৪৯ পূর্বাহ্ণ

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আওয়ামী লীগের আগামী সম্মেলনে একজন কাউন্সিলরও যদি তাকে দলের নেতৃত্বে দেখতে না চান, তাহলে তিনি বিদায় নিতে প্রস্তুত আছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে গণভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে একজন সাংবাদিকের প্রশ্নের উত্তরে এ কথা বলেন শেখ হাসিনা। যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রে ১৮ দিনের সফরের অভিজ্ঞতা জানাতে এই সংবাদ সম্মেলন করেন প্রধানমন্ত্রী। খবর বাসস ও বিডিনিউজের।
গত দুটি সম্মেলনের আগে আওয়ামী লীগ সভাপতি নিজেই তার বয়সের কথা তুলে ধরে বলেছিলেন, নতুন নেতৃত্বের হাতে দায়িত্ব বুঝিয়ে দিতে পারলে তিনি খুশি হবেন। সে বিষয়টি মনে করিয়ে দিয়ে ওই সাংবাদিক প্রশ্ন করেছিলেন, এবার কোনো চমক সম্মেলনে থাকবেন কি না, শেখ হাসিনা কোনো নতুন নেতৃত্বকে সামনে নিয়ে আসবেন কি না। উত্তরে শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগের একটি কাউন্সিলর যদি বলে যে, আমাকে চায় না, আমি কোনদিনই থাকব না। যেদিন থেকে আমাকে আওয়ামী লীগের প্রেসিডেন্ট করেছিল, সেদিন থেকেই এই শর্তটা মেনে যাচ্ছি।
শেখ হাসিনা বলেন, এটা ঠিক, দীর্ঘদিন হয়ে গেছে। অবশ্যই আমি চাই নতুন নেতৃত্ব আসুক। নেতৃত্ব কাউন্সিলররা নির্বাচন করেন এবং কাউন্সিলরদের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আমার তো আসলে সময় হয়ে গেছে। আমার যেটা লক্ষ্য ছিল, জাতির পিতা বাংলাদেশ স্বাধীন করে একটা যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে আর্থ সামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে অগ্রগতি করে স্বল্পোন্নত দেশের মর্যাদা অর্জন করে দিয়ে যান। জাতিসংঘই স্বল্পোন্নত দেশের স্বীকৃতি দিয়েছিল। এরপর দেশে হত্যা-ষড়যন্ত্রের রাজনীতি চলেছে জানিয়ে তিনি বলেন, ক্ষমতা ছিল বন্দিখানায়। গণতন্ত্র ছিল না, তার পরিবর্তে ছিল মার্শাল ল বা মিলিটারি শাসক। এবং সেখানে কার্ফু গণতন্ত্র ইত্যাদি ইত্যাদি ছিল। অনেক চড়াই-উৎরাই পার করে আমরা গণতন্ত্র উদ্ধার করি।
বাংলাদেশের অর্থনীতি প্রসঙ্গ : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশবাসীকে আশ্বস্ত করে বলেছেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি বেশ শক্তিশালী অবস্থানে থাকায় উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। তিনি বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদী দিক বিবেচনা করে, কোনো ঝুঁকির মধ্যে নেই। আমি আপনাদের সকলকে নিশ্চিত করতে পারি যে উদ্বেগের কিছু নেই। সরকার সব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে অর্থনীতিকে প্রাণবন্ত করতে সর্বশক্তি নিয়োগ করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, জনগণের যে কোনো ধরনের দুর্ভোগ কমাতে তারা বিষয়টিতে মনোযোগ দিয়েছেন। তিনি বলেন, চিন্তার কোনো বিষয় নেই। আমরা সবাই যদি মনে করি এটা আমাদের দেশ এবং আমাদের সবাইকে একসঙ্গে দেশকে এগিয়ে নিতে হবে। তিনি বলেন, যেকোন ক্ষেত্রেই বাংলাদেশের কোন রিস্ক নেই, এটুকু আমি কথা দিতে পারি।
নির্বাচন প্রসঙ্গ : আগামী নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণ চাইলেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, কেউ না এলে সরকার কিছু চাপিয়ে দিতে পারে না। সরকারপ্রধান বলেন, রাজনীতি করতে হলে দলগুলো নিজেরা সিদ্ধান্ত নেবে। হ্যাঁ, আমি অবশ্যই চাই সব দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করুক। কারণ এতদিন কাজ করার পর নিশ্চয় আমরা চাইব, সবাই নির্বাচনে আসুক। গত নির্বাচনের আগে বিএনপি ও সমমনাদের পাশাপাশি সব দলের সঙ্গে সংলাপের আয়োজন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। এবারও সেরকম চায়ের দাওয়াত দেওয়ার কোনো পরিকল্পনা আছে কি না, সেই প্রশ্ন একজন সাংবাদিক রেখেছিলেন। করোনাভাইরাসের বিষয়ে সতর্কতার কারণে এবার একটু চিন্তা করতেই হবে মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, এই নির্বাচনে দেশের যতটুকু উন্নতি, যতটুকু সংস্কার, সেটা কিন্তু আওয়ামী লীগ এবং মহাজোট করে সবাইকে নিয়েই আমরা করে দিয়েছি। তারপরেও যদি কেউ না আসে, সেখানে আমাকে কী করণীয়? একেবারে সবাইকে লোকমা তুলে খাওয়ায় দিতে হবে, জিতিয়ে দিতে হবে, তবেই আসব- এটা তো হতে পারে না।
জাতিসংঘ অধিবেশন প্রসঙ্গ : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেছেন, এবারের জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে গুরুত্বপূর্ণ সকল সভায় সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ বহুপাক্ষিক ফোরামে বাংলাদেশের অবস্থান যেমন আরও সুদৃঢ় করেছে, তেমনি বাংলাদেশের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়সমূহে আন্তর্জাতিক সহযোগিতার ক্ষেত্রকে আরও বিস্তৃত করবে। তিনি বলেন, সামগ্রিক বিবেচনায় এবারের অধিবেশনে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ অত্যন্ত সফল বলে আমি মনে করি।
শেখ হাসিনা জানান, ২৩ সেপ্টেম্বর তিনি জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সাধারণ বিতর্ক পর্বে প্রতিবারের মত এবারও বাংলায় বক্তব্য রাখেন। প্রধানমন্ত্রী করোনা মহামারি এবং রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাতের ফলে সৃষ্ট খাদ্য ও জ্বালানি সঙ্কট ও অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা থেকে মুক্তির জন্য অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে অধিক পারস্পরিক সংহতি প্রদর্শন করার প্রতি গুরুত্বারোপ করেন। এ সকল সঙ্কটের কারণে বাংলাদেশসহ উন্নয়নশীল দেশসমূহ বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
খাদ্য নিরাপত্তায় জোর : বিশ্ব আগামী বছর দুর্ভিক্ষের মত খারাপ পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে পারে বলে সতর্ক করে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতের পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, যার যেখানে যতটুকু জমি আছে, অথবা জলাধার আছে, সেখানে যেন কিছু না কিছু উৎপাদন করে। কারণ এটা বিশ্বব্যাপী একটা আশঙ্কা আগামী বছরটা মহা-সংকটের বছর হবে। সবচেয়ে বড় কথা খাদ্য সংকটের বিষয়টা বেশি বিবেচনা করা দরকার। এক ইঞ্চি জমি যেন অনাবাধি না থাকে। আমরা সেদিক লক্ষ্য রেখেই বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিচ্ছি। দেশবাসীকে সাশ্রয়ী হওয়ার পরামর্শ দিয়ে সরকার প্রধান বলেন, প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে সবাইকে সাশ্রয়ী হওয়ার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি। বিদ্যুৎ ব্যবহার, পানি ব্যবহার, খাদ্য ব্যবহার প্রত্যেকটা ব্যবহারের ক্ষেত্রে সবাই যেন সীমিত হয়, সাশ্রয়ী হয়। কারণ আগামী সংকটটা যেন আগামীতে সেভাবে না দেখা দেয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধআউটসোর্সিংয়ে অস্থায়ী কর্মী নিয়োগ হবে রেলে
পরবর্তী নিবন্ধসাবরাং-সেন্টমার্টিন নৌপথে পর্যটকবাহী জাহাজ চালাতে চায় স্কোয়াব ও টুয়াক